চট্টবাণী ডেস্ক: মহাসমাবেশ ও হরতাল (২৯ ও ২৯ অক্টোবর) কর্মসূচিতে পুলিশ এবং আওয়ামী লীগ ‘সন্ত্রাসীদের’ হামলায় ৪ জন নেতাকর্মী নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে বিএনপি। এই দুই দিনে ৬৯০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলেও অভিযোগ দলটির।
সোমবার (৩০ অক্টোবর) সন্ধ্যায় এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ দাবি করেন।
রিজভী বলেন, এই দুই দিনে হামলায় ৩ হাজারের বেশি নেতাকর্মী আহত হয়েছে। মোট মিথ্যা মামলার সংখ্যা ২০টি। আর মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে ২৩ থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত ৫ দিনে ২৬৪০ জনের বেশি নেতাকর্মী গ্রেপ্তারের পাশাপাশি মিথ্যা মামলা হয়েছে ৪৫টি।
রিজভী আরও দাবি করেন, গত ২৮ জুলাই থেকে ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত বিএনপি ঘোষিত কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সারা দেশের প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে ৪৪২টি, গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৫৩১০, মোট আসামি ৩১ হাজার ৯৮০ এবং হামলা চালিয়ে আহত করা হয়েছে ৫ হাজার ১১০ জনের বেশি নেতাকর্মীকে। বিচারবিভাগের রাজনীতিকরণ করে ১৫টি মিথ্যা মামলায় ৯ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ ও প্রায় ৯০ জনের অধিক নেতাকর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে। এই পরিসংখ্যান কেবল গত জুলাই থেকে আজ অবধি।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশস্থলে আগে থেকেই ইন্টারনেট সংযোগ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেয় আওয়ামী অপশক্তির আজ্ঞাবহ প্রশাসন। বিচ্ছিন্ন করে দেয় বিদ্যুৎ সংযোগ ও বক্তব্য প্রচারের মাইকের লাইন। বিনা উসকানিতে পুলিশ-র্যাব-বিজিবি, তথা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, একের পর এক টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড, লাঠি ও ব্যানেট চার্জ চালাতে থাকে। সরকারের পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক ছাত্রলীগ ও যুবলীগের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণে সংঘটিত এ যৌথ হামলায় নির্বিচারে আঘাত ও আহত করা হয় বিএনপির সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের।
রিজভী আরও বলেন, গত পরশু পুলিশি সহিংসতার এক পর্যায়ে কনস্টেবল আমিরুল ইসলাম পারভেজ নির্মমভাবে হত্যার শিকার হন। পুলিশের গুলিতে শহীদ হন ঢাকা দক্ষিণ যুবদলের স্থানীয় নেতা শামীম মিয়া। পুলিশের টিয়ার গ্যাসে আহত সাংবাদিক নেতা ও জাতীয় প্রেসক্লাবে সদস্য রফিক ভূইয়া বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রত্যক্ষ মদদে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে পূর্ব নিয়োজিত সন্ত্রাসীরা আক্রমণ করে বলে দাবি করেন রিজভী। তিনি বলেন, অত্যাধুনিক অস্ত্রসজ্জিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, যাদের মানবতা লঙ্ঘনের ইতিবৃত্ত আজ সারা বিশ্বে সমালোচিত। সেই পুলিশের অজস্র সদস্যের উপস্থিতিতে, দিনের আলোয় হাসপাতাল বা অ্যাম্বুলেন্স পুড়িয়েছে গুটিকয়েক বিএনপি কর্মী, ভেঙেছে পুলিশ বক্স— এই বয়ানটি আষাঢ়ে গল্প হিসেবে প্রত্যাখ্যান করেছে দেশবাসী তথা সংশ্লিষ্ট সব মহল।
রিজভীর অভিযোগ, রোববার হরতালের সমর্থনে মিছিল শেষে ফেরার সময় আদাবর থানা বিএনপির ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের স্থানীয় সরকার বিষয়ক সম্পাদক আবদুর রশিদকে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা পিটিয়ে এবং নির্মাণাধীন একটি ভবনের ছাদ থেকে ফেলে হত্যা করেছে। অন্যদিকে ফরিদপুরের বিএনপি নেতা এসএম ইকরাম হোসেন লাবলুর বাড়িতে পুলিশি তল্লাশির সময় দুর্ব্যবহার ও অনাচারে ভয়ে ও আতঙ্কে, হার্ট অ্যাটাক করে তার স্ত্রী মারা গেছেন।