• সাহিত্য

    চট্টগ্রামের বাতাসে মরণব্যাধি বস্তুকনা, প্রতিকার কোন পথে: হাজী মোঃ নুরুল কবির

      প্রতিনিধি ১২ জুলাই ২০২৩ , ১:১৪:২৬ প্রিন্ট সংস্করণ

    হাজী মোঃ নুরুল কবির: পৃথিবীর বসবাসের অনুপযোগী শহরের তালিকায় ঢাকা। কিন্তু এশিয়া মহাদেশের দূষণের তালিকায় উপরে উঠেছে চট্টগ্রাম বন্দরনগরী। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক রাজধানী চট্টগ্রাম বন্দরনগরের ক্রমবর্ধমান উন্নয়ন ও অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে বায়ু দূষণ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। ক্ষতিকর বায়ু দূষণের ফলে বাতাসের মধ্যে মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর সূক্ষ্ম বস্তুকণা পিএম ২.৫ এর পরিমাণ আশঙ্কা জনক হারে বেড়ে চলছে।




    বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এবং আন্তর্জাতিক ক্যান্সার গবেষণা সংস্থা( IARC) পিএম ২.৫ কে ” জি -১ কার্সিনোজেন” এর তালিকাভুক্ত করেছে যার অর্থ এই কণা মানব দেহের ক্যান্সার সৃষ্টিতে প্রাথমিক ধাপ হিসেবে কাজ করে। বিশেষ করে বৃদ্ধ ও বাচ্চাদের জন্য এই বস্তুকণা সব থেকে বেশি ক্ষতিকর। চট্টগ্রামের বাতাসে অতি ক্ষুদ্র বস্তু কণা পিএম ২.৫ এর পরিমাণ প্রতি ঘনোমিটারে ১৬৫.৩১ মাইক্রোগ্রামের বেশি। অর্থাৎ নির্ধারিত মান মাত্রার থেকে প্রায় ২.৬০ গুণ। কিন্তু জাতীয় আদর্শ বায়ুমান (দৈনিক) প্রতি ঘনোমিটারে ৬৫ মাইক্রোগ্রাম থাকার কথা। চট্টগ্রামের বায়ু দূষণ বৃদ্ধি পাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ উন্নয়ন প্রকল্পের কার্যক্রম। সরকারিভাবে উন্নয়ন প্রকল্পে চলমান কাজের জন্য টেন্ডার প্রাপ্ত কোম্পানির বায়ু দূষণ বন্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করার কথা থাকলেও কার্যত তা কোম্পানিগুলো ভ্রুক্ষেপ করে না।




    চট্টগ্রামের পরিবেশ দূষণের জন্য অনিয়ন্ত্রিত রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি, শহরের বাসা বাড়ি নির্মাণ, ইটভাটা, আন্ত দেশীয় বায়ু দূষণ, গৃহস্থলী ও রান্নার চুলা থেকে নির্গত দূষণ, বর্জ্য পোড়ানো, শিল্প কলকারখানার নির্গত ধোঁয়া পাশাপাশি যানবাহনের কালো ধোঁয়া তো আছেই। সব থেকে বেশি দূষণের তালিকা আছে হালিশহর আবাসিক এলাকা, টেকনিক্যাল মোড় ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশনের ডিপো।

    এ সকল এলাকাতে পিএম ২.৫ এর মাত্রা ছিল ঘন মিটারে ২৫০, ২৪৪ এবং ২৩০.৭৫ । দূষিত এলাকার মধ্যে রয়েছে পাহাড়তলী গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের সামনে, চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতাল কলেজ, জজকোর্ট এলাকা, চট্টগ্রাম ডায়াবেটিকস হাসপাতালের গেট এলাকা, সিএসসিআর এবং বি মেমোরিয়াল হাসপাতালের সামনে। এ সকল এলাকায় দেখা গেছে পিএম ২.৫ পরিমাণ ছিল পর্যায়ক্রমে প্রতি ঘনোমিটারে ১৮৪.২৫ এবং ৪৯.২৫ মাইক্রোগ্রাম। যা আদর্শ মানের চেয়ে ২.৮৩ গুন বেশি।




    এছাড়াও দূষণের শিকারের জর্জরিত চকবাজার, কালামিয়া বাজার, বদ্দারহাট, নতুন পাড়া, কাটগর মোড়, একে খান মোড়। তুলনামূলকভাবে কম দূষণ এলাকার মধ্যে রয়েছে টাইগার পাস মোড়, কাজীর দেউড়ি মোড় ও ওয়াসা মোড়। এ সকল এলাকায় অতি ক্ষুদ্র বস্তু কণা পিএম ২.৫ এর পরিমাণ প্রতি ঘনমিটারে ২১৩.৭৫ এবং ১০৪.২৫ মাইক্রোগ্রাম। যা আদর্শ মানের চেয়ে ১.৬০ থেকে ৩.২৭ গুন বেশি।




    এছাড়াও দূষণের মধ্যে রয়েছে পাহাড়তলী বাজার মোড়, আগ্রাবাদ মোড়, নিউ মার্কেট মোড়, জেইসি মোড়, দেওয়ানহাট, শাহ আমানত সেতু, অক্সিজেন মোড়, কাপ্তাই রাস্তার মাথা, সার ট্রানজিট, কালুরঘাট ব্রিজ, সিইপিজেডসহ প্রত্যেক এলাকায় বায়ুর মান অত্যন্ত ঝুঁকিতে রয়েছে। আদর্শ মানের ক্ষেত্রে এ সকল এলাকা ১.৭৩ থেকে ৩.৭৫ গুণের মধ্যে রয়েছে। বায়ু দূষণ বন্ধে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, পরিবেশ অধিদপ্তর, বন অধিদপ্তর, অর্থ মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন ও পরিবেশবাদী সংগঠনের সমন্বয়ে বায়ুর মান নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সমন্বিতভাবে একটি কমিশন গঠন করা যেতে পারে।




    পাশাপাশি যে সকল কোম্পানি উন্নয়ন প্রকল্পের সাথে জড়িত বায়ু দূষণের সাথে জড়িত থাকলে তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনা পাশাপাশি অর্থদণ্ড কার্যকর করা, নির্মাণাধীন বাসাবাড়ির ইট বালু সিমেন্ট তাদের সীমানার মধ্যে রেখে বাড়িঘর নির্মাণ করতে বাধ্য করা, এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট এলাকার থানা ও জনপ্রতিনিধিদেরকে সম্পৃক্ত করা,শহরের উন্নয়নে সুনির্দিষ্ট নগরায়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি গবেষকদেরকে সম্পৃক্ত করা, দিনে রাস্তা দুইবার ঝাড়ু দেওয়া এবং প্রতি সপ্তাহে একবার রাস্তা পানি দিয়ে ধোঁয়ার ব্যবস্থা করা, যানবাহন ব্যবহারের ক্ষেত্রে জোড় বিজোড় সংখ্যা অনুসরণ করা অর্থাৎ ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারের ক্ষেত্রে জোড় সংখ্যার গাড়িগুলো যেদিন চলবে বিজোড় সংখ্যার গাড়িগুলো সেদিন বন্ধ রাখা,রাস্তার পাশে অবস্থিত গাছপালাগুলোকে নিয়মিত পানি দিয়ে ধোঁয়ার ব্যবস্থা করা ফলে অক্সিজেন বৃদ্ধি পাবে, পরিকল্পিত সবুজায়ন নিশ্চিত করতে প্রত্যেক বাসা বাড়ির ছাদে ছাদ কৃষি, গাছের টব ব্যবহারে উৎসাহিত করার পাশাপাশি ফাঁকা জায়গাগুলোতে দেশীয় প্রজাতির গাছের চারা রোপণ, উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কোন প্রকার গাছ না কেটে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা, বর্জ্য অপসারণ করার ক্ষেত্রে জায়গা অধিগ্রহণ করে শহরের বর্জ্য গুলো সুনির্দিষ্ট জায়গায় ফেলা এবং বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবস্থা করা, পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর সকল প্রকার ইটভাটা বন্ধ করে পরিবেশ বান্ধব ইটভাটা চালু করা, শহরের মধ্য দিয়ে অবস্থিত সকল খালকে পুনরুদ্ধার ও খনন করা, পাশাপাশি ডোবা ও পুকুরকে মাছ চাষের উপযোগী করা। চট্টগ্রামের বায়ু দূষণ বন্ধে সবাইকে একযোগে এগিয়ে আসতে হবে তবেই আগামী প্রজন্মের নিরাপদ চট্টগ্রাম নিশ্চিত করা সম্ভব।




    লেখক: হাজী মোঃ নুরুল কবির, সাধারণ সম্পাদক,সবুজ আন্দোলন চট্টগ্রাম মহানগর শাখা।

    আরও খবর 23

    Sponsered content