চট্টবাণী: জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হলে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ইশতেহার বাস্তবায়নে জীবন শক্তি দিয়ে অবিচল থাকার অঙ্গীকার করেছেন চট্টগ্রাম-১০ আসনে নৌকার প্রার্থী মহিউদ্দিন বাচ্চু।
মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ অঙ্গীকারের কথা জানান।
তিনি বলেন, শৈশব থেকে আমি জনকল্যাণে সর্ব্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে অভ্যস্ত। ৪২ বছর ধরে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন কর্মী হিসেবে জনকল্যাণমূলক কাজে সম্পৃক্ত আছি।
অঙ্গীকার করছি, চট্টগ্রামকে আধুনিক, স্মার্ট নগরে রূপ দিতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার দক্ষ-অভিজ্ঞ ব্যক্তি এবং জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয় ও অংশগ্রহণ নিশ্চিতে ভূমিকা রাখব। ভোটের মাঠে থাকা সব প্রার্থীকেই প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করি। কে কার প্রতিদ্বন্দ্বী সেটা জনগণের ভোটেই প্রমাণ হবে।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, তিনি (সাবেক মেয়র মনজুর আলম) সিটি মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তা নিয়ে জনমনে ক্ষোভ আছে। আমাদের নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীও ১৭ বছর মেয়র ছিলেন। তিনি মানুষের হৃদয়ে আজও অমলিন হয়ে আছেন। আর এক-এগারোর সময়ে উনার (মনজুর আলম) যে ভূমিকা, সেটা বলতে চাইনি। আপনি প্রশ্ন করেছেন বলে বলতে হলো। উনার সেই ভূমিকা চট্টগ্রামের সব শ্রেণিপেশার মানুষের হৃদয়ে বেদনার দাগ ফেলে গেছে।
আরেক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন উপ-নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল খুবই কম। এবার ভোটার উপস্থিতি কতটা বাড়বে এবং কাকে তিনি মূল প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করেন? জবাবে মহিউদ্দিন বাচ্চু বলেন, আমি সব প্রার্থীকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করি। জনগণ ভোট দিয়ে প্রমাণ করবে কে কার প্রতিদ্বন্দ্বী। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সমীক্ষায় দেখা গেছে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ দেশগুলোতে ভোটার উপস্থিতি খুব বেশি হয় না।
মহিউদ্দিন বাচ্চু বলেন, আমাদের শ্রদ্ধেয় নেতা ডা. আফসারুল আমীনের মৃত্যুর পর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নেত্রী আমাকে মনোনয়ন দিয়েছিলেন। আমি নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত হয়েছি। এবার আবারও নেত্রী ও দল আমাকে চট্টগ্রাম-১০ আসনে মনোনয়ন দিয়েছেন। মাত্র কয়েকমাস আগে নির্বাচিত হওয়ার পর এলাকার বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করে আমি সমাধানের উপায়সহ জাতীয় সংসদে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে উপস্থাপন করেছি। নিজ এলাকাতেও সমস্যা সমাধানে সচেষ্ট থেকেছি। আমার সংসদীয় আসনের মানুষের কাছে আমার অনেক দায়বদ্ধতা আছে।
রোববার (৭ জানুয়ারি) কেন্দ্রে এসে নির্ভয়ে ভোটারদের ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বাচ্চু বলেন, চট্টগ্রামের মানুষের কল্যাণে অব্যাহত আত্মনিয়োগে আমি সংকল্পবদ্ধ। বিগত দিনগুলোর মতো জনস্বার্থে সবসময় একজন সেবকের ভূমিকায় সক্রিয় থাকব। আমার উপ-নির্বাচন ছিল একাদশ জাতীয় সংসদের একদম শেষ পর্যায়ে, তাই ভোটার কম ছিল। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন দেশের ভাগ্য নির্ধারণের ভোট, এবার ভোটাররা সবাই ভোটকেন্দ্রে হাজির হবেন।
আরেক প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী ফরিদ মাহমুদের করা ব্যানার-পোস্টার ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একজন কর্মী। আমার নেত্রী ও দল ঘোষণা করেছে অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে যেন নির্বাচন হয়। আমি এর ব্যত্যয় ঘটাতে পারি না।
তিনি যে অভিযোগ করেছন তা আমি জ্ঞাত নই। আমাদের আসন এমন একটি নির্বাচনী এলাকা যেখানে এখন পর্যন্ত কোনো প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যেও কোনো বাগবিতণ্ডা হয়নি। এখনো কোনো অভিযোগ আমরা সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী কর্তৃপক্ষের কাছ থেকেও পাইনি।
কয়েকজন ওয়ার্ড কাউন্সিলরের অবস্থান ও অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে বাচ্চু বলেন, কারো নিজস্ব মতামত দেওয়ার অধিকার আছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হয়তো নেতৃবৃন্দের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য কিছু লিখেছেন কেউ। সে অনুযায়ী মহানগরের নেতৃবৃন্দ ব্যবস্থা নিলে হয়তো উনি অবস্থান পরিবর্তন করবেন।
নগরের হালিশহর, ডবলমুরিং, খুলশী, পাহাড়তলী, আকবর শাহ ও পাঁচলাইশের একাংশ নিয়ে চট্টগ্রাম-১০ সংসদীয় আসন। মোট ওয়ার্ড আটটি- শুলকবহর, দক্ষিণ কাট্টলী, সরাইপাড়া, পাহাড়তলী, লালখান বাজার, উত্তর আগ্রাবাদ, রামপুর এবং উত্তর হালিশহর। মোট ভোটার চার লাখ ৬৯ হাজার ২৪৬। তিনবারের সংসদ সদস্য আফছারুল আমীনের মৃত্যুর পর বিদায়ী বছরের ৩০ জুলাই এ আসনে অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে সংসদ সদস্য হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মহিউদ্দিন বাচ্চু।
মতবনিমিয় সভায় বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, সহ সভাপতি নঈম উদ্দিন চৌধুরী, উপদেষ্টা একেএম বেলায়েত হোসেন, চট্টগ্রাম-১০ নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক বদিউল আলম, সদস্যসচিব শফিকুল ইসলাম ফারুক, কৃষি বিষয়ক সম্পাদক আহমেদুর রহমান ছিদ্দিকী, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক মো. হোসেন, যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক দিদারুল আলম চৌধুরী, নির্বাহী সদস্য সৈয়দ আমিনুল হক, সাইফুদ্দিন খালেদ বাহার, বখতিয়ার উদ্দিন খান ,বেলাল আহমেদ প্রমুখ।