প্রতিনিধি ১৬ আগস্ট ২০২৩ , ১১:২৩:৪৩ প্রিন্ট সংস্করণ
চট্টবাণী ডেস্ক: বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচন করার চেষ্টা করবেন না। আর করতেও দেওয়া হবে না।এ দেশের মানুষ তা করতে দেবে না।
আজ শুধু আমরা নই, আন্তর্জাতিক মহল বলছে, আওয়ামী লীগের অধীনে এর আগের নির্বাচনগুলো সুষ্ঠু হয়নি। এবারও যদি সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন না হয়, সেটি তারা গ্রহণ করবে না। আমরা সব শক্তিকে একত্র করে দেশনেত্রীকে মুক্ত করে, নেতাকর্মীদের নামে করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে এ সরকারকে বাধ্য করব পদত্যাগ করতে এবং নিরপেক্ষ, নির্দলীয় সরকারের অধীনে ক্ষমতা দিয়ে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে বাধ্য করব, যোগ করেন ফখরুল।
বুধবার (১৬ আগস্ট) খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় ঠাকুরগাঁও পৌর শহরের মির্জা রুহুল আমিন মিলনায়তনে জেলা বিএনপি আয়োজিত দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, ১৯৮১ সালে বিরোধী শক্তির হাতে জিয়াউর রহমান বীর উত্তম নির্মমভাবে শহীদ হন। তার পরে অনেকেই ভেবেছিলেন, বিএনপি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। কিন্তু জিয়াউর রহমানের যোগ্য সহধর্মিণী খালেদা জিয়া তার রাজনীতি ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদের দর্শন ধারণ করে এবং কোটি কোটি মানুষের আহ্বানে এ স্বাধীনতার পতাকা, সার্বভৌমত্বের পতাকা, জাতীয়তাবাদের পতাকা, সর্বোপরি গণতন্ত্রের পতাকা হাতে তুলে নিয়ে সেদিন স্বৈরাচারের অত্যাচার, নির্যাতন সহ্য করে প্রতিকূল অবস্থার মধ্য দিয়েও দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, হাল ধরেছেন এবং সবাইকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশের মাঠে, ঘাটে প্রান্তরে গণতন্ত্রের মুক্তির জন্য সংগ্রাম করেছেন। এ সংগ্রামের মধ্যে তিনি বার বার জেলে গেছেন। তাও তিনি কখনো মাথা নত করেননি। আপোসহীন নেতৃত্বে জনগণের মধ্য থেকে পথে থেকে তিনি এ সংগ্রামকে যৌক্তিক পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। তারই নেতৃত্বে ১৯৯০ সালে বাংলাদেশ স্বৈরাচার মুক্ত হয়েছিল। এরশাদ সরকার বাধ্য হয়েছিল ক্ষমতা থেকে বিদায় হতে।
তিনি আরও বলেন, ১৯৭১ সালেও তিনি দুই শিশু সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট থেকে ঢাকায় আসেন। সেখানে এক আত্মীয়ের বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়। দীর্ঘ নয় মাস কারাগারে ছিলেন তিনি। তিনি তখন কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন না, ছিলেন গৃহবধূ। যেদিন জিয়াউর রহমানকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়, সেদিন থেকে সেই গৃহবধূর মধ্যে সেই রক্তের মধ্যে আগুনের লেলিহান শিখা জাগ্রত হলো। বাংলাদেশকে একটি ঐক্যবদ্ধ, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করতে হবে- এ লক্ষ্যে সেই দিনই তিনি সংগ্রাম শুরু করেছিলেন। দীর্ঘ নয় বছর সংগ্রামের পরই তিনি সফল হয়েছিলেন। তার নেতৃত্বেই তখন জাতীয়তাবাদের সরকার গঠন করা হয়েছিল।
সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপি ১০টিও আসন পাবে না এমন কথা আওয়ামী লীগ বললেও ১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিএনপি সরকার গঠন করেছিল। তিনি ওই পাঁচ বছরে বাংলাদেশের মৌলিক পরিবর্তন করেছিলেন। তিনি সবার মতামতের ভিত্তিতে এমনকি আওয়ামী লীগেরও মতামতের ভিত্তিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালু করেন, যোগ করেন তিনি।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, বর্তমানে দেশের কী পরিস্থিতি আপনারা জানেন। বিরোধী দলের কোনো নেতাকর্মী ও তাদের সন্তানদের চাকরি হয় না। তারেক রহমানকে আজ সরকার ভয় পায়। আল্লাহ তায়ালা খালেদা জিয়াকে সুস্থতা দান করুন, হায়াত দারাজ করুন। আমাদের মাঝে তাকে ফিরিয়ে দিন।
পরিষ্কার করে সরকারকে বলতে চাই, অবিলম্বে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার ব্যবস্থা করেন, উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন, অন্যথায় এ দেশের মানুষ যখন জেগে উঠেছে, তারা মহাসমাবেশ করছে, ঢাকায় মহাসমাবেশের মধ্য দিয়ে আপনাদের জানিয়ে দিয়েছে, নো, আপনারা আর ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না, বলেন ফখরুল।
দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন- জেলা বিএনপির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা তৈমুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমীন, সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নুর করিম, আল মামুন আলম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো: পয়গাম আলী, আনসারুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক মো: দেলোয়ার হোসেন, মো: জাফরুল্লাহ, পৌর বিএনপির সভাপতি শরিফুল ইসলাম শরিফ, সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল হামিদ, সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবু হোসেন তুহিনসহ বিএনপি ও এর বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।