আহমদুল হক: কক্সবাজার ভিত্তিক পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন, মানবাধিকার ও টেকসই উন্নয়ন বিষয়ক সংগঠন সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্ট, হিউম্যান রাইটস এন্ড ডেভেলপমেন্ট ফোরাম- সিইএইচআরডিএফ এর উদ্যোগে পানি কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ আয়োজনের মূল প্রতিপাদ্য ছিল- আমাদের ভবিষ্যতের জন্য ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা।
আজ বিকেল কক্সবাজার পৌরসভার সায়মুন সংসদ কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত পরিবেশ কনফারেন্সে সিইএইচআরডিএফ প্রধান নির্বাহী মোঃ ইলিয়াছ মিয়া'র সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন সিনিয়র সাংবাদিক ও চিন্তক আহমদ গিয়াস, বাপা কক্সবাজার জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কলিম উল্লাহ, কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হেলেনাজ তাহেরা, কৃষি অধিদপ্তর কক্সবাজার এর উপ-সহকারী পরিচালক রিয়াদ-ই-রাব্বী রিয়াদ ও বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দল কক্সবাজার জেলা শাখার সভাপতি শামশুল আলম শ্রাবণ।
সিইএইচআরডিএফ পানি কনফারেন্সের সদস্য সচিব ও সহকারী প্রধান সংগঠক(ওডিএস) রেজাউল করিমের সঞ্চালনায় কনফারেন্সে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পানি কনফারেন্সের আহবায়ক ও সহকারী প্রধান ব্যবস্থাপক(সিজিএস) সাঈদ মোহাম্মদ শুভ। এতে আয়োজকদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন সহকারী প্রধান লিডার(এলডিএস) আব্দুল মান্নান রানা, সহকারী প্রধান সমন্বয়ক(এসওএস) রুহুল আমিন, কক্সবাজার পিপলস কাউন্সিল সেক্রেটারি জেসমিন আকতার ও রামু এরিয়া কাউন্সিল সেক্রেটারি আহমদুল হক।
কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করেন রাজনীতিক, বুদ্ধিজীবী, সমাজচিন্তক, প্রশাসক, গণমানুষ, স্টেকহোল্ডার ও তরুণ নেতৃবৃন্দ।
এতে পানি সংকট, পানি নিরাপত্তা ও সুরক্ষা বিষয়ে আলোচনা হয়। এছাড়াও পরিবেশ, প্রকৃতি, জীববৈচিত্র্য, খাদ্যশৃঙ্খল, বাস্তুতন্ত্র, জলবায়ু পরিবর্তন, প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষায় করণীয়, প্রয়োজনীয় প্রতিরোধ, নাগরিক সমাজের ভূমিকা, জবাবদিহি ও শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক সদিচ্ছা ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
সভাপতির বক্তব্যে সিইএইচআরডিএফ প্রধান নির্বাহী মোঃ ইলিয়াছ মিয়া বলেন, পানি মানবজাতি সহ সকল উদ্ভিদ ও প্রাণীকূলের জন্য অপরিহার্য জীবনোপদান। পানির মধ্যেই জীববৈচিত্র্য জন্ম, বিকাশ ও মৃত্যু। সকল জীববৈচিত্র্যের জন্য তো বটে, মানবজাতির সামগ্রিক জীবনে পানির গুরুত্ব অপরিসীম। তিনি আরো বলেন, পানির সাথে মানুষের সম্পর্ক, আমাদের অস্তিত্ব, প্রাণীকূল ও জীববৈচিত্র্য বর্তমানে নানা কারণে হুমকির মুখে। মানবসৃষ্ট ও প্রাকৃতিক এসব সংকট হতে প্রকৃতি ও পানিকে বাঁচাতে না পারলে আমাদের কারও অস্তিত্বই থাকবে না।
সাংবাদিক গিয়াস আহমেদ বলেন, পানি একটি জীবন্ত সত্তা, কিন্তু আমরা সেই পানিকে টিকিয়ে রাখতে পারছি না। দিনের পর দিন যেভাবে ভূগর্ভস্থ পানি কমে যাচ্ছে এতে করে সামনে পানি সংকট হবে প্রকট। তিনি বলেন, মাত্রাতিরিক্ত পানি অপচয় বন্ধ করতে না পারলে ভবিষ্যতে পানি সংকটের তীব্রতা মানুষকে নাকাল বানিয়ে ফেলবে।
হেলেনাজ তাহেরা বলেন, কক্সবাজার এর হোটেল গুলো অতিরিক্ত মিঠা পানি অপচয় করে, গাড়ী ওয়াশ নামে স্থাপনা গুলো অতিরিক্ত মিঠা পানি অপচয় করে এগুলো বন্ধ করতে পদক্ষেপ নিতে হবে। তিনি প্লাস্টিক দূষণের ভয়াবহতা নিয়েও আলোচনা করেন। তিনি আরো বলেন, বর্তমানে সাগরে মাছের চেয়ে প্লাস্টিকের পরিমাণ বেশি হয়ে যাচ্ছে। তাই অন্তত কক্সবাজার জেলায় প্লাস্টিক দূষণ বন্ধ করতে হবে।
অতিথির বক্তব্যে কলিম উল্লাহ বলেন, তরুণদের শুধুমাত্র ব্যাক্তিগত চিন্তা না করে সামষ্টিক চিন্তা করতে আহবান করেন। পরবর্তী দায়িত্ব তরুণদের নিতে বলেন। আগামী প্রজন্মের জন্য টেকসই উন্নয়নে তরুণদের ভূমিকার কথা বলেন। তিনি উন্নয়নের নামে জনগণকে উদ্বাস্তু করার চিন্তা সরকারকে না করার আহবান করেন এবং একইসাথে মহেশখালীর নাগরিকদের অধিকার সচেতন হওয়ার আহবান করেন।
রিয়াদ-ই-রাব্বী বলেন, কক্সবাজার একটি ভৌগোলিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। এই এলাকায় ধন-সম্পদের ভরপুর, যুগ যুগ ধরে আমাদের পূর্বপুরুষেরা এই অনাবাদি জমি গুলো আবাদী করে এই ভূমিকে উর্বর করেছেন, এই ভূমি রক্ষায় সকলকে সোচ্চার হওয়ার আহবান করেন। তরুণদের দায়ি নিতে বলেন। সকল তরুণদের সামাজিক আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়তে আহবান করেন।
অতিথির বক্তব্যে শামশুল আলম শ্রাবণ বলেন, আজকে কোহেলিয়া নদী ভরাট হয়ে গেলো, প্যারাবন নিধন হয়ে যাচ্ছে, বেড়িবাঁধ অরক্ষিত, জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের মুখে এসব সুরক্ষায় আমাদের আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। বেজার উন্নয়ন প্রকল্পের নামে জনগণের ক্ষতি থেকে জনগণকে রক্ষা করতে হবে। তিনি আরও বলেন, বাঁকখালী নদী কক্সবাজার এর প্রাণ। বাঁকখালী নদী ভরাট থেকে রক্ষা করতে না পারলে ভবিষ্যতে কক্সবাজার শহর হুমকির মধ্যে পড়বে। তাই বাঁকখালী নদী রক্ষা গড়ে তুলতে হবে।
আহবায়কের বক্তব্যে সাঈদ মোহাম্মদ শুভ বলেন, পরিবেশগত সংকট মোকাবেলায় আমাদের-ই সবচেয়ে বড় দায়। আর এ সংকট মোকাবেলায় প্রয়োজন প্রয়োজনীয় শিক্ষা, জ্ঞান, দক্ষতা ও মূল্যবোধ। তিনি মহেশখালীর জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি এবং সকল স্তরের নাগরিকদের সোচ্চার হওয়ার আহবান করেন। সকল তরুণদের মহেশখালীর নাগরিকদের অধিকার রক্ষায় এগিয়ে আসার আহবান জানান। কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্ষতিকর দিক থেকে রক্ষা করতে সরকারকে আহবান করেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে কুরআন তেলাওয়াত করেন সিইএইচআরডিএফ কক্সবাজার সদর এরিয়া কাউন্সিল সেক্রেটারি এমদাদুল হক। কনফারেন্সে উপস্থিত ছিলেন ফোকাল অর্গানাইজার(নিয়ন্ত্রণ) রিয়াজ উদ্দিন বাপ্পী, ফোকাল অর্গানাইজার(নেতৃত্ব) রমজান আলী, ফোকাল অর্গানাইজার(সংগঠন) শাহ আবু বক্কর, ফিল্ড সচিব(তত্বাবধান) মোহাম্মদ শরীফ, ফিল্ড সচিব(সমন্বয়) হুমায়ুন কবির, রামু এরিয়া কাউন্সিল সেক্রেটারী আহমদুল হক প্রমূখ।
এতে সমগ্র কক্সবাজার জেলা হতে সিইএইচআরডিএফ এর বিভিন্ন সংগঠনের তরুণ কর্মীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।