চট্টবাণী: মশা ও লার্ভা ধ্বংসে ওষুধ ও তেল ছিটানো, ধোঁয়া ছড়ানো, ড্রোন দিয়ে ছাদ পর্যবেক্ষণের পর এবার বদ্ধ পানিতে বিশেষ ধরনের ট্যাবলেট ছিটাবে চসিক। লার্ভা ধ্বংসে দুই ধরনের ট্যাবলেটের পরীক্ষামূলক প্রয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে চসিকের।
এর মধ্যে ১০ লিটার পানিতে ১টি ট্যাবলেট দিয়ে ৯০ দিন লার্ভা ধ্বংস করবে ‘মসকিটন’। আবার ২০০ লিটার পানিতে ১টি ট্যাবলেট দিয়ে ৬০ দিন লার্ভা ধ্বংস করবে ‘ডিটি’।
এর মধ্যে কোন ট্যাবলেট লার্ভা ধ্বংসে অধিকতর কার্যকর, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম, পরিবেশবান্ধব এবং ব্যয়-সাশ্রয়ী তা নির্ধারণে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাবে চসিক। একই সঙ্গে দেশের মশা বিশেষজ্ঞ, কীটতত্ত্ববিদসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থার পরামর্শও নেওয়া হবে।
চসিকের ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মো. শরফুল ইসলাম মাহি গণমাধ্যমকে এসব তথ্য জানান। সূত্র জানায়, ইতিমধ্যে লার্ভা ধ্বংসকারী দুই ধরনের ট্যাবলেটের উৎপাদক বা বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে চসিক কর্তৃপক্ষের কাছে নমুনা জমা দেওয়া হয়েছে। জেনেটিকা ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, ম্যালেরিয়াসহ মশাবাহিত রোগের বাহক মশার জন্মস্থানে লার্ভা নিধনে কার্যকরী সমাধান মসকিটন ০.১২ বাজারজাত করছে। যুক্তরাজ্যের রুসল আইপিএম কর্তৃক উদ্ভাবিত মসকিট ০.১২ যা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও আইইডিসিআর কর্তৃক পরীক্ষিত এবং কৃষি মন্ত্রণালয় (প্ল্যান্ট প্রটেকশন টিন উইং) কর্তৃক অনুমোদিত একটি সরকারি রেজিস্টার্ড প্রডাক্ট। এটি চতুর্থ প্রজন্মের কীটনাশক যা পরিবেশবান্ধব। এটি একটি আইজিআর প্রডাক্ট, যেটি মশার লার্ভাকে পিউপাতে রূপান্তরিত হতে দেয় না এবং মশা আর উড়ন্ত মশা হতে পারে না।
জেনেটিকা ইন্ডাস্ট্রিজ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ ইরাদ আলী জানান, ডেঙ্গুসহ মশাবাহিত রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় নতুনভাবে চিন্তা করতে থাকি। এডিস মশার লার্ভা থেকে পূর্ণাঙ্গ এডিস মশার জন্ম, সেটা যদি লার্ভা অবস্থায় নির্মূল করা যায় তাহলে মশাবাহিত রোগ আর ছড়াবে না। জেনেটিকা সবসময় আধুনিকতা ও নতুনত্বে বিশ্বাসী। আমরা ইতিমধ্যে এ বিষয়ে বেশ সাড়া পেয়েছি।
মো. শরফুল ইসলাম মাহি বলেন, নোভালিউরন (মসকিটন) এবং বিটিআই ওষুধ সংগ্রহের পরিকল্পনা রয়েছে চসিকের। তবে প্রচলিত যে লার্ভিসাইড ও অ্যাডাল্টিসাইড ওষুধ প্রয়োগ করা হচ্ছে তা অব্যাহত থাকবে। ট্যাবলেট প্রয়োগ করা হবে বদ্ধ পানিতে এবং তা পরীক্ষামূলক। মাননীয় মেয়র, চসিক এলাকায় ডেঙ্গুসহ মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে গঠিত কার্যনির্বাহী কমিটি, চসিকের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা, বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে মশানিধনে রুটিন ওয়ার্ক, বিশেষ কর্মসূচির পাশাপাশি পরীক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
তিনি বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি সারা বছর মশাবাহিত রোগের ব্যাপারে আমাদের সচেতনতা তৈরি করতে হবে। যেমন করোনার শিক্ষা মাস্ক পরা এবং হাত ধোয়া, যা সচেতন সবাই মেনে চলেন। তেমনি মশানিধনে সবাইকে সচেতন হতে হবে।
ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান জোরদার করেছে চসিক। নির্মাণাধীন ভবনের নিচে, ফুলের টব, ড্রাম ও ছাদে জমে থাকা পানিতে মশার লার্ভা পেলেই জরিমানা করা হচ্ছে।
৫ জুলাই থেকে ২৭ জুলাই পর্যন্ত ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে ১৩১টি মামলায় ১১ লাখ ৫৬ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা আদায় করেছে চসিক। মশা নিধনে নিয়োজিত স্প্রেম্যানের সংখ্যা ২২০ থেকে বাড়িয়ে ৪০০ জনে উন্নীত করা হয়েছে। ৩০০টি স্প্রে মেশিন ও ১২০টি ফগার মেশিন ব্যবহার করা হচ্ছে মশা নিয়ন্ত্রণে। বর্তমানে ১০ হাজার লিটার এডাল্টিসাইড, ৩ হাজার লিটার লার্ভিসাইড ও ৫,০০০ লিটার ন্যাপথা মজুদ রয়েছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাদলের সুপারিশের আলোকে মসকুবান নামীয় ভেষজ ওষুধ ব্যবহার শুরু করা হয়েছে। এডাল্টিসাইড হিসেবে ইনভেন্ট লিকুইড ইনসেক্টিসাইড, লার্ভিসাইড হিসেবে টেমিফস ৫০ ইসি ব্যবহার করা হচ্ছে। পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণ এলডিও এবং এইচএসডি (কালো তেল) কেনা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
ডেঙ্গু বিষয়ে ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টি ও ডেঙ্গু চিকিৎসা সুবিধা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে মেয়র রেজাউল গত ১১ জুলাই সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরের দায়িত্বশীলদের উপস্থিতিতে সভা করে ৩৩ সদস্যের কমিটি গঠন করেন। গঠিত কার্যনির্বাহী কমিটি ডেঙ্গুর প্রকোপ না কমা পর্যন্ত প্রতি ১৫ দিন পর পর সভা করে কর্মপন্থা নির্ধারণপূর্বক গৃহীত কার্যক্রম সম্পর্কে সব সংস্থাকে লিখিতভাবে জানানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।