ডেস্ক রিপোর্ট: ত্বরিকা-ই-মাইজভাণ্ডারীয়া’র প্রতিষ্ঠাতা গাউসুল আযম হযরত মাওলানা শাহ্সুফি সৈয়দ আহমদ উল্লাহ্ মাইজভাণ্ডারী (ক.) এর ১১৮তম ওরশ শরিফ উদযাপনের অংশ হিসেবে তাঁর অসাম্প্রদায়িক মতাদর্শ প্রতিপালনে মাইজভাণ্ডারী একাডেমির আয়োজনে ১১তম আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি সম্মিলন-২০২৪ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে এই আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি সম্মিলন অনুষ্ঠিত হয়।
এবারের সম্মিলনের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল- ‘মানবাধিকার ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় ধর্মীয় অনুশাসন’। সাম্প্রদায়িক ঐক্য, শান্তি ও সম্প্রীতি রক্ষায় একই মঞ্চে বিভিন্ন ধর্মের ধর্মগুরুরা উপস্থিত হয়ে ঐক্যের ডাক দিয়েছেন।
হাতে হাত রেখে বলেছেন, একসাথে ভবিষ্যত পথচলার কথা এবং এ ধরনের আয়োজনের মাধ্যমে পরষ্পরের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ ও মৈত্রির বন্ধন আরো দৃঢ় করার।
তারা বলেছেন, পৃথিবীর সব ধর্মই পারস্পরিক ভালোবাসা, সহানুভূতিশীল হওয়া, অন্যের ধর্মকে ঘৃণা না করা ও আত্মসংযমী হওয়ার শিক্ষা দেয়। পৃথিবীতে যতজন মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে জন্মেছেন, তাঁরা সকলেই অদম্য কাজের ছাপ রেখে গিয়েছেন। অগণিত মানুষ তাঁদের দেখানো পথ অনুসরণ করেছেন, অনুপ্রাণিত হয়েছেন। আধ্যাত্মিক যুক্তি ও অভ্যন্তরীণ শান্তির জীবনযাপনের মূলমন্ত্র শিখিয়েছেন তাঁরা।
‘পৃথিবীর বুকে বর্তমানে মানুষে মানুষে বহুমুখি বিভাজনের সূত্র ধরে অনৈক্য, পারষ্পরিক দ্বন্দ্ব-কোন্দল, হিংসা বিদ্বেষ, অসহিষ্ণুতা বেড়ে যাওয়ার কারণে আমরা আমাদের জন্মগত ঐক্য সূত্র ভুলে যেতে বসেছি। পরিহার করে চলেছি মানুষ সৃষ্টি সম্পর্কে মহান সৃষ্টিকর্তার বিশেষ অনুকম্পা। এ কারণে মানুষ পৃথিবীতে বিচরণকালে বিভেদ প্রিয় সংঘর্ষমুখী। মানবজাতির এই ধরনের কলহ প্রবণতা স্রষ্টার নির্দেশিত নীতি ও কৌশলের সুষ্পষ্ট সীমা লংঘন। বেদ-গীতা, বাইবেল, কোরানে আন্তঃধর্মীয় সংলাপের কথা বলা আছে। তাছাড়া পৃথিবীর অনেক দেশের বড় বড় দার্শনিকরাও এর গুরুত্ব দেখিয়েছেন। ধর্মান্ধতা ও সাম্প্রদায়িকতা দূর করতে যুবসমাজের মধ্যে আন্তঃধর্মীয় শিক্ষার ওপর জোর দিতে হবে। একই সঙ্গে আমাদের সবাইকে ধর্মীয় সম্প্রীতি রক্ষা করে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে’।
১১তম আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি সম্মিলনে সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের অধ্যাপক এবং সম্মিলনের আহ্বায়ক প্রফেসর ড. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দীন। প্রধান অতিথি ছিলেন ‘রিলিজিয়ান্স ফর পিস-এশিয়া বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের সভাপতি প্রিন্সিপাল সুকোমল বড়ুয়া।
আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি সম্মিলন কমিটির সদস্য বিপ্লব পার্থের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক উপমন্ত্রী মনিস্বপন দেওয়ান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের অধ্যাপক ড.মুহাম্মদ ফরিদুদ্দিন, শ্রীশ্রী রাধামাধব মন্দির ও গৌর নিতাই আশ্রমের সাধারণ সম্পাদক তারণনিত্যানন্দ দাস ব্রহ্মচারী, ঢাকা মহাধর্ম প্রদেশের আর্চবিশপ বিজয় এন ডি ক্রুজ ওএমআই, চট্টগ্রাম গুরুদুয়ারা শিখ টেম্পল এস্টেটের সাধারণ সম্পাদক ডা. মৃত্যুঞ্জয় কুমার রায়, বাহাই ধর্মের সদস্য রহীম সরওয়ার, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন আর্চবিশপ লরেন্স সুব্রত হাওলাদার সিএসসি। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন শাহানশাহ হযরত সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী (ক.) ট্রাস্টের সচিব অধ্যাপক এ ওয়াই এম জাফর। ম্যানেজিং ট্রাস্টির বাণী পাঠ করেন মাইজভাণ্ডারী একাডেমির সদস্য সচিব অধ্যাপক জহুর উল আলম। ঘোষণাপত্র পাঠ করেন আয়োজক কমিটির সদস্য দিলীপ বড়ুয়া।
অনুষ্ঠানে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন মাদরাসা-এ-গাউসুল আযম মাইজভাণ্ডারীর শিক্ষার্থী হাফেজ মো. জোনাইদ হাসান, গীতা থেকে পাঠ করেন বাগীশিক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াশীষ চক্রবর্তী, ত্রিপিটক পাঠ করেন ভদন্ত বোদিমিত্র মহাস্থবির, বাইবেল পাঠ করেন পাস্টর বানবা গোমেজ, গুরুগ্রন্থ শাহেব থেকে পাঠ করেন চকবাজার শিখ টেম্পল এস্টেটের সিং বীর সিং, কিতাব ই আকদাস থেকে পাঠ করেন উচাই ওয়াং মারমা।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি সম্মিলন কমিটির সদস্য সচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী মাস্টার, সদস্য মোহাম্মদ ইউসুফ আলী, ডা. বরুন কুমার আচার্য বলাই, এমরোজ গোমেজ, আবু সালেহ সুমন, শ্যামল নন্দী, সৈয়দ মুহাম্মদ শরফ উদ্দীন রাসেল, মো. রায়হান উদ্দিন, রোকানুজ্জামান টুটুল।