চট্টবাণী: চট্টগ্রামের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও অহংকার আবদুল জব্বারের বলিখেলা। আগামী ১২ বৈশাখ, ২৫ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) বিকেল ৩টায় নগরের ঐতিহাসিক লালদীঘি ময়দানে অনুষ্ঠিত হবে এ খেলা।
১৯০৯ সালে ব্রিটিশবিরোধী মনোভাব গড়ে তোলা এবং শক্তিমত্তা প্রদর্শনের মাধ্যমে তাদের মনোবল বাড়ানোর উদ্দেশ্যেই আবদুল জব্বার সওদাগর এই বলিখেলার প্রবর্তন করেন। তারই ধারাবাহিকতায় বলিখেলার এটি ১১৫তম আসর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
এদিকে বলিখেলাকে ঘিরে নগরের লালদীঘি মাঠের আশপাশে বসবে তিন দিনের বৈশাখী মেলা। আগামী ২৪-২৬ এপ্রিল (বুধবার-শুক্রবার) এ মেলা অনুষ্ঠিত হবে।
এ উপলক্ষ্যে মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৮টার সিটি করপোরেশন পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে আবদুল জব্বার স্মৃতি কুস্তি প্রতিযোগিতা ও বৈশাখী মেলা কমিটির প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আয়োজক সূত্রে জানা যায়, বলিখেলার জন্য লালদীঘি মাঠে এরই মধ্যে ২০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ২০ ফুট প্রস্থের বালুর মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। সেখানে পাঁচটি ধাপে প্রতিযোগিতা হবে। প্রথম বাছাইয়ের পরের রাউন্ড পর্বে ৫০ জনকে নিয়ে খেলা হবে। সেখান থেকে ২৫ জন যাবেন মূল চ্যাম্পিয়ন পর্বে। এখানে কোনো পয়েন্ট ব্যবস্থা নেই। কুস্তি করতে করতে মাটিতে যে প্রতিপক্ষের পিঠ লাগাতে পারবে সেই বিজয়ী হবে। প্রতিবছর ১০০-১৫০ জন বলি দেশের বিভিন্ন জায়গায় থেকে এসে এ মেলায় অংশ নেন।
প্রচলিত আছে, ১০৩ বছর আগে ১৯০৯ সালে চট্টগ্রামের বদরপাতি এলাকার ধনাঢ্য ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার সওদাগর এ প্রতিযোগিতার সূচনা করেন। তার মৃত্যুর পর এ প্রতিযোগিতা জব্বারের বলিখেলা নামে পরিচিতি লাভ করে। প্রতি বছর ১২ বৈশাখ নগরের লালদীঘি মাঠে এই খেলা অনুষ্ঠিত হয়। এ খেলায় অংশগ্রহণকারীদের বলা হয় ‘বলী’। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় ‘কুস্তি’ বলীখেলা নামে পরিচিতি।
এদিকে জব্বারের বলিখেলা ও বৈশাখী মেলাকে ঘিরে নগরজুড়ে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। প্রত্যেক বছর দূর-দূরান্ত থেকে বলিখেলা দেখতে ও মেলায় ঘুরতে আসে বিভিন্ন শ্রেণি, পেশা ও বয়সের মানুষ। তীব্র গরম ও ভিড় উপক্ষো করে সকলেই ঘুরে বেড়ায় মেলার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। তবে নারীরা ঐতিহ্যের বলিখেলা উপভোগ করা থেকে প্রতিবছরই বঞ্চিত হন। কারণ তাদের জন্য আলাদা কোনো ব্যবস্থা করে না আয়োজক কমিটি।
নগরের আন্দরকিল্লা, বক্সিরহাট, লালদীঘি পাড়, কেসিদে রোড, সিনেমা প্যালেস, শহীদ মিনার সড়ক, কোতোয়ালি মোড়, জেল রোডসহ প্রায় তিন কিলোমিটার জুড়ে এ মেলার বিস্তৃতি ঘটে। বিভিন্ন জেলা-উপজেলার গ্রাম-গ্রামান্তর থেকে বিভিন্ন পণ্যের পসরা নিয়ে মেলায় আসেন ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প ব্যবসায়ীরা।
আবদুল জব্বার স্মৃতি কুস্তি প্রতিযোগিতা ও বৈশাখী মেলা কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর জহর লাল হাজারী বলেন, ২৫ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) বিকেল ৩টায় লালদীঘি মাঠে বলি খেলা এবং ২৪-২৬ এপ্রিল বৈশাখী মেলা অনুষ্ঠিত হবে। বলিখেলার ১১৫তম আসর এটি।
প্রসঙ্গত, করোনা মহামারির কারণে ২০২০ ও ২০২১ সালে আবদুল জব্বারের বলি খেলা ও মেলা আয়োজন হয়নি। ১১৪তম আসরে কুমিল্লার মোহাম্মদ শাহজালাল বলী চ্যাম্পিয়ন হন। মাত্র ১ মিনিটে শাহজালালের কাছে হার মানেন আগের বারের চ্যাম্পিয়ন কক্সবাজারের জীবন বলী।