চট্টবাণী ডেস্ক; : আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন (ইসি) আয়োজিত সংলাপের এসে দলগুলোর কেউ চেয়েছে সুষ্ঠু নির্বাচন। আর কেউ চেয়েছে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন।
শনিবার (৪ নভেম্বর) নির্বাচন ভবনে আয়োজিত সংলাপে ৪৪টি নিবন্ধিত দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। ইসির ডাকে সাড়া দেয়নি ১৮টি দল।
সকাল ও বিকেলে দুই দফায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগসহ ২৬টি দলের প্রতিনিধিরা দলীয় বক্তব্য তুলে ধরেছেন ইসির কাছে। তাদের বক্তব্য শুনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল আন্দোলনে থাকা দলগুলোকে নির্বাচনে অংশ নিয়ে সফল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে নিজেদের সামর্থ্য অত্যন্ত সীমিত উল্লেখ করে দলগুলোকে সংকট নিরসনের জন্য সংলাপে বসার পরামর্শ দিয়েছেন।
সংলাপ শেষে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মোমিনুল আমিন সাংবাদিকদের বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার শুধুমাত্র রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর দায়িত্ব চাপিয়েছেন। আমাদের বক্তব্য হলো- আকাশ থেকে হযরত জিব্রাইলের (আ:) নেতৃত্বে বিশাল ফেরেশতা বাহিনী যদি পাঠানো না হয়, তাহলে কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে সম্ভব নয় আওয়ামী লীগের ক্যাডার বাহিনীর মোকাবিলা করে পোলিং সেন্টারে টিকে থাকা। রাজনৈতিক ঐক্যমত্য সৃষ্টি হওয়া না পর্যন্ত এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার গঠন না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা স্থগিত রাখতে হবে।
তৃণমূল বিএনপি মহাসচিব তৈমুর আলম খন্দকার বলেছেন, আমরা ২০১৪ ও ১৮ সালের পুনরাবৃত্তি চাই না। আমরা চাই একটা সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনী পরিবেশ যা জনগণের মধ্যে আস্থা আনতে পারে। নির্বাচন কমিশন আমাদের যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছে আমরা সেগুলো পর্যবেক্ষণ করব। আমরা দেখব যে তারা বাস্তবিক পক্ষে জনগণকে আস্থায় আনার জন্য কী ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কর্নেল (অব.) ফারুক খান বলেন, বিএনপিকে নিয়ে নির্বাচন করতে হবে এমন কোনো কথা সংবিধানে লেখা নেই। বিএনপি যে কর্মসূচি দিচ্ছে সেটি রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়, এগুলো সহিংসতার কর্মসূচি। এগুলোকে টেরোরিস্ট অ্যাকশন বলা যেতে পারে।
সংবিধান সম্মতভাবেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের পরিবেশ সুষ্ঠু আছে। আগামীতে ভোট আরও সুষ্ঠু হবে, যখন ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আসতে নির্বাচন কমিশন উৎসাহ প্রদান করবে। বৈঠকে আমাদের যে ব্রিফ দেওয়া হয়েছে, তাতে মনে করি সংবিধান সম্মতভাবে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হবে।
ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ছৈয়দ বাহাদুর শাহ মোজাদ্দেদী বলেন, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো প্রহসনের নির্বাচন বাংলাদেশের মানুষ আর দেখতে চায় না। ২০১৮ সালের মতো নির্বাচন যদি আবারও হয়, তাহলে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করবে। অবাধ সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চাই।
বাংলাদেশ কংগ্রেসের চেয়ারম্যান কাজী রেজাউল হোসেন বলেন, ভোটকেন্দ্র দলীয় প্রভাবমুক্ত হতে হবে এবং প্রার্থী ও ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপন, ভোটকেন্দ্রে সাংবাদিকদের অবাধ যাতায়াতের ব্যবস্থা করা, মানুষকে ভোটকেন্দ্রে আনার জন্য মাইকিং করা, ডিসিদের পরিবর্তে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিতে হবে।
বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফন্টের (বিএনএফ) এস এম আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমরা বলেছি নির্বাচন কমিশনের কাজ হলো সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন করা। নির্বাচন হবে কমিশনের অধীনে, কোনো সরকারের অধীনে নয়।
ইনসানিয়াত বিপ্লব বাংলাদেশের মহাসচিব শেখ রায়হান রাহাবার বলেন, আমরা নির্বাচন কমিশনকে প্রস্তাব দিয়েছি নির্বাচনটি সেনাবাহিনীর সার্বিক তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হোক। বর্তমান সংসদ ভেঙে দেওয়া হোক। নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা হোক। ভোটকেন্দ্র গুলোতে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হোক। সাংবাদিকরা যাতে অবাধ ভাবে প্রতিটি কেন্দ্রে গিয়ে নির্বাচন সংগ্রহ করতে পারে সেই ধরনের ব্যবস্থা করা হোক।
বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির (বিএসপি) সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান কাজী মহসিন চৌধুরী বলেন, দেশে অবরোধ চলছে, রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা চলছে। নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য অনুযায়ী, বর্তমান পরিস্থিতি সুষ্ঠু নির্বাচনের অন্তরায়। আমরা নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ করেছি একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য।
গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. মিজানুর রহমান বলেন, দুর্ভাগ্য হলেও সত্য দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নেই। কিন্তু সংবিধান অনুযায়ী জনগণ সকল ক্ষমতার মালিক। ইসিকে আমরা বলেছি, এই নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ যেন তার ক্ষমতা ফিরে পায়।
জাতীয় পার্টির (জেপি) মহাসচিব শেখ শহিদুল ইসলাম বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হোক। সকল ভোটার যেন তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে, নির্বাচনের ঐতিহ্য ফিরে আসুক।
সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া বলেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন যেন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হয় এবং জনগণ যেন তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে, আমরা নির্বাচন কমিশনের সাথে সে বিষয়ে আলোচনা করেছি।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) স্থায়ী কমিটির সদস্য মোশাররফ হোসেন বলেন, নির্বাচন কমিশনের সংলাপে যে সমস্ত দল আসেনি সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে তাদেরকে নিজ উদ্যোগে নির্বাচনে আসা উচিত।
বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর (অব.) আব্দুল মান্নান বলেন, একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করার পাশাপাশি, সব দল যেন অংশগ্রহণ করে নির্বাচন কমিশনকে সেই দায়িত্বটাও নিতে হবে।
বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য মাহি বি চৌধুরী বলেন, নির্বাচন কমিশন সব দলকে নির্বাচনে আনার জন্য বাধ্য না। একটি গ্লাসে যদি অর্ধেক পানি থাকে তাহলে কেউ বলবে অর্ধেক ভরা, আর কেউ বলবে অর্ধেক খালি। ২৬ টি দল সংলাপে এসেছে, আর ১৮টি দল আসেনি। এটা দুঃখজনক।
তরিকত ফেডারেশনের যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ আলী ফারুকী বলেন, রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কি করবে না এটা রাজনৈতিক দলের সিদ্ধান্তের ব্যাপার। তাই আমরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সেনাবাহিনীকে স্ট্রাইকিং ফোর্স অথবা নিরাপত্তা রক্ষার জন্য ব্যবহার করার জন্য আবেদন জানিয়েছি।
নভেম্বরের প্রথমার্ধেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে চায় ইসি। আর ডিসেম্বরের শেষ থেকে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই ভোটগ্রহণের পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে সংস্থাটি। তাই শেষ সময়ে এসে দলগুলোর সঙ্গে নিজেদের মতামতের আদান-প্রদানের জন্যই আয়োজন করা হয় এই সংলাপের।
সংলাপে অংশ না নেওয়া ১৮টি দল-
লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, গণতন্ত্রী পার্টি, খেলাফত মসলিশ, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল) ও বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি।
এছাড়া বিএনপি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলও (জেএসডি) সংলাপে অংশ নেয়নি।