চট্টবাণী: ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামী মাস্টার দা সূর্যসেনের ৯০তম ফাঁসি দিবস উপলক্ষে মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম-বৃহত্তর চট্টগ্রামের উদ্যোগে স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) বিকেলে সংগঠনের সভাপতি আবদুল মালেক খানের সভাপতিত্বে নগরের আন্দরকিল্লাস্থ অস্থায়ী কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক বেদারুল আলম চৌধুরী বেদার। প্রধান বক্তা ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক নূরে আলম সিদ্দিকী।
এছাড়াও বক্তব্য দেন সহ সভাপতি কামাল উদ্দিন, রাজীব চন্দ, আশেক মাহমুদ মামুন, যুগ্ম সম্পাদক ইমরান মুন্না, মুস্তাফিজুর রহমান বিপ্লব, মাহি আল জিসা, ইলিয়াস হায়দার, সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য নবী হোসেন সালাউদ্দিন, এম এ খালেক, রায়হান উদ্দিন, এস এম রাফি, খোরশেদ আলম হিরু, কোহিনুর আকতার মুন্নী, সুমন দাশ প্রমুখ।
সভায় বক্তারা বলেন, বাঙালি জাতির স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে শহীদ সূর্যসেন অমর অক্ষয় নাম। অবিভক্ত বাংলার মুক্তির বিপ্লবের ইতিহাসে আজও তিনি মৃত্যুঞ্জয়ী বীর। স্বাধীনতা অর্জনে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করা এবং স্বাধীনতার জন্য অন্যদের সংগঠিত করে স্বাধীনতার জন্য সশস্ত্র প্রতিরোধের ইতিহাসে অনন্য নাম সূর্য সেন। ১৯৩৪ সালের ১২ জানুয়ারি দিবাগত রাত ১২টা ১মিনিটে ব্রিটিশ শাসকেরা যাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছিল। ঐ সময় জেল গেটের বাইরে শহীদ সূর্য সেনের সহযোদ্ধারা অপেক্ষা করছিলেন, তাদের প্রিয় সহকর্মী, নেতাকে স্যালুটের মাধ্যমে বিদায় জানাবেন। তাকে সামনে রেখে স্বাধীনতার জন্য আরেকবার জীবন উৎসর্গ করার শপথ নেবেন। কিন্তু ব্রিটিশ শাসকেরা জীবিত সূর্য সেনকে যেমন ভয় পেত, তেমনি ভয় পেত সূর্য সেনের মৃতদেহকেও। জানা যায়, লোহার খাঁচায় ভরে সমুদ্রে ডুবিয়ে দেওয়া হলেও মানুষের স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা দমাতে পারেনি।
বক্তারা আরও বলেন, ২০০ বছরের ব্রিটিশবিরোধী শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে নানা সংগ্রাম পরিচালিত হয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো ১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল চট্টগ্রামের যুব বিদ্রোহ। মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে সংগঠিত এই যুব বিদ্রোহের মাধ্যমে ব্রিটিশ বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে চট্টগ্রামকে তিনদিনের জন্য স্বাধীন করে রাখা হয়েছিল। এটি ইতিহাসের এক অনন্য ঘটনা। ঐ সময় চট্টগ্রামের ব্রিটিশ শাসক আর বণিকরা আশ্রয় নিয়েছিল সমুদ্রে। সূর্য সেন বাহিনী অল্প অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে ব্রিটিশ বাহিনীকে পরাজিত করতে পারলেও পরবর্তীতে বিপুল বাহিনী ও ব্যাপক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে নিষ্ঠুরভাবে এই বিদ্রোহ দমনের পথ বেছে নেয় ব্রিটিশ শাসকেরা। তাইতো দেখা যায় আত্মগোপনে থাকা অবস্থায়ও ব্রিটিশ বাহিনীর সাথে যুদ্ধে জীবন দিতে হয় অসংখ্য বিপ্লবীদের। পরিকল্পনা অনুযায়ী বীরকন্যা প্রীতিলতার নেতৃত্বে ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ করে সফল হলেও বীরকন্যা প্রীতিলতাসহ অনেকেই জীবনে উৎসর্গ করতে হয়। এসব সংগ্রামের পথ ধরেই সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর কালজয়ী নেতৃত্বে ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জিত হয়।