খেলাধুলা ডেস্ক: জয়ের স্বপ্ন দেখাও তখন বেশ কঠিন। হারটা মনে হচ্ছিল অবশ্যম্ভাবী।
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ চেষ্টা করছিলেন বটে, কিন্তু তার সঙ্গী হবেন কে? এর মধ্যে আউট হয়ে গেলেন মাহমুদউল্লাহ। আঁধারই নেমে এলো বাংলাদেশের জয়ের স্বপ্নে। হুট করেই দৃশ্যপটে হাজির জাকের আলী অনিক। অবিশ্বাস্য এক ইনিংসে খুব কাছে নিয়ে এলেন জয়ের স্বপ্ন। কিন্তু শেষ অবধি নায়ক হওয়া হলো না জাকেরের।
সোমবার সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ হেরেছে ৩ রানে। শুরুতে ব্যাট করে ৩ উইকেট হারিয়ে ২০৬ রান করে লঙ্কানরা। ওই রান তাড়া করতে নেমে ৮ উইকেট হারিয়ে ২০৩ রানের বেশি করতে পারেনি বাংলাদেশ।
টস জিতে শ্রীলঙ্কাকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় বাংলাদেশ। শরিফুল ইসলামকে বোলিংয়ে নিয়ে আসেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। শরিফুলের করা প্রথম বলে অবশ্য স্লিপ দিয়ে ক্যাচ ওঠে, কিন্তু তখন ওই জায়গায় কোনো ফিল্ডার ছিলেন না; হয়ে যায় চার। পরের বলেই উইকেট নেন শরিফুল। তার ফুল লেংথের বল ড্রাইভ করতে গেলেও ঠিকঠাক টাইমিং হয়নি আভিশকা ফার্নান্দোর, ক্যাচ যায় লিটনের কাছে।
পরের ওভারে তাসকিন আহমেদ এসে দেন ৫ রান, দুই ওভারে শ্রীলঙ্কার রান ছিল কেবল ৯। পরের ওভারে শরিফুল একটি চার ও ছক্কা হজম করেন, চতুর্থ ওভারে মাহেদী হাসানকে আনেন শান্ত; কিন্তু তিনি দেন ১১ রান। পঞ্চম ওভারে এসে দলকে সাফল্য এনে দেন তাসকিন। একটু অতিরিক্ত বাউন্স করা বলে পুল করতে গিয়ে মিড উইকেটে ক্যাচ দেন কামিন্দু মেন্ডিস। ১৪ বলে ১৯ রান আসে তার ব্যাট থেকে।
এরপর নতুন সঙ্গী সাদিরা সামারাবিক্রমাকে নিয়ে দলকে এগিয়ে নেন কুশল মেন্ডিস। পাওয়ার প্লের ছয় ওভারে ৪৫ রান করে শ্রীলঙ্কা। ১১তম ওভারে রিশাদ হোসেন ১৮ ও এর পরের ওভারে শরিফুল ইসলাম ২১ রান হজম করেন। বাংলাদেশকে আবার ম্যাচে ফেরান রিশাদই।
তার বলে লং অফে কুশল মেন্ডিসের ক্যাচ নেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ৬ চার ও ৩ ছক্কায় ৩৬ বলে ৫৯ রান করে ফিরে যান তিনি। ভাঙে সামারাবিক্রমার সঙ্গে ৬১ বলে ৯৬ রানের জুটি । জুটি ভাঙার পরের ওভারে এসে কোনো বাউন্ডারি হজম না করে ৬ রান দেন মাহেদী।
কিন্তু পরের চার ওভারে ৬৪ রান হজম করেন বাংলাদেশের বোলাররা। এর মধ্যে শেষ ওভারে ২৪ রান দেন মোস্তাফিজুর রহমান। ৪৮ বলে ৬১ রান করে সামারাবিক্রমা ও আসালঙ্কা অপরাজিত থাকেন ২১ বলে ৪৪ রানে।
বড় রান তাড়া করতে নেমে শুরুটা খুবই বাজে হয় বাংলাদেশের। ৩০ রানের ভেতর প্রথম তিন উইকেট হারায় স্বাগতিকরা। শুরুটা হয় লিটন দাসকে দিয়ে। ইনিংসের তৃতীয় বলে কোনো রান করার আগেই ফ্লিক করতে গিয়ে উইকেটরক্ষকের হাতে ক্যাচ দেন তিনি। বড় রান করতে পারেননি সৌম্য সরকারও। ১১ বলে ১২ রান করেন তিনি।
উইকেটে এসে প্রথম বলেই ছক্কা হাঁকান তাওহীদ হৃদয়। কিন্তু তিনিও বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি উইকেটে। প্রথম উইকেট নেওয়া অ্যাঞ্জেলা ম্যাথিউসের বলেই এগিয়ে এসে ক্রস ব্যাট শট খেলতে গিয়ে ক্যাচ দেন উইকেটের পেছনে। রিভিউ নিলেও তাতে সফল হতে পারেননি ৫ বলে ৮ রান করা এই ব্যাটার। হৃদয় আউট হওয়ার পর ক্রিজে আসেন ১৮ মাস পর বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি একাদশে ফেরা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
তিনিও প্রথম বলেই ছক্কা হাঁকান, পরেও নিজের ইনিংসটাকে স্মরণীয়ই করে রাখেন মাহমুদউল্লাহ। যদিও তিন ফরম্যাটে অধিনায়কত্ব পাওয়ার পর প্রথম ম্যাচে ব্যাট হাতে সময়টা ভালো কাটেনি শান্তর (২২ বলে ২০)। কিন্তু মাহমুদউল্লাহ বাউন্ডারি হাঁকান একের পর এক।
হাফ সেঞ্চুরি ছোঁয়ার পর বেশিক্ষণ অবশ্য উইকেটে থাকতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ। লং অনে ক্যাচ দেন মাহিশ থিকশানার বলে। দুই চার ও ৪ ছক্কায় ৩১ বলে ৫৪ রান করে আউট হন মাহমুদউল্লাহ। তার বিদায়ের পর বাংলাদেশের জয়ের স্বপ্ন হয়ে যায় ফ্যাকাশে।
গত এশিয়ান গেমসে তিনটি টি-টোয়েন্টি খেলেছিলেন জাকের। তবে ওখানে ছিলেন না মূল দলের অনেকেই। বড় মঞ্চে সুযোগ পেয়ে আলো ছড়াতে ভুল করেননি তিনি। মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে ২৯ বলে ৪৭ রানের জুটিতে ১০ বলে ১১ রানের অবদান ছিল জাকেরের।
মাহমুদউল্লাহ আউট হওয়ার পর যেন পথ খুঁজে পান জাকের। পরের ওভারে দাসুন শানাকাকে দুই বলে হাঁকান দুটি ছক্কা। প্রায় প্রতি ওভারেই বাউন্ডারি হাঁকিয়ে রান তোলার গতির সঙ্গে পাল্লা দেন জাকের।
শেষ ওভারে গিয়ে বাংলাদেশের সমীকরণ দাঁড়ায় ১২ রান, কিন্তু শানাকার ওই ওভারের শুরুতে জাকের স্ট্রাইকে ছিলেন না। ফুল টস বলে মিড অফে ক্যাচ দেন রিশাদ হোসেন। স্ট্রাইকের জন্য অপেক্ষা বাড়ে জাকেরের। তাসকিন তাকে সেটি এনে দিলেও কিছু করতে পারেননি শেষ ওভারে গিয়ে।
লং অফের ওপর দিয়ে তুলে মারতে গিয়ে ক্যচ দেন জাকের। ৪টি চার ও ৬টি ছক্কার অবিশ্বাস্য ইনিংসে ৩৪ বলে ৬৮ রান করেন তিনি। চতুর্থ বলে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে আশা দেখিয়েছিলেন শরিফুল ইসলাম। কিন্তু পরের দুই বলে তিনি ও তাসকিন দুই রানের বেশি করতে পারেননি। অবিশ্বাস্য ইনিংসেও শেষ অবধি জয়ের নায়ক হওয়া হয়নি জাকেরের।