চট্টবাণী: নগরের আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকায় অ্যাপসের মাধ্যমে গাড়ি পার্কিং কার্যক্রম চালু হয়েছে। ‘ইয়েস পার্কিং’ অ্যাপসের মাধ্যমে স্মার্ট পে পার্কিং সুবিধা পাবেন নগরবাসী।
রোববার (৩০ জুন) হোটেল আগ্রাবাদের ইছামতী হলে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী স্মার্ট পে পার্কিংয়ের উদ্বোধন করেন।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম সুন্দর নগর।অনেক বিশেষণ চট্টগ্রামের৷ কিন্তু এখন শুনি, চট্টগ্রাম বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে। আমরা নিজেরাই বিবর্ণ করছি। নদী, পাহাড়, জলাশয়, সবুজ ধ্বংস করছি। তাই একযোগে কাজ করতে হবে। আমি দায়িত্ব নিয়ে সব সংস্থাকে একযোগে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করেছি। সফল হয়েছি বলেই স্মার্ট পে পার্কিং চালু করতে পারছি। বাস টার্মিনাল শহরতলীতে নেওয়া গেলে যানজট কমবে।
‘সড়ক ও ফুটপাত হকারমুক্ত করছি। হকারদের জন্য নাইট মার্কেট, হলিডে মার্কেট চালুর পরিকল্পনা নিচ্ছি। বহুতল পার্কিং গড়ে তুলতে বড় সমস্যা জায়গার অভাব। আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারে স্পিড লিমিট ক্যামেরা বসানোর উদ্যোগ নিচ্ছি। স্মার্ট পে পার্কিং নবযুগের সূচনা করছে। আমার মনে হয়, সঠিক পরিকল্পনা না করলে ১৫-২০ বছরে চট্টগ্রাম পরিত্যক্ত শহরে পরিণত হবে। চট্টগ্রামকে আমরা নান্দনিক পরিকল্পিত শহর হিসেবে গড়ে তুলবো’।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউনুছ ও সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মাসুদ আহমেদ।
মোহাম্মদ ইউনুছ বলেন, পে পার্কিংয়ের মতো চট্টগ্রামে সাহসী পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য মেয়রকে ধন্যবাদ জানাই। পুরো শহরে ছড়িয়ে দিতে আমরা সার্বিক সহযোগিতা করবো। পার্কিং ফি লাভের জন্য নয়, এটি রক্ষণাবেক্ষণ খরচ। এটি দিতে হবে।
ভবনের নকশা অনুমোদনে পার্কিং থাকতে হবে। বহুতল ভবন, শপিং সেন্টারের পার্কিং স্পেস উদ্ধারে একযোগে অভিযান চালাব। ট্রাফিক সিগনাল আধুনিক করে আইনের কঠোর প্রয়োগ করতে হবে। কারণ চট্টগ্রাম ইট পাথরের বস্তি হয়ে গেছে।
মাসুদ আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় চসিকের স্মার্ট পে পার্কিং চালু। নগরের সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্টের জন্য এখনই উদ্যোগ নিতে হবে। মাস্টারপ্ল্যানে বাস স্টেশন শহরের বাইরে নিয়ে যেতে হবে৷ তবে নাগরিকদের দ্রুত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করে দিতে হবে। পে পার্কিং সাময়িক সমাধান। বহুতল পার্কিং চালু করতে হবে। বহুতল ভবনে পর্যাপ্ত পার্কিং নিশ্চিত করতে হবে।
সভাপতিত্ব করেন চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম।
চসিকের ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী শাহিনুল ইসলাম বলেন, সুশৃঙ্খল, সুন্দর, সবুজ, স্মার্ট নগর গড়ার নির্দেশনা দিয়েছেন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। তারই আলোকে সিএমপির সঙ্গে আলোচনা করে পাইলট প্রকল্প হিসেবে আগ্রাবাদ এলাকা বেছে নেওয়া হয়েছে।
গত ৩ মে চুক্তি হয়। সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পে পার্কিং চালু থাকবে। পে পার্কিং শুধু চসিকের আয় বাড়াবে না, গাড়ির নিরাপত্তাও নিশ্চিত হবে।
বি-ট্র্যাক সলিউশনের প্রকল্প প্রধান সাফায়েত আবদুল্লাহ জানান, ইয়েস পার্কিং মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে পার্কিং সুবিধা ও ডিজিটাল কার্ডে পেমেন্ট করতে পারবেন। নাগরিকরা নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছানোর আগেই পার্কিংয়ের বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারবেন। এতে সময়ের অপচয় ও দুশ্চিন্তা হবে না। পে পার্কিং এলাকায় সিসিটিভি এবং নিজস্ব এজেন্ট থাকবে। যাদের স্মার্ট ফোন থাকবে না তারা এজেন্টের সহায়তায় বুকিং ও নগদে ফি পরিশোধ করতে পারবেন।
প্যানেল মেয়র মো. গিয়াস উদ্দিন বলেন, চট্টগ্রামে ৭০ লাখ মানুষ বাস করে। যত্রতত্র পার্কিংয়ের কারণে যানজট ও জনদুর্ভোগ হয়৷ মেয়র এ সমস্যা নিরসনে স্মার্ট পে পার্কিং চালুর উদ্যোগ নিয়েছেন। এটি পুরোপুরি বাস্তবায়ন হলে আধুনিক নগরীর পথে একধাপ এগিয়ে যাবে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্যানেল মেয়র আফরোজা কালাম, কাউন্সিলর আবুল হাসনাত মো. বেলাল, আবদুস সালাম মাসুম, আতাউল্লাহ চৌধুরী, শাহীন আক্তার রোজী, রুমকি সেনগুপ্ত, সচিব মোহাম্মদ আশরাফুল আমিন, প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা লতিফুল হক কাজমী, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম, মেয়রের একান্ত সচিব মুহাম্মদ আবুল হাশেম, প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম, প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির চৌধুরী, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. ফরহাদুল আলম, জসিম উদ্দিন, চসিকের পক্ষে পে-পার্কিং বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব সহকারী প্রকৌশলী মাহমুদ শাফকাত আমিন, বি-ট্র্যাক সলিউশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এম তানভীর সিদ্দিকী, হেড অব সেলস সিরাজ উদ্দিন, ডেপুটি ম্যানেজার মো. শাহ ফারুক ও সিনিয়র এক্সিকিউটিভ সরোয়ার হোসেন চৌধুরী, তারিকুল ইসলাম প্রমুখ।
বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বি-ট্র্যাক সলিউশনের সহায়তায় পাইলট প্রকল্প হিসেবে আগ্রাবাদে সিলভার স্পুনের সামনে এবং ডাচ-বাংলা ব্যাংকের সড়কে ১৭৭টি গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।