অরুন নাথ : বরেণ্য রাজনীতিবিদ সর্বজন শ্রদ্দেয় ব্যক্তিত্ব ,মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, পরিছন্ন রাজনৈতক ব্যক্তিত্ব , স্বচ্ছ , প্রচারবিমুখ ও নির্মোহ উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত প্রখ্যাত কূটনীতিবিদ আতাউর রহমান খান খায়সারের ১৩তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ।
আতাউর রহমান কায়সার ২০১০ সালে ২৮ আগষ্ট সাংগঠনিক দায়িত্ব পালনে কক্সবাজার যাওয়ার সময় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়ায় সড়ক দূর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন। ২০১০ সালে ৯ অক্টোবর চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জননেতা আতাউর রহমান খান কায়সার শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। চট্টগ্রামের চন্দনপুরাস্থ বংশাল বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হন।
জননেতা আতাউর রহমান খান কায়সারের ১৩তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আজ ৯ অক্টোবর সকাল ১১ টায় চট্টগ্রাম উত্তর, দক্ষিণ ও মহানগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে চট্টগ্রাম মহানগরীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেশন সেন্টারে স্মরণসভা আয়োজন করা হয়েছে।
এছাড়া , মাসব্যাপী দোয়া মাহফিল, দু:স্থ ও এতিমদের মাঝে খাবার বিতরণ, শিক্ষার্থীদের মাঝে বই বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা ক্যাম্প ইত্যাদি কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি ১৯৬২ সালে শিক্ষা কমিশনের রিপোর্টের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় একশন কমিটির সদস্য হন ও নেতৃত্ব দেন। তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স ও এম এ ডিগ্রী লাভ করেন। চট্টগ্রামের তদানীন্তন চকবাজার ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৬৮ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যোগদান করেন আতাউর রহমান খান কায়সার। ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুথানে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেন তিনি। ১৯৭০ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে চট্টগ্রামের আনোয়ারা-বাঁশখালী-কুতুবদিয়া (জাতীয় আসন-১৫৯, নির্বাচনী আসন-চট্টগ্রাম -৭) থেকে পাকিস্থান জাতীয় পরিষদ সদস্য (এম এন এ) নির্ববাচিত হন। নির্বাচন পরবর্তী সময়ে বাঙালির অধিকার আদায়ে উত্তাল গণ আন্দোলন সংগঠিত করার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন তিনি।
অত:পর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের নেতৃত্বে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। মুজিবনগর সরকার কর্তৃক ১নং সেক্টরে রাাজনৈতিক সমণ্বয়কারীর দায়িত্ব পালন করেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে ১৯৭২ সালে গণপরিষদের সদস্য হিসেবে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সদস্য হিসেবে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত স্বাধীন বাংলাদেশ পুনগঠনকালীন ১৯৭২ থেকে ১৯৭৭ পর্যন্ত তিনি চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭৫ থেকে ১৯৮৭ বাঙালির জাতীয় জীবনের ক্রান্তিকালে আতাউর রহমান খান কায়সার সর্বদা রাজপথে থেকে আন্দোলন –সংগ্রামে সম্পৃক্ত ছিলেন, ফলস্বরূপ ওই সময়ে দুইবার গ্রেফতার হয়ে এগারো মাস কারাভোগ করেন। তৎকালীন সমারিক শাসক দ্বারা বিভিন্ন সময় নির্যাতনের শিকার হন তিনি। আশির দশকে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ করেন। ১৯৮৭ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক নির্বাচিত হন তিনি। ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রামে সংঘটিত পরিকল্পিত হত্যাকান্ডের কলংকিত ঘটনায় পুলিশের গুলিতে আন্তত ২৪ জন নিহত হন, আহত হন দুই শতাধিক নেতা-কর্মী। সেদিন জননেত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে আতাউর রহমান খান কারয়সারও আহন হন।
১৯৯১ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ঘোষনাপত্রের চূড়ান্ত খসড়া এবং ১৯৯১-১৯৯২ সালে আওয়ামীগের নতুন অর্থনৈতিক পরিকল্পনার কসড়া প্রণয়নে ওতোপ্রতভাবে জড়িত ছিলেন তিনি। ১৯৯৬ সালে রাশিয়ার রাষ্ট্রদ্রত হিসেবে অত্যন্ত দক্ষতা ও সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করেন আতাউর রহমান খান কায়সার। ২০০২ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নির্বাচিত হয়ে আমৃত্যু এই পদে সুনামের সাথে কাজ করে গেছেন তিনি।
জরুরি অবস্থা জারির পর এক এগারোর সঙ্কটময় সময়ে দৃঢচেতা ও জননেত্রী শেখ হাসিনার অকুতোভয় সৈনিক আতাউর রহমান খান কায়সার সংস্কারপন্থীদের বিরুদ্ধে সাহসী ভূমিকায় অবর্তীন হয়ে রাজপথ থেকে শুরু করে বিদেশি কূটনীতি এবং সরকারের উচ্চপদস্থ সহলের সাথে সামঞ্ঝস্যপূর্ণ সমাধানের মাধ্যমে কারাগারে আটক জননেত্রী শেখ হাসিনার মুক্তির জন্য প্রাণান্ত চেষ্ঠা করেন। কোন প্রকার লোভ-লালসা তাকে নিজ আদর্শ থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি।
আতাউর রহমান খান কায়সার চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা, চট্টগ্রাম ক্লাব, চট্টগ্রাম সিনিয়র্স ক্লাব, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, ডায়াবেটিক সমিতি, রোটারি ক্লাব, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত ছিলেন। আতাউর রহমান খান কায়সার যৌথভাবে চক্রবাক ও মুখর অরণ্য নামক দুইটি কাব্যগ্রন্থ সম্পাদনা করেছেন, যাতে তাঁর নিজস্ব কিছু কবিতা স্থান পেয়েছে।