খেলাধুলা ডেস্ক: সর্বশেষ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) কিংবা সদ্য সমাপ্ত টি-টোয়েন্টি সিরিজ দুই জায়গায়ই ব্যর্থ ছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। রান খরায় ভুগতে থাকা বাংলাদেশ অধিনায়ক ফরম্যাট বদলের সঙ্গে ব্যাটিংয়ে গিয়ার পরিবর্তন করলেন। প্রথম ওয়ানডেতে পেলেন তিন অঙ্কের দেখা। শান্তর প্রত্যাবর্তনের সেঞ্চুরিতে শ্রীলঙ্কাকে ৬ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এই জয়ে সিরিজে ১-০তে এগিয়ে গেল স্বাগতিকরা।
বুধবার (১৩ মার্চ) চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে ৪৮.৫ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে ২৫৫ রান সংগ্রহ করে শ্রীলঙ্কা। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৬৭ রান এসেছে লিয়ানাগের ব্যাট থেকে। বাংলাদেশের হয়ে ৩টি করে উইকেট পেয়েছেন তানজিম সাকিব, শরিফুল ইসলাম ও তাসকিন আহমেদ।
জবাবে খেলতে নেমে ৪৪.৪ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। দলের হয়ে সর্বোচ্চ অপরাজিত ১২২ রান করেছেন শান্ত। তাছাড়া মুশফিকের ব্যাট থেকে এসেছে অপরাজিত ৭৩ রান।
২৫৬ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে বাজে শুরু ছিল বাংলাদেশের। ইনিংসের প্রথম বলেই সাজঘরে ফেরেন লিটন দাস। দিলশান মাদুশঙ্কার করা গুড লেংথ ও ব্যাক অব লেংথের মাঝামাঝি করা ডেলিভারি স্টাম্পে টেনে এনে বোল্ড হন এই ওপেনার।
লিটন গোল্ডেন ডাক খেয়ে ফেরার পর টিকতে পারেননি আরেক ওপেনার সৌম্য সরকারও। ইনিংসের তৃতীয় ওভারের চতুর্থ বলটি খাটো লেংথে করেছিলেন মাদুশঙ্কা। অফ স্টাম্পের বেশ খানিকটা বাইরের বল জায়গায় দাঁড়িয়ে অন সাইডে পুল করতে চেয়েছিলেন সৌম্য। মিস টাইমিংয়ে ৩০ গজের বৃত্তের ভেতরে স্কয়ার লেগে ধরা পড়েন। ৯ বলে ৩ রান করে আউট হন সৌম্য।
দুই ওপেনার দ্রুত ফেরার পর দলকে শক্ত ভিত গড়ে দেওয়ার দায়িত্ব ছিল তাওহিদ হৃদয়ের ওপর। বিপদে দলের হাল ধরতে পারেননি এই মিডল অর্ডার ব্যাটার। উল্টো দ্রুত সাজঘরে ফিরে দলের বিপদ আরো বাড়িয়েছেন তিনি। ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে আক্রমণে ছিলেন প্রমোদ মাদুশান। এই পেসারের করা গুড লেংথের ডেলিভারিতে ডিফেন্স করতে গিয়ে লাইন মিস করেছেন হৃদয়। বোল্ড হওয়ার আগে ৮ বলে ৩ রান এসেছে তার ব্যাট থেকে।
২৩ রানের মধ্যে টপ অর্ডারের তিন ব্যাটারকে হারিয়ে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়েছিল বাংলাদেশ। এমন পরিস্থিতিতে দলের হাল ধরেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। দুজনেই দেখে-শুনে খেলে বড় জুটির দিকে এগোচ্ছিলেন। তবে ৩৭ রানে থেমেছেন মাহমুদউল্লাহ। ১৬তম ওভারের তৃতীয় বলে লাহিরু কুমারাকে পুল করতে গিয়ে মাদুশঙ্কার হাতে ধরা পড়েন এই মিডল অর্ডার ব্যাটার।
মাহমুদউল্লাহ থিতু হয়ে ফিরলে মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে ১৬৫ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েন শান্ত। ব্যাট হাতে দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার পথে সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। ৫২ বলে ফিফটি করেছিলেন। পরের ৫০ রান করেছেন ৫৬ বলে। সবমিলিয়ে ১০৮ বলে তিন অঙ্ক স্পর্শ করেছেন শান্ত। শেষ পর্যন্ত ১২২ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছেন শান্ত। যা ওয়ানডেতে তার ক্যারিয়ারসেরা। আর মুশফিক অপরাজিত ৭৩ রান করে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছেড়েছেন।
এর আগে নতুন বলে শুরুটা মোটেও ভালো হয়নি বাংলাদেশের। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে বোলিংয়ে এসে লাগামছাড়া বোলিং করেছেন তাসকিন আহমেদ। এই পেসারের একই ওভারে দুই বাউন্ডারি হাঁকায়ে হাত-খুলে খেলা শুরু করে লঙ্কানরা। এরপর শরিফুল ইসলামের ওপরও চড়াও হয়েছেন পাথুম নিশাঙ্কা-আভিষ্কা ফার্নান্দো।
উদ্বোধনী জুটিতে তাসকিন-শরিফুলের এমন ধারহীন বোলিংয়ে ৮ম ওভারেই বোলিংয়ে পরিবর্তন আনেন নাজমুল হোসেন শান্ত। তানজিম সাকিব আক্রমণে এসে নিজের প্রথম ওভারে সুবিধা করতে পারেননি। তবে পরের ওভারেই ব্রেকথ্রু এনে দিয়েছেন এই তরুণ পেসার।
ইনিংসের দশম ওভারের পঞ্চম বলটি অফ স্টাম্পের খানিকটা বাইরে গুড লেংথে করেছিলেন সাকিব। সেখানে জায়গায় দাঁড়িয়ে শট খেলতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন আভিষ্কা। ৩৩ বলে ৩৩ রান করে এই ওপেনার সাজঘরে ফেরায় ভাঙে ৭১ রানের উদ্বোধনী জুটি।
সাকিবের তৃতীয় ওভারে সাজঘরে ফিরেছেন আরেক ওপেনার নিশাঙ্কা। ১২তম ওভারের প্রথম বলটি খাটো লেংথে করেছিলেন এই পেসার। সেখানে ঘুরে দাঁড়িয়ে স্কয়ার লেগের উপর দিয়ে পুল করতে চেয়েছিলেন নিশাঙ্কা কিন্তু টাইমিং হয়নি। এই ওপেনারের ব্যাটের কানায় লেগে বল চলে যায় গালিতে। সহজ ক্যাচ লুফে নেন সৌম্য সরকার। সাজঘরে ফেরার আগে নিশাঙ্কার ব্যাট থেকে এসেছে ২৮ বলে ৩৬ রান।
দুর্দান্ত শুরু করা লঙ্কানদের লাগাম টেনে ধরেন সাকিব একাই। ব্যক্তিগত চতুর্থ ওভারেও উইকেটের দেখা পেয়েছেন এই পেসার। ইনিংসের ১৪তম ওভারের প্রথম বলটি অফ স্টাম্পের ওপর ফুল লেংথে করেছিলেন। সেখানে ড্রাইভ করতে চেয়েছিলেন সাদিরা সামারাবিক্রমা, এজড হয়ে বল চলে যায় উইকেটের পেছনে। গ্লাভস হাতে দুর্দান্ত ক্যাচ নেন মুশফিকুর রহিম। ৩ রানের বেশি করতে পারেননি সামারাবিক্রমা। টানা ৩ ওভারে ৩ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে ম্যাচে ফেরান সাকিব।
দ্রুত সময়ের মধ্যে ৩ উইকেট হারানোর পর আসালাঙ্কাকে সঙ্গে নিয়ে জুটি গড়ার চেষ্টা করেন কুশল মেন্ডিস। দুজনেই দেখে-শুনে খেলছিলেন। তবে আসালঙ্কাকে বেশি দূর এগোতে দেননি মেহেদি হাসান মিরাজ। ২৬তম ওভারে দ্বিতীয় বলে এই অফ স্পিনারের ফ্লাইট মিস করে বোল্ড হয়েছেন আসালঙ্কা। ১৮ রান করে আসালঙ্কা ফেরায় ভেঙেছে ৪৪ রানের পঞ্চম উইকেট জুটি।
তিনে নেমে আরও একবার দলের হাল ধরেন মেন্ডিস। এই টপ অর্ডার ব্যাটার এক প্রান্ত আগলে রেখে ব্যাটিং করছিলেন। ৬৭ বলে তোলে নেন তার ব্যক্তিগত ফিফটি। তবে এরপর আর খুব বেশিদূর এগোতে পারলেন না। ইনিংসের ৩৭তম ওভারে তাসকিন আহমেদকে টেনে মারতে গিয়ে মিড অনে শান্তর হাতে ধরা পড়েন মেন্ডিস। সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ৭৫ বলে ৫৯ রান।
সাতে নেমে আক্রমণাত্মক শুরু করেছিলেন ভানিন্দু হাসারাঙ্গা। তবে ইনিংস বড় করতে পারেননি। ১৪ বলে করেছেন ১৩ রান। এরপর শেষের দিকের ব্যাটাররা দ্রুত ফিরেছেন। তাতে ২৫৫ রানে থেমেছে শ্রীলঙ্কা।