নিজস্ব প্রতিবেদকঃ কক্সবাজারের চকরিয়ায় সালিশি বৈঠকের নোটিশ দিয়ে পরিষদ কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে এজলাস কক্ষের দরজা বন্ধ করে মধ্যযুগীয় কায়দায় মারধর ও হামলার অভিযোগে বরইতলী ইউপি চেয়ারম্যান সালেকুজ্জামান, দুই ইউপি সদস্য আলমগীর ও নসিম হেজাজী, অফিস সহায়ক মহসিন রিমন ও গ্রাম-পুলিশ রিদুয়ানসহ অজ্ঞাতনামা ৫/৬ জনের নামে আদালতে মামলা দায়ের করেছে স্থানীয় পহর চাঁদা এলাকার মৃত মোজাফফর আহমদের ছেলে এনামুল হক।
এ ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে শুক্রবার বিকেলে বরইতলী পহরচাঁদা কুতুব বাজারে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে এলাকাবাসী। একই দাবিতে বৃহস্পতিবার বিকেলে স্থানীয় বাজারে মারধরের শিকার হওয়া পরিবারের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা নাজিম উদ্দীন দুলাল, সাহাব উদ্দিন, ইউনিয়ন যুবলীগের আহবায়ক আইয়ুব খান মিন্টু, সালেহ আহমদ প্রমূখ।
হামলার শিকার চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ইনস্ট্রাক্টর (রেডিওলজি) মাহমুদুল হক বলেন, গত রবিবার (২৩ জুন) জায়গা-জমি সংক্রান্ত অভিযোগের স্বাক্ষী দিতে ইউনিয়ন পরিষদে গেলে দুপুর ২টার দিকে গ্রাম আদালতের বিচারকার্য শুরু হয়। শুরুতে মনোযোগ সহকারে বাদী পক্ষের অভিযোগটি শুনেন ইউপি চেয়ারম্যান সালেকুজ্জামান। পরে বিবাদী পক্ষের বক্তব্য প্রদানের সময় তাদের বক্তব্য না শুনে খোদ চেয়ারম্যান নিজেই হুমকিধামকি দিতে থাকেন আমাদেরকে। চেয়ারম্যানের এমন অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ দেখে বিবাদী পক্ষের লোকজন একপর্যায়ে চেয়ারম্যানের সাথে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে চেয়ারম্যানের নির্দেশে পরিষদের এজলাস কক্ষের দরজা বন্ধ করে দেন ৫নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আলমগীরসহ গ্রাম-পুলিশরা।
মেম্বার আলমগীর ও গ্রাম পুলিশরা শক্ত কাঠের লাঠি (বাটাম) দিয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় এলোপাতাড়ি মারধর করতে থাকে আমাদেরকে। এসময় আমার অপর ভাই এনামুল হকের মুখে লাঠির আঘাতে দাতের উপরের চোয়ালে গুরুতর রক্তাক্ত জখম হয়ে ১টি দাঁত মাঁড়ি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং একই সময় আকবর হোছেন ও আমাকে বেদড়ক পিটিয়ে পিটে, কোমরে ও হাতে গুরুতর রক্তাক্ত জখম ও হাতের হাড় ভেঙ্গে যায়। ওই সময় আমাদের শৌরচিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে চেয়ারম্যান, মেম্বার ও গ্রাম পুলিশদের কবল থেকে আমাদের উদ্ধার করে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করে।
বাদি পক্ষের আইনজীবী এডভোকেট শহিদুল্লাহ চৌধুরী বলেন, বরইতলী ইউনিয়ন পরিষদে বিচারপ্রার্থীদের আটক রেখে মারধরের অভিযোগে ইউপি চেয়ারম্যান ছালেকুজ্জামান সহ ৫ জনের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে ফৌজদারি অপরাধে অভিযোগ দায়ের করিলে আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশ ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো (পিবিআই) কক্সবাজার কে তদন্তের নির্দেশ প্রদান করেন।
এদিকে বরইতলী ইউনিয়ন পরিষদে আটকে রেখে বিচারপ্রার্থী মাহমুদুল হকের উপর বর্বরোচিত হামলার ঘটনায় উদ্বিগ্নতা প্রকাশ করে নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল টেকনোলজিস্ট পরিষদ, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগ, পহরচাঁদা মানব কল্যাণ ফাউন্ডেশন ও আমরা পহরচাঁদার সন্তান, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন পেশাজীবি সংঘটনের পক্ষ থেকে।
অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান ছালেকুজ্জামান জানান, বিচারকার্যে বিঘ্নিত ঘটানোর মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দরজা বন্ধ করে মারধরের বিষয় টি সঠিক নয়।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ফখরুল ইসলাম বলেন, বরইতলী ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আদালত মামলা হয়েছে শুনেছি, এ বিষয়ে আদালত যে সিদ্ধান্ত দিবেন তা আমরা কার্যকর করবো।