প্রতিনিধি ১১ আগস্ট ২০২৩ , ১০:৪৫:১৪ প্রিন্ট সংস্করণ
চট্টবাণী: ‘বন্যায় কক্সবাজারের রেলপথ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও উদ্বোধন আগামী অক্টোবরের মধ্যেই হবে। দেশের অন্যান্য রেললাইনেও পানি ওঠে।তখন রেললাইনের কিছু পাথর, মাটি সরে যায়। এই লাইনেও পাথর আর কিছু মাটি সরেছে।
এতে বড় ধরনের কোনও ক্ষতি হয়নি। আমাদের হাতে যে সময় আছে, তার মধ্যেই সেটা ঠিক করে ফেলতে পারবো’।
ভয়াবহ বন্যায় কক্সবাজারের পথে প্রায় এক কিলোমিটার রেলসড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তা প্রকল্প উদ্বোধনে প্রভাব ফেলবে না বলে জানিয়ে এমন মন্তব্য করেছেন প্রকল্প পরিচালক মফিজুর রহমান। তিনি বলেন, এই ক্ষতি আমাদের উদ্বোধনের সময়সূচিতে কোনো প্রভাব ফেলবে না। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার কাজ এক মাসের মধ্যে শেষ করা যাবে।
গত মঙ্গলবার ভারী বৃষ্টিতে পাহাড় থেকে নেমে আসা পানিতে বন্যার সৃষ্টি হয়। এতে সাতকানিয়ার তেমুহনী এলাকার প্রায় তিন কিলোমিটার রেলপথের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) প্রকল্প পরিচালক মফিজুর রহমানের নেতৃত্বে একটি টিম তেমুহনী এলাকাসহ কক্সবাজার অঞ্চলের বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করেন।
মফিজুর রহমান বলেন, গত মঙ্গলবার এক রাতে স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হওয়ায় তিন কিলোমিটার রেললাইনে পানি উঠেছে। তবে এখন পানি নেমে গেছে, চিন্তার কিছু নেই। পরিদর্শন করে দেখেছি- এর মধ্যে এক কিলোমিটারের মতো রেলসড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা শিগগিরই আমরা ঠিক করে ফেলতে পারবো।
ভয়াবহ বন্যা ‘রেললাইনের কারণে’ বলছেন স্থানীয়রা
অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে এই অঞ্চলের আশপাশে বয়ে যাওয়া শঙ্খ নদী, ডলু নদী ও হাঙর নদীতে ধারণক্ষমতার বেশি পানি প্রবাহিত হওয়ায় তীর ভেঙে লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। এতে প্লাবিত হয়েছে সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চন্দনাইশ ও বাঁশখালী সহ অন্তত ৫টি উপজেলা। বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলা। আকস্মিক এমন বন্যার জন্য চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন তৈরিকে দুষছেন স্থানীয়রা। তাদের দাবি, নবনির্মিত এই রেললাইন দক্ষিণ চট্টগ্রামের জন্য গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। রেললাইন তৈরির ফলে এই অঞ্চলের বেশ কয়েকটি উপজেলার মাঝামাঝি কৃত্রিম বাঁধের সৃষ্টি হয়েছে। এতে পানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে।
এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই ঝড় তুলছেন। দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ৩৯টি বড় সেতু এবং ১৪৫টি ছোট সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। লেভেল ক্রসিং আছে ৯৬টি। এগুলোর কারণে পানি আটকে থাকছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
লোহাগাড়ার আমিরাবাদ এলাকার নূর উদ্দিন লিখেছেন, ‘কিছু ভুলের কারণেই দুদিন ধরে দক্ষিণ চট্টগ্রামের অনেক গ্রাম প্লাবিত। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইনের মাঝে কালভার্ট ও সাঁকোর ফলে অতিরিক্ত পানি একপাশ থেকে অন্যপাশে যেতে না পারার ফলেই বন্যা। কর্তৃপক্ষের উচিত, দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া’।
সাতকানিয়ার কাঞ্চনাবাদ এলাকার কাজী মো. বাদশা লিখেছেন, ‘অপরিকল্পিত রেললাইনের কারণে আজ দোহাজারী,সাতকানিয়া, লোহাগাড়া বন্যাকবলিত’।
লোহাগাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান জিয়া উদ্দিন চৌধুরী বাবুল বলেন, ‘রেললাইনের কারণে পানি যেতে পারছে না- এটার কিছুটা সত্যতা আছে। পর্যাপ্ত পরিমাণ কালভার্ট দেওয়ার দরকার ছিল। এত বছর কোনো প্রতিবন্ধকতা ছিল না, এবছর রেললাইনের কারণে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়েছে। এখন বোঝা যাবে, কোন কোন এলাকায় আরো কালভার্ট দিতে হবে। এটা জেনে নিয়ে সংশোধন করা দরকার’।
চুয়েটের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. আসিফুল হক বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে যেন জলাধারে সড়ক নির্মাণের সময় ফ্লাইওভারের মত করে নির্মাণ করা হয়। এতে পানির প্রবাহ স্বাভাবিক থাকবে। যতবেশি কালভার্ট, পানির প্রবাহ তত স্বাভাবিক। এতে সড়ক বা অন্য স্থাপনাও ঠিক থাকবে। তবে স্টাডি না করে এটাকেই একমাত্র কারণ বলা যাবে না। আরো অনেক কারণ থাকতে পারে’।
জলাধার ভরাট, নদীর গভীরতা হ্রাসও এই বন্যার অন্যতম কারণ হতে পারে বলে জানান তিনি।
প্রকল্প পরিচালক মফিজুর রহমান বলেন, প্রকল্পের পরিকল্পনায় বা বাস্তবায়ন পরিকল্পনার কোনও ত্রুটির কারণে এই ক্ষতি হয়নি। প্রকল্পটিতে ১৪৫টি সেতু ও কালভার্ট করার কথা ছিল, কিন্তু বাস্তবায়ন পর্যায়ে আমাদের প্রয়োজন মনে হওয়ায় মোট ১৭৩টি সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ করে এই রেলসড়ক নির্মাণ করেছি।
উল্লেখ্য, দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার এই রেলপথ নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে সাড়ে ১৫ হাজার কোটি টাকা। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ঋণ দিচ্ছে ১১ হাজার ৪৯৯ কোটি টাকা।