মো: আরিফুল ইসলাম: লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি ইউনিয়নের পদুয়া রেঞ্জের ডলু বনবিট ও সাতগড় বন বিটের সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে পাহাড় ভেঙে পানি জমাট বেঁধে অবৈধভাবে উত্তোলন করা হচ্ছে হাজার-হাজার ফুট বালু।
স্থানীয়রা জানান, সাতগড় বন বিটের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের পাহাড় ভেঙে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে পাহাড় গুলোতে থাকা গাছ পড়ে যাচ্ছে- এর ফলে গাছ খেকোরা তা কেটে নিয়ে যায়। এভাবেই চললে অচিরেই চুনতি ইউনিয়নের প্রকৃতি সংরক্ষিত বনাঞ্চল শেষ হয়ে যাবে। বন বিভাগে না থাকবে গাছ, বালু দূরের কথা মাটিও থাকবে না।
সরকারি সংরক্ষিত বনের মাঝে প্রবাহিত ছরার পাশের অন্তত ৩০টি পাহাড় কেটে বালু উত্তোলন করছে বালু সন্ত্রাসীরা। এসব স্থানে ২০টির মত ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে একাধিক সিন্ডিকেট।
অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনকে ‘ম্যানেজড’ করে এসব অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। বালু খেকোরা স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় উপজেলা প্রশাসন ও বনবিভাগ তাদের বিরুদ্ধে কোন ধরণের ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ স্থানীয় গ্রামবাসীর। বালুু উত্তোলনের ফলে পরিবেশ পড়ছে হুমকির মুখে।
সরেজমিনে দেখা যায়, চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের চুনতি রেঞ্জের সাতগড় বনবিট ও পদুয়া রেঞ্জের ডলু বনবিটের আওতাধীন ঘোড়ামারা,করিম্মাকাটা,বদারবর ঘোনা,সাইটতালা ও লম্বাশিয়া এলাকায় সরকারি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের পাহাড়ের ছড়ায় ২০টির মতো ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।এখানে ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় শতাধিক পাহাড়ের মধ্যে ৫০টির মত পাহাড় ইতিমধ্যে বালুখেকোরা সাবাড় করে দিয়েছে। হাতি চলাচলের জন্য নির্ধারিত এসব পাহাড় বিলীন হয়ে যাওয়াই নিয়মিত চলার পথ হারিয়ে হাতিরা লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে। এতে ফসলের ক্ষতিসহ মানুষের প্রাণহানী ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে।তাই এসব এলাকার লোকজন চরম আতংক ও নিরাপত্তাহীনতায় দিনযাপন করছেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সংঘবদ্ধ পাহাড়খেকো সিন্ডিকেট সদস্যরা বনাঞ্চলের ভেতরে পাহাড়ে ও খালে অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার ঘনফুট বালু উত্তোলন করছে। পরে ট্রাক ও ডাম্পার ভর্তি করে ওই বালু পৌঁছে দেয় বিভিন্ন স্থানে। স্হানীয়দের অভিযোগ বালুখেকো সিন্ডিকেট বন বিভাগের কর্মকর্তা ও বন কর্মীদের মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ম্যানেজড করে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের কর্মকান্ড। এতে পরিবেশের হুমকির পাশাপাশি জীববৈচিত্র ও ধ্বংস হচ্ছে।
উপজেলা প্রশাসন এসে বালু জব্দ করলে একেক সময় একেক জন উপর মহলের ইশারায় বালু নিলামে কিনে নেন। ওই বালু বিক্রি ও উত্তোলন চলমান থাকার পর মেয়াদ শেষ হলেই উত্তেলিত বালু আবারও জব্দ করে উপজেলা প্রশাসন।
প্রসঙ্গত গত বছরের ২৬ নভেম্বর বালুখেকোদের বেপরোয়া ভাবে বালু উত্তোলনের ফলে এখানে একটি হাতি শাবক গর্তে পড়ে মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্হানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, আগের চেয়ে বেশি সংখ্যক ড্রেজার মেশিন বসিয়ে খালের পানি দিয়ে পাহাড় ভেঙ্গে বালু গিলে খাচ্ছে সিন্ডিকেট সদস্যরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বালু উত্তোলনের জন্য বসানো ড্রেজার মেশিনের কোনো বৈধ কাগজ পত্র নেই।
বালু উত্তোলনে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে,তারা হলেন আবু তাহের,কাইছার,শফি,সাজ্জাদ মিনহাজ,রিয়াজ,মামুন, ও ইসমাইল। এখানে শ্রমিক হিসেবে যারা কাজ করছে তাদের বেশির ভাগই রোহিঙ্গা। এসব শ্রমিকরা বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িত বলে ও স্হানীয়রা জানিয়েছেন।
বালু উত্তোলনকারি সিন্ডিকেটের প্রধান আবু তাহের আবু'র নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, বনবিভাগকে মাসিক চুক্তিতে ও প্রশাসনকে এককালিন টাকা দিতে হয়।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক প্রফেসর আব্দুল হক বলেন,এটি পরিবেশ ও জীববৈচিত্রের জন্য মারাত্বক ক্ষতি,এতে পাহাড়ের ভূ-প্রাকৃতিক ভারসাম্য মারাত্বকভাবে নষ্ট হচ্ছে।স্রোতস্বিনী ছড়াটি হাতিসহ নানাবিধ প্রজাতির বন্যপ্রাণীর জন্য বিপদজনক হয়ে পড়বে।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, পাহাড় ও পাহাড়ের ভেতর চলমান ছরা থেকে অনিয়ন্ত্রিত বালি তোলা হলে পাহাড় ধ্বসের শঙ্কা থাকে। এটি বনভূমির জন্য ক্ষতিকর। তাই কাউকে পাহাড় ও বনের ভেতর চলমান ছড়া থেকে বালি উত্তোলনের অনুমতি দেয়া হয় না। যারা এসব করছেন অচিরেই তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্হা নেবেন বলে ও জানিয়েছেন তিনি।