চট্টবাণী: চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) বিভিন্ন থানা থেকে শত শত অস্ত্র ও হাজার গুলি লুট হয়েছে। লুট হওয়া অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে শটগান, পিস্তল ও রাইফেল।
প্রাথমিকভাবে পুলিশ ধারণা করছে প্রায় ৫০০ অস্ত্র ও ১২ হাজারের বেশি গুলি লুট হয়েছে। আগুনে থানায় থাকা কাগজপত্র পুড়ে যাওয়ায় সঠিক পরিসংখ্যান জানতে পারেনি পুলিশ।
মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) পর্যন্ত লুট হওয়া এসব অস্ত্রের মধ্যে ৩৫টি অস্ত্র ও ২৭৫টি গুলি উদ্ধার করেছে র্যাব-৭। বাকি অস্ত্রগুলো উদ্ধার না হওয়ায় অপরাধীরা ছিনতাই, খুনসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহারের শঙ্কা রয়েছে।
এদিকে নগরের কোতোয়ালী,পাহাড়তলী, পতেঙ্গা, ইপিজেড ও ডবলমুরিং থানায় পিকআপ, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেলে আগুনে পুড়ে গেছে। এছাড়াও কোতোয়ালী থানায় আগুনে ভস্মীভূত সাঁজোয়া যানের পাশে পুড়ে সাদা হয়ে যায়। কোতোয়ালী থানা ভবনের নিচতলায় অভ্যর্থনাকক্ষ (ডিউটি অফিসারের কক্ষ)। সেটি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আরেক পাশে ওসির কক্ষটির কাচ ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। থানা ভবনের দোতলায় উঠতেই এসআই ও এএসআইদের বসার কক্ষ। পুরো কক্ষ পরিণত হয়েছে ধবংসস্তূপে। তৃতীয় তলায় থাকেন এসআই ও পুলিশের সদস্যরা। সেখানে তাঁদের জিনিসপত্র ও খাট ভেঙে চুরমার করা হয়। প্রাথমিকভাবে কোতোয়ালী থানার অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণ করা হয়েছে দেড় কোটি টাকা। ভেতরের আসবাব, ল্যাপটপসহ অন্যান্য জিনিসের হিসাব এখনো করা হয়নি। কোতোয়ালৗসহ নগরের আটটি থানা ভবন ও আটটি পুলিশ ফাঁড়ির অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ২১ কোটি টাকা।
পুলিশ সূত্র জানায়, নগরের পাহাড়তলী থানায় অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণ হয় ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা। পুরো থানায় দেয়াল ছাড়া আর কিছু অবশিষ্ট নেই। ইপিজেড থানায় ৭০ লাখ, পতেঙ্গায় ৮০ লাখ, হালিশহরে দেড় কোটি, ডবলমুরিংয়ে ১ কোটি ২০ লাখ, চান্দগাঁও ১ কোটি ২০ লাখ, বন্দর দেড় কোটি, সদরঘাট ৮০ লাখ ও আকবর শাহ থানায় ৭০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশ ফাঁড়ির মধ্যে পাথরঘাটায় ৮০ লাখ, সদরঘাটে ১ কোটি, ইপিজেডে ৭০ লাখ, উত্তর হালিশহরে ৬০ লাখ, মোহরায় ৬০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়। এর বাইরে দামপাড়া পুলিশ লাইনসে ৬০ লাখ টাকার ক্ষতি নির্ধারণ করা হয়। প্রাথমিকভাবে সিএমপির থানা ও পুলিশ ফাঁড়ির শুধু অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণ করা হয়েছে ২১ কোটি টাকা।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, আমাদের থানা ও পুলিশ ফাঁড়ি ক্ষতি হয়েছে, সেখানে গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রকৌশলীদের পাঠানো হয়েছে। সেখানে কোন কোন থানা ও ফাঁড়ি ব্যবহার করা যাবে, সেটার মতামত চাওয়া হয়েছে। অনেক থানা ব্যবহার করার মতো উপযোগী নেই বলে মনে হচ্ছে। আমাদের ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত থানাগুলোর মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। তবে বিকল্প ব্যবস্থায় সব থানার কার্যক্রম চলমান।
সিএমপির উপকমিশনার (সদর) এস এম মোস্তাইন হোসেন বলেন, আমাদের থানা ও পুলিশ ফাঁড়ির অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণ করা হচ্ছে। থানা, ফাঁড়ির আসবাবসহ অন্যান্য জিনিসের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণের কাজ চলছে। বিভিন্ন থানা থেকে অস্ত্র ও গুলি লুট হওয়ার সংখ্যা এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। সেটার কাজ চলমান রয়েছে। পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
থানায় কাজে যোগ দেওয়া একাধিক কর্মকর্তা জানান, স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনসহ তাঁদের ১১ দফা দাবি যাতে বাস্তবায়িত হয়। কোনো রাজনৈতিক দলের হয়ে পুলিশ যাতে আর ব্যবহার না হয়। স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে।
প্রসঙ্গত, ছাত্র–জনতার অভ্যুথানে ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের পর চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন এলাকায় খণ্ড খণ্ড মিছিল বের করেন লোকজন। এর মধ্যে বিকেল সাড়ে পাঁচটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে দুষ্কৃতকারীরা অগ্নিসংযোগ, হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। এতে নগরের আটটি থানা ধবংসস্তূপে পরিণত হয়। পতেঙ্গা ও ইপিজেড থানা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বর্তমানে পাশের ফাঁড়িতে এসব থানার কার্যক্রম চলছে।