চট্টবাণী: বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ডাকা অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচিকে কেন্দ্র রাজধানীতে নাশকতাসহ যাত্রীবাহী বাসে অগ্নিসংযোগ করছে দুর্বৃত্তরা। একটি স্বার্থান্বেষী মহল এসব নাশকতা করে এসব হামলা ও নাশকতার মাধ্যমে নগরবাসীর জানমালের নিরাপত্তা ও নগরীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি করে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
তবে নাশকতা বন্ধে রাজধানীজুড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পর্যাপ্ত নিরাপত্তা রয়েছে৷ এরপরও দিনে-রাতে যাত্রাীবাহী বাসে অগ্নিসংযোগ বন্ধ করতে পারছে না।
গত ২৮ অক্টোবরের পর থেকে রাজধানীতে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে যাত্রীবাহী বাস ও সরকারি যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় বিভিন্ন সিসিটিভি ফুটেজ ও গণমাধ্যমে প্রচারিত ছবি, ভিডিও পর্যালোচনা করে নাশকতাকারীদের গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ৷ এরপরও রাজধানীতে যাত্রীবাহী বাসে অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনা ঘটছেই।
রাজধানীজুড়ে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়েও দুর্বৃত্তরা যাত্রীবাহী বাসে অগ্নিসংযোগ করে যাচ্ছে। এ অগ্নিসন্ত্রাস বন্ধে রোববার (১২ নভেস্বর) ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) সদরদপ্তরে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে অগ্নিসন্ত্রাস প্রতিরোধে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের প্রতি বেশ কিছু নির্দেশনা দেন ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান।
বৈঠকে উপস্থিত থাকা ডিএমপির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, বৈঠকে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে ১০টি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়নের জন্য পরিবহন মালিক শ্রমিকদের জোর অনুরোধ করেন ডিএমপি কমিশনার।
এসব নির্দেশনার মধ্যে বলা হয় রাজধানীর প্রতিটি স্টপেজগুলোতে বাসের ও যাত্রীদের ছবি তুলে রাখতে হবে। স্টপেজ ছাড়া কোনো যাত্রী উঠানামা করবে না৷ বাসে থাকা যাত্রীদের বাসের কনডাক্টর সচেতন করবেন। রাতে বিচ্ছিন্নভাবে বাস পার্কিং না করে কোনো উন্মুক্ত স্থানে একত্রে একাধিক বাস রেখে নিজস্ব প্রহরার মাধ্যমে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে।
ড্রাইভার ও হেলপার কখনই একই সঙ্গে বাস/পরিবহন রেখে খেতে বা বিশ্রামে যাবেন না। ইতিমধ্যে নাশকতাকারীর তথ্য প্রদানকারীর জন্য বিশেষ পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। হেলপার/অতিরিক্ত ব্যক্তি ছাড়া ড্রাইভারকে একা বাস/পরিবহন পরিচালনা করতে দেওয়া যাবে না।
রাতে বাসে বা পরিবহনের মধ্যে ঘুমানো যাবে না, অন্তত একজনের মাধ্যমে হলেও প্রহরার ব্যবস্থা করতে হবে। বাসের দুটো দরজা থাকলে পেছনের দরজা অবশ্যই বন্ধ রাখতে হবে। মালিকপক্ষ থেকে ড্রাইভার ও হেলপারদের অবশ্যই নিরাপত্তা সংক্রান্তে নির্দেশনা প্রদান করতে হবে এবং যাত্রীদের জন্য সর্তকর্তামূলক স্টিকার বাসে লাগিয়ে দিতে হবে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মিডিয়া সেলের তথ্য অনুযায়ী- বিএনপিসহ কয়েকটি দলের ঘোষিত ৪৮ ঘণ্টার অবরোধের দিন সকাল পর্যন্ত ১০ ঘণ্টায় ৯ যানবাহনে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। ১১ নভেম্বর শনিবার রাত ৮টা থেকে ১২ নভেম্বর সকাল ৬টা পর্যন্ত ৯টি যানবাহনে দুর্বৃত্তদের আগুন দেওয়ার সংবাদ পায় ফায়ার সার্ভিস।
এর মধ্যে রাজধানীতে সাতটি, গাজীপুরে একটি, বরিশাল বিভাগে একটি আগুনের ঘটনা ঘটেছে। আগুনে আটটি বাস, একটি পিকআপ পুড়েছে।
ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, রাজধানীর নাগরিকদের জান-মালের নিরাপত্তায় প্রত্যেকটি জায়গায় থানা পুলিশ, গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ টহল দিচ্ছে। মোটরসাইকেল পেট্রোলিংসহ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে চেকপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে৷ এরপরও সময় ও সুযোগ সন্ধানী কিছু নাশকতাকারী যাত্রীবেশে বাসে অগ্নিসংযোগ করছে৷ অগ্নিসংযোগের পর নাশকতাকারীরা কৌশল অবলম্বন করে আতঙ্কগ্রস্ত যাত্রীদের সঙ্গে বাস থেকে নেমে পালিয়ে যাচ্ছে৷
পুলিশ বলছে, নাশকতাকারীরা চোরাগোপ্তা হামলা করেই রাজধানীতে বিভিন্ন যাত্রীবাহী বাসে ও পরিত্যক্ত বাসে অগ্নিসংযোগ করছে। তবে যাত্রীবাহী বাসে অগ্নিসংযোগ রুখে দেওয়া শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একার পক্ষে সম্ভব নয়। এর জন্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ও নগরীর জনমানুষের একান্ত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।
নাশকতা ও অগ্নিসংযোগ বন্ধ করতে পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে৷ নাশকতাকারীরা যেখানেই পালিয়ে থাকুক না কেন তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনতে ডিএমপি কাজ করছে।
এদিকে, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী- গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহসমাবেশকে কেন্দ্র করে সহিংসতা ও নাশকতার অভিযোগে ১৪ দিনে রাজধানীজুড়ে ১ হাজার ৮১৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। গত ২৮ অক্টোবর ও পরবর্তী সহিংসতার ঘটনায় এখন পর্যন্ত ডিএমপির ৮ বিভাগে মোট ১৩১টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এদিকে র্যাবের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী- রোববার (১২ নভেম্বর) দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও নাশকতার ঘটনার সঙ্গে জড়িত সর্বমোট ২০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গত ২৮ অক্টোবর হামলা ও নাশকতাসহ পরে দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা ও নাশকতার সঙ্গে জড়িত সর্বমোট ৩৭০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
রাজধানীতে এত নিরাপত্তার পরেও যাত্রীবাহী বাসে কীভাবে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটছে- জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) ড. খ. মহিদ উদ্দিন বলেন, পরিপূর্ণ নিরাপত্তা বলতে আসলে পৃথিবীতে কিছু নেই। সব থেকে বেশি চ্যালেঞ্জিং হয় কিন্তু চোরাগোপ্তা কিংবা ছদ্মবেশে হামলা। এ সময়ে আমরা কিছু নমুনা দেখছি। তার পরেও ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) যত ধরনের নিরাপত্তা পদ্ধতি প্রয়োগ করা যায় সেটি কিন্তু আমরা করছি। কিন্তু যারা এ ধরনের চোরাগোপ্তা হামলা বা নাশকতা করছে, তারাও কিন্তু তাদের স্থান ও সময় পরিবর্তন করছে। তারা যে জিনিস দিয়ে নাশকতা করছে সেগুলোরও পরিবর্তন করার চেষ্টা করছে। এখন যারা যাত্রীবেশে চোরাগোপ্তা হামলা কিংবা নাশকতা করছে সেটি ১০০ ভাগ নির্মূল করা চ্যালেঞ্জিং। তবে আমাদের চেষ্টা আছে, এরই মধ্যে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, নাশকতা প্রতিরোধে আমরা আরও কিছু পদ্ধতি আজ থেকে নতুন করে শুরু করব। যাতে করে বাসে যাত্রীবেশে নাশকারীদের আসাটা আরও কঠিন হয়। আরও কিছু কাজ আমরা করব সেগুলো এখন বলতে চাচ্ছি না। কারণ নাশকারীরা কাউন্টার ইন্টেল হিসেবে ব্যবহার করতে চাই। এসব নির্মম নিষ্ঠুর কাজের জন্য দেশের প্রচলিত আইন খুবই কঠোর। নাশকতাকারীরা যদি এসব বন্ধ না করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনের সর্বোচ্চ কঠোর প্রয়োগ করা হবে।