মো:আরিফুল ইসলাম: চট্টগ্রামের দোহাজারি থেকে পৃথিবীর সর্ব বৃহত্তম সমুদ্র সৈকত পর্যটন নগরী কক্সবাজার পর্যন্ত নবনির্মিত রেলপথ দিয়ে আগামী ১৫ অক্টোবর পরীক্ষামূলক ট্রেন চলতে যাচ্ছে। এজন্য পটিয়া রেল স্টেশনে ট্রায়ালের জন্য রাখা হয়েছে ৬টি বগীর একটি ট্রেন। প্রতিটি বগীতে ৬০ জনের ধারণ ক্ষমতা রয়েছে। এ রেলপথ নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লক্ষ টাকা। দোহাজারি-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্প পরিচালক মফিজুর রহমান জানিয়েছে ১০১ কিলোমিটার রেললাইনের ৮৯ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সাতকানিয়া -লোহাগাড়া এলাকার দিকে প্রায় ৪ কিলোমিটার কাজ অসম্পূর্ণ রয়েছে। বাকী ৪ কিলোমিটার কা সম্পূর্ণ করার লক্ষ্যে কাজ চলমান রয়েছে।
ট্রায়াল রানের উদ্দেশ্যে আসা স্পেশাল ট্রেনটি বর্তমানে পটিয়া স্টেশনে অবস্থান করছে। ট্রায়ালের আগের দিন পটিয়া থেকে ট্রায়াল ট্রেনটি দোহাজারী নিয়ে রাখা হবে।
দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত নয়টি স্টেশন, ৩৯টি বড় সেতু ২২৩টি ছোট সেতু ও কালভার্ট, বিভিন্ন শ্রেণির ৯৬টি লেভেল ক্রসিং নির্মাণ করা হবে। লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি রেললাইন অংশের বন্য প্রাণী অভয়ারণ্যে হাতি চলাচলের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে আন্ডারপাস।
কালুরঘাট সেতু মেরামতের কাজ শুরুর আগে পটিয়া রেল স্টেশনে নিয়ে রাখা হয়েছে ট্রায়াল ট্রেনটি। উদ্বোধনের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে ছয়টি বগি ও একটি ২২শ সিরিজের ইঞ্জিন। কোরিয়া থেকে আনা এসব একেকটি বগিতে যাত্রী বসতে পারবে ৬০ জন।
জানা গেছে, ট্রেনটি চলাচলের সময় নির্ধারণ করতে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে দুটি প্রস্তাবনা রেল ভবনে পাঠানো হয়েছে। এরমধ্যে যেকেনো একটি ধরেই ট্রেন চলাচল শুরু হবে। প্রথম প্রস্তাবনায় রয়েছে ট্রেনটি ঢাকা থেকে রাত ৮টা ১৫ মিনিটে ছেড়ে ভোর সাড়ে ৫টায় কক্সবাজার স্টেশনে পৌঁছাবে। ফিরতি পথে সকাল ১০টায় কক্সবাজার স্টেশন থেকে ছেড়ে সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিটে ঢাকায় পৌঁছবে। দ্বিতীয় প্রস্তাবনায় ঢাকা থেকে রাত ১১টা ৫০ মিনিটে ছেড়ে সকাল সাড়ে ৯টায় কক্সবাজার স্টেশনে পৌঁছাবে। ফিরতি পথে দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটে কক্সবাজার থেকে ছেড়ে রাত ১০টায় ঢাকার কমলাপুর রেল স্টেশনে পৌঁছাবে। তবে ভাড়া এখনো নির্ধারণ করা হয়নি।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার পর্যন্ত মিটারগেজ রেলপথ নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের প্রায় সাত বছর পর ২০১৮ সালে ডুয়েল গেজ এবং সিঙ্গেল ট্র্যাক রেললাইন প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু হয়। প্রথমে প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে প্রকল্প প্রস্তাব সংশোধন করে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এতে অর্থায়ন করেছে এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও বাংলাদেশ সরকার। এটি সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত।
চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন ও বাংলাদেশের তমা কনস্ট্রাকশন কোম্পানি। অপরদিকে চকরিয়া থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন করপোরেশন (সিসিইসিসি) ও বাংলাদেশের ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড।
দোহাজারি-কক্সবাজার রেল যোগাযোগ কক্সবাজারে আরও বেশি দেশি-বিদেশি পর্যটকের আগমনের পাশাপাশি বহুমাত্রিক উন্নয়নের দ্বার উন্মোচিত হবে। এতে অর্থনীতির আমূল পরিবর্তন আসবে বলে প্রত্যাশা সাধারণ মানুষের।