চট্টবাণী: বিশ্ববরেণ্য বিজ্ঞানী জামাল নজরুল ইসলাম আমাদের গর্ব বলে মন্তব্য করেছেন কথাসাহিত্যিক ও বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী লেখক অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল।
তিনি বলেছেন, জামাল নজরুল ইসলামের কর্মের মাধ্যমে আমাদের আগামী প্রজন্ম বিজ্ঞানমনস্ক হবে।স্যার আমার খুবই প্রিয় একজন মানুষ। অনেক দিন দেশের বাইরে ছিলাম।
চলে আসবো আসতে পারি না। শুনলাম স্যার চলে এসেছেন। তখন আমি ভাবলাম দেশে চলে আসবো। স্যার বললেন, প্রথম পাঁচ বছর যদি থাকতে পারো তাহলে আর সমস্যা নেই। এসে দেখলাম দেশে কত আনন্দ।
শুক্রবার (১৫ মার্চ) ফুলকি আয়োজিত দুই দিনব্যাপী জামাল নজরুল কিশোর বিজ্ঞান উৎসবের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। ফুলকি প্রাঙ্গণে বৈচিত্র্যময় বিজ্ঞান আয়োজন রয়েছে উৎসবে।
জাফর ইকবাল শিশুকিশোরদের উদ্দেশে বলেন, বিজ্ঞানের মতো মজা পৃথিবীতে আর কিছু নেই। যারা বিজ্ঞান করে তাদের মতো কষ্টের জীবন আর কারও নেই। সারা জীবন সমস্যার সমাধান করে। একটি সমস্যা সমাধান করতে করতে আরেকটি সমস্যা এসে যায়। কিন্তু ওদের মতো সুখী মানুষ পৃথিবীতে একটিও নেই। একেকটি সমস্যা সমাধানের পর কী যে আনন্দ। তোমরা যারা জীবনে আনন্দ করতে চাও বৈজ্ঞানিক হও। চিকিৎসক, গায়ক, সাহিত্যিক যা খুশি হতে পার কিন্তু বৈজ্ঞানিক হওয়ার আনন্দ বেশি।
সকাল ৯টায় ফুলকির সুগত প্রসাদ মুক্তমঞ্চে উৎসবের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ফুলকির শিক্ষার্থীরা সঙ্গীত, নৃত্য ও আবৃত্তি পরিবেশন করে। অনুষ্ঠানে জামাল নজরুল ইসলামকে নিয়ে তথ্যচিত্র দেখানো হয়। ফুলকির বিভিন্ন কক্ষে শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান প্রজেক্ট, বিজ্ঞানবিষয়ক খেলা ও জামাল নজরুল ইসলামের বই, হাতে আঁকা ছবি, তাঁর ব্যবহৃত জিনিসপত্র প্রদর্শন করা হয়।
চট্টগ্রামের ১৫টি বিদ্যালয় নিবন্ধনের মাধ্যমে এ উৎসব উপলক্ষে বিতর্ক ও কুইজ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে। শিক্ষার্থীদের রোবটিক্স নিয়ে একটি কর্মশালার আয়োজনে ৪০ জন শিক্ষার্থী এ কর্মশালায় অংশ নিয়েছে। মুহম্মদ জাফর ইকবালের সঙ্গে বিকেলে আয়োজন করা হয় শিশু-কিশোর সমাবেশ। আর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ফুলকির ছাদে আয়োজন করা হয় ‘আকাশ দেখা’। শিক্ষার্থীরা লাইন ধরে আকাশের গ্রহ ও নক্ষত্র পর্যবেক্ষণ করে।
শনিবার (১৬ মার্চ) সকালে গ্রেগর ইয়োহান মেণ্ডেলকে নিয়ে থাকবে তথ্যচিত্র প্রদর্শনী। এরপরই অনুষ্ঠিত হবে বিতর্ক বিষয়ের চূড়ান্ত প্রতিযোগিতা। বিতর্ক প্রতিযোগিতায় ‘বাংলাদেশ মহিলা সমিতি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়’ মুখোমুখি হবে। বড়দের পাশাপাশি স্কুলের ছোটরাও বিজ্ঞান বক্তৃতায় অংশ নেবে। এ ছাড়া চট্টগ্রামের ৩৫টি বিদ্যালয়ের ৭০ জন গণিত ও বিজ্ঞান শিক্ষক নিয়ে একটি সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে। সেমিনারের বিষয়: মাধ্যমিক শিক্ষায় গণিত ও বিজ্ঞান পাঠের বর্তমান বাস্তবতা ও ভবিষ্যতের করণীয়। সেমিনারে বক্তা থাকবেন চুয়েটের ড. সজল চন্দ্র বণিক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মইনুল ইসলাম জাবের।
শিক্ষার্থীদের জন্য এ দিন আয়োজন করা হবে জেনেটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে কর্মশালা। কর্মশালা পরিচালনা করবেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একঝাঁক তরুণ। বিকেলে বিজ্ঞানভিত্তিক চলচ্চিত্র প্রদর্শনী থাকবে। উৎসবের এ আয়োজন ফুলকি ও ফুলকির বাইরের সব শিক্ষার্থীরা অংশ নিতে পারবে।
কবি আবুল মোমেন বলেন, জামাল নজরুল ইসলামের মেধা ও কাজ এখন বিশ্বব্যাপী আলোচিত ও প্রশংসিত হয়েছে। বিজ্ঞান, গান ও শিল্পকলার মধ্যে চলাচল আছে। বিজ্ঞান, দর্শন, আধ্যাত্মিকতা, সৃজনশীলতা নিয়ে মানুষ। শিশু বয়সে সব উপাদানের সঙ্গে পরিচিত করাতে হবে। ভালো থাকার জন্য, অক্ষয় থাকার জন্য অর্জন করতে হবে। প্রকৃতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে না পারলে আমরা ছন্দ হারাব। বিকশিত হওয়ার জায়গা, বড় হওয়ার জায়গা আবিষ্কার করতে হবে। বিকশিত হওয়ার চর্চা থেকে এ উৎসবের আয়োজন।