চট্টবাণী: খ্যাতিমান ভাষাবিজ্ঞানী, একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রাবন্ধিক ও গবেষক ড. মাহবুবুল হক আর নেই।
বুধবার (২৪ জুলাই) দিবাগত রাত পৌনে ২টায় ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। তিনি দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগ ও কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন।গত ৭ জুলাই তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার সাঈদ এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা থেকে তাঁর মরদেহ চট্টগ্রামে নিয়ে আসা হবে। শুক্রবার (২৬ জুলাই) সকাল ১০টায় চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে সর্বস্তরের মানুষ তাঁকে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। বাদ জুমা জামিয়াতুল ফালাহ মসজিদে নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। পরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কবরস্থানে দাফন করা হবে।
ড. মাহবুবুল হকের জীবন বিচিত্র কর্মে আলোকিত। কৈশোর ও যৌবনে তিনি চট্টগ্রাম শহরে বাম রাজনীতির একজন অগ্রগণ্য কর্মী ও সংগঠক হিসেবে নিজের পরিচয়কে বিশেষভাবে তুলে ধরেছিলেন। পরবর্তীকালে তিনি অধ্যাপনাকে কর্মজীবনের পাথেয় করেছেন। গবেষক হিসেবেও পেয়েছেন স্বীকৃতি। তাঁর পিএইচডি অভিসন্দর্ভের বিষয় ছিল- তিন কবি সমর সেন, সুভাষ মুখোপাধ্যায় ও সুকান্ত ভট্টাচার্য। পরম যত্নে মাহবুবুল হক তাদের কবিতার বৈশিষ্ট্য উদ্ঘাটন করার চেষ্টা করেছেন। মিষ্টভাষী এই মানুষটার মধ্যে নানা সুন্দর ও অপূর্ব গুণের সমন্বয় ঘটেছে। সৃজনে, মননে সবসময় তিনি ছিলেন ক্রিয়াশীল। ঝঞ্ঝাটমুক্ত ছিল তাঁর পথচলা।
মাহবুবুল হক ১৯৪৮ সালের ৩ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। জন্মস্থান ফরিদপুর জেলার মধুখালিতে। তবে শৈশব থেকে বেড়ে ওঠেছেন চট্টগ্রামে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৯ সালে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক (সম্মান) এবং ১৯৭০ সালে একই বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৯৭ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন মাহবুবুল হক। বিভিন্ন সময়ে শিক্ষকতা করেছেন রাঙ্গুনীয়া কলেজ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ। পরবর্তীতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন বাংলা বিভাগে প্রভাষক হিসেবে। শিক্ষকতার পাশাপাশি প্রায়োগিক বাংলা ও ফোকলোর চর্চা, গবেষণা, সম্পাদনা, অনুবাদ ও পাঠ্যবই রচনা করে পরিচিতি লাভ করেন ড. মাহবুবুল হক। বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, বাংলা একাডেমি, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডসহ বিশেষজ্ঞ হিসেবে নানা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করেছেন। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের বেশ কয়েকটি বাংলা পাঠ্য বইয়েরও রচয়িতাও তিনি। আহ্বায়ক হিসেবে নতুন শিক্ষানীতি অনুযায়ী ২০১২ ও ২০১৩ শিক্ষাবর্ষের বাংলা শিক্ষাক্রম ও বাংলা পাঠ্যবই প্রণয়নে দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম প্রণয়নে সক্রিয় ভূমিকা রয়েছে তাঁর।