চট্টবাণী : ভোটারের তথ্য গরমিল, সেবা সংস্থার বিল বকেয়া, আয়করের রিটার্ন দাখিল না করা এবং ঋণ খেলাপিসহ বিভিন্ন অভিযোগে চট্টগ্রামের ১৬টি আসনের ৩২ জন প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। এর মধ্যে ১৯ জন স্বতন্ত্র এবং ১৩ জন বিভিন্ন দলের প্রার্থী রয়েছেন।
বাকি ১১৬ জনের জনের মনোনয়ন বৈধ হয়েছে।
সোমবার (৪ ডিসেম্বর) ও রোববার (৩ ডিসেম্বর) দুই দিন ব্যাপি মনোনয়ন যাচাই বাছাইয়ে এসব প্রার্থীদের মনোনয়ন বাতিল হয়।
চট্টগ্রামে বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল ইসলাম ৬টি আসনের এবং জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান ১০টি আসনের রিটানিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন।
দুই দিনে দুই রিটানিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশন কার্যালয়ে চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড), চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) এবং চট্টগ্রাম-৮ (চট্টগ্রাম মেট্রো আংশিক-বোয়ালখালী), চট্টগ্রাম-৯ (কোতয়ালী), চট্টগ্রাম-১০ (হালিশহর, পাহাড়তলী, ডবলমুরিং, খুলশী) চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর) আসনের মনোনয়ন যাচাই করা হয়। এছাড়া জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে চট্টগ্রাম-১ (মীরসরাই), চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি), চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ), চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান), চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া), চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া), চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা), চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ), চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) এবং চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে মনোনয়ন যাচাই করা হয়।
মনোনয়ন বাতিল হওয়া প্রার্থীরা হলেন-
চট্টগ্রাম-১ (মীরসরাই): আসনে মোট ৮ জন প্রার্থী মনোনয়ন দাখিল করেন। এর মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনের মনোনয়ন বাতিল হয়। এক শতাংশ ভোটারের তথ্যে গরমিল থাকায় এ প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল করা হয়।
চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি): এ আসনে মোট ১২ জন প্রার্থী তাদের মনোনয়ন দাখিল করেন। এর মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম নওশের আলী, মোহাম্মদ শাহজাহান, রিয়াজ উদ্দিনের মনোনয়ন বাতিল করে রিটানিং কর্মকর্তা। সকলের মনোনয়নের সঙ্গে জমা দেওয়া ১ শতাংশ ভোটারের তথ্যে গরমিল পাওয়া যায়।
চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ): এ আসনে ১০ জন প্রার্থী তাদের মনোনয়ন দাখিল করেন। এর মধ্যে জাকের পার্টির প্রার্থী নিজাম উদ্দিন নাছির ও বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের আমিন রসূল নামে দুই প্রার্থীর মনোনয়নও বাতিল হয়। ভোটারের তথ্যে গরমিলের অভিযোগে তাদের মনোনয়ন বাতিল হয় বলে জানান রিটানিং কর্মকর্তা।
চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড): এ আসনে ৯ জন প্রার্থীর মনোনয়ন জমা দেন। এর মধ্যে দুই জন স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ ৪ জনের মনোনয়ন বাতিল হয়। দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ সালাউদ্দিন ও মোহম্মদ ইমরান জমা দেওয়া মনোনয়নে ভোটার তালিকার ১ শতাংশ ভোটারের তথ্যে গরমিল পাওয়া গেছে। এছাড়া দিদারুল আলম আওয়ামী লীগের প্রার্থী উল্লেখ করলেও দলীয় কোনো প্রমাণ দিতে পারেননি। অন্যদিকে আয়কর রিটার্ন না দেওয়ায় বিএনএফের আখতার হোসেন বাতিল করা হয়।
চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী): এ আসনে ৮ প্রার্থী তাদের মনোনয়ন দাখিল করেন। এদের মধ্যে ৬ জনের মনোনয়ন বৈধ হয়। ২ জনের মনোনয়ন বাতিল করা হয়। এ আসনে দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী নাছির হায়দার চৌধুরী, মোহাম্মদ শাহজাহান মনোনয়নপত্রে ভোটার-সমর্থকদের ভুল তথ্য দেওয়া মনোনয়ন বাতিল হয়।
চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান): এ আসনে ৫ জন মনোনয়ন দাখিল করেন। এর মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী শফিউল আজমের মনোনয়ন বাতিল হয় ভোটার সমর্থকের তথ্য সঠিকভাবে না দেওয়ার অভিযোগে।
চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া): এ আসনে ৭ জন প্রার্থী মনোনয়ন দাখিল করেন। একজন প্রার্থীর দাখিলকৃত মনোনয়নের সঙ্গে কাগজপত্র সরবরাহ না করায় সাময়িক স্থগিত রাখলেও পরে মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করা হয়।
চট্টগ্রাম-৮ (চট্টগ্রাম মেট্রো আংশিক-বোয়ালখালী): এ আসনে ১৩ জন প্রার্থী তাদের মনোনয়ন দাখিল করেন। এতে ৫ জন প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল করা হয়। এর মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক সিডিএ চেয়ারম্যান আব্দুর ছালামের মনোনয়ন বাতিল হয়। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাদুল আলম বাচ্চু, বিজয় কুমারের ১ শতাংশ ভোটার সমর্থকের তালিকায় গরমিল খুঁজে পায় নির্বাচন কমিশন। এছাড়া বাংলাদেশ কংগ্রেসের মহিবুর রহমান বুলবুল ঋণ খেলাপি হওয়ায় এবং আরেক প্রার্থী মঞ্জুর হোসেন বাদল হলফনামাসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা না দেওয়ায় মনোনয়নও বাতিল হয়।
চট্টগ্রাম-৯ (কোতয়ালী): এ আসনে ৭ জন প্রার্থী তাদের মনোনয়ন জমা দেন। এ আসনেও কারও মনোনয়ন বাতিল হয়নি বলে জানিয়েছেন রিটানিং কর্মকর্তা।
চট্টগ্রাম-১০ (হালিশহর, পাহাড়তলী, ডবলমুরিং, খুলশী): এ আসনে ১২ জন প্রার্থী মনোনয়ন দাখিল করেন। এর মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও নগর যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদ মাহমুদের মনোনয়নপত্র বাতিল করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এক শতাংশ ভোটারের নাম ও স্বাক্ষর জমা দিতে হয় মনোনয়নপত্রের সঙ্গে। এর মধ্যে দ্বৈবচয়নের ভিত্তিতে ১০ ভোটার যাচাই করা হয়। সেখানে তিনজনকে শনাক্ত করা যায়নি বলে তার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। এ ছাড়া একই অভিযোগে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. ওসমান গনি ও ফয়সাল আমীনের মনোনয়ন বাতিল হয়। অন্যদিকে, সমর্থনকারীর তথ্য না থাকায় বিএনএফের মঞ্জুরুল ইসলামের মনোনয়নপত্র বাতিল হয় এ দিন।
চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর): এ আসনে ৯ জন প্রার্থী তাদের মনোনয়ন দাখিল করেন। এরমধ্যে রেখা আলম নামে এক স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হয়। ১ শতাংশ ভোটার গরমিলের অভিযোগে এ প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হয়েছে বলে জানিয়েছেন রিটানিং কর্মকর্তা।
চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া): এ আসনে ১০ প্রার্থী তাদের মনোনয়ন দাখিল করেন। এর মধ্যে তিন প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল করা হয়। ১ শতাংশ ভোটারের তথ্যে গরমিলের অভিযোগে স্বতন্ত্র প্রার্থী ইলিয়াস মিয়া ও গোলাম কিবরিয়া চৌধুরীর মনোনয়ন বাতিল করা হয়। বিদ্যুৎ বিল বাকি থাকায় বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের প্রার্থী এম এ মতিনের মনোনয়ন বাতিল করা হয়।
চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা–কর্ণফুলী): এই আসনে মোট ৭ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এই আসনের রিটার্নিং অফিসার ও চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বাছাইকালে কোনো প্রার্থীর মনোনয়নপত্রে এবং হলফনামায় তথ্যে ত্রুটি পাননি।
চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ): এ আসনে ৮ প্রার্থীর মনোনয়ন জমা পড়ে। এর মধ্যে সবগুলো প্রার্থীর মনোনয়নে কোনো ত্রুটি না পাওয়ায় প্রার্থীদের বৈধ ঘোষণা করেন।
চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া): এ আসনে ৯ জন প্রার্থী তাদের মনোনয়ন দাখিল করেন। এর মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল মোতালেব ও ডা. আ ন ম মিনহাজুর রহমানের মনোনয়ন বাতিল করে রিটার্নিং কর্মকর্তা। দুই জনেরই ১ শতাংশ ভোটারের তথ্যে গরমিল পাওয়া যায়। আয়কর বিটার্ন দাখিল না করায় এনপিপির ফজলুল হকের মনোনয়ন বাতিল ঘোষণা করা হয়।
চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী): এ আসনে ১২ জন প্রার্থী মনোনয়ন দাখিল করেন। এর মধ্যে ঋণ খেলাপি হওয়ায় এনপিপির আশীষ কুমার শীল ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরীর মনোনয়ন বাতিল হয়। আয়কর রিটার্ন দাখিল না করায় ইসলামী ঐক্যজোটের মো. শফকত হোসাইন চাটগামী।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ও নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, গত দুই দিনে প্রার্থীদের মনোনয়ন যাচাই বাছাই প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। এতে যাদের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে তারা সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবেন।
প্রসঙ্গত, ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র বাছাই ১-৪ ডিসেম্বর, এবং ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে। প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে ১৮ ডিসেম্বর। নির্বাচনী প্রচারণা চলবে ১৮ ডিসেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত, নির্বাচনে ভোটগ্রহণ ৭ জানুয়ারি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামের ১৬টি সংসদীয় আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৬৩ লাখ ৯৬৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৩২ লাখ ৭৯ হাজার ৬২ জন এবং নারী ভোটার ৩০ লাখ ২১ হাজার ৯০২ জন।