চট্টবাণী ডেস্ক: বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগ নাকি সবচেয়ে ভালো নির্বাচন করতে পারে। আওয়ামী লীগের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হয় না, আওয়ামী লীগ সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে জানে না।তারা জমিদারি মনে করে, ক্ষমতা ধরে রাখতে চায়, জনগণকে প্রজার ন্যায় নির্যাতন করে, হত্যা করে।
তিনি বলেন, আজকে সমগ্র জাতি সংকটের মুখে আছে। এই জাতির অস্তিত্ব থাকবে কিনা, স্বাধীনতা নিয়ে বেঁচে থাকতে পারব কিনা, সেটা এখন সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। সামনে আরেকটি নির্বাচন এসে দাঁড়িয়েছে। আওয়ামী লীগ জোর করে ক্ষমতা দখল করে আবারো ক্ষমতাকে সম্প্রসারিত করার চেষ্টা করছে। বলছে, সংবিধান দিয়ে নির্বাচন হবে, যে সংবিধান তারা অসাবিধানিকভাবে বেআইনিভাবে কেটে ছিঁড়ে তৈরি করে রেখেছে।
রোববার (০৯ জুলাই) বিকেলে সিলেটের আলিয়া মাদরাসা ময়দানে বিএনপির অঙ্গ সংগঠন ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল আয়োজিত তারুণ্যের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, আজকের এই সমাবেশ সাধারণ সমাবেশ নয়, ব্যতিক্রমী সমাবেশ। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে এই সমাবেশের মধ্য দিয়ে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, দেশের ভাগ্য পরিবর্তনের সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে। চারটি সমাবেশ অত্যন্ত সুন্দরভাবে সফল করেছে তরুণরা। সিলেটে রাত দেড়টার সময় মাঠ তৈরি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, সরকার বিদ্যুৎ খাতে এক লাখ ৪৮ কোটি টাকা এক বছরে লোকসান দিয়েছে। পদ্মা সেতু ১০ হাজার কোটি টাকায় করা যেত, সেখানে ৩০ হাজার কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। বছরের পর বছর সারের দাম বাড়তে থাকে। করোনার সময় লুটপাট হয়েছে, শিক্ষাখাতে লুটপাট হয়েছে। আমরা দুটো নির্বাচন দেখেছি। প্রত্যেকটিতে আওয়ামী লীগ মানুষকে বোকা বানিয়েছে। এই নির্বাচন ব্যবস্থাতে কখনোই বাংলাদেশের শান্তি আসবে না, স্থিতিশীলতা আসবে না। তাই নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। তারেক রহমান আওয়াজ তুলেছেন, বাংলাদেশকে আগের জায়গায় ফিরিয়ে আনতে হবে। তাই ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ’ স্লোগান তুলেছেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, এই তারুণ্যের সমাবেশের একটাই লক্ষ্য হওয়া উচিত, একাত্তরের যুদ্ধ করেছি দেশকে স্বাধীন করবার জন্য, এখানে অনেকে বসে আছেন স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের নেতা, আজকে দেশকে মুক্ত করতে হবে, গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে হবে। এই বৃদ্ধ বয়সে খালেদা জিয়া কারাগারে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন; কারণ একটাই দেশের জনগণকে অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য। তার ওপর মামলা প্রত্যাহার করে শান্তির বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
তিনি বলেন, ১২ তারিখে রাজধানী ঢাকায় সমাবেশ হবে। এই সমাবেশ থেকে ঘোষণা আসবে সরকার পরিবর্তনের। সরকারকে উৎখাত করার জন্য, দেশনেত্রীকে কারামুক্ত করার জন্য, তারেক রহমানকে ফিরিয়ে আনার জন্য। সত্যিকার অর্থে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তাই জীবন বাজি রেখে আমরা এই সংগ্রাম লড়াইয়ে আসুন আমরা সবাই রুখে দাঁড়াই। এই সরকারকে পদত্যাগ করে সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে নতুনভাবে যাত্রা শুরু করতে হবে। ফয়সালা হবে রাজপথে।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, আমরা চেয়েছি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। কেন বলেছি, মানুষ একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে তাই। নির্বাচনের সময় একটি নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকার থাকতে হবে। না হলে আওয়ামী লীগ যদি থাকে, কেউ ভোট দিতে পারবে না। আগে অনেকে কেন্দ্রেও যেতে পারেনি। আমাদের এক কর্মীর দুই পা কেটে ফেলা হয়েছিল। সরকারের অপকর্মের প্রতিবাদ করতে গিয়ে আমাদের নেতা ইলিয়াস আলীকে গুম করে ফেলা হয়েছে। তার স্ত্রী লুনা বলেছেন, তার মেয়ে যখন সামনে আসে, তখন তিনি কথা বলতে পারেন না। যখন ইলিয়াস আলীকে হঠাৎ করে তুলে নেওয়া হয়, এখনো তার মা-সন্তানরা বাসার দরজার দিকে তাকিয়ে থাকেন।
তিনি বলেন, ’৭১ সালে আমরা যুদ্ধ করেছিলাম। এখানে অনেকে আছে যারা যুদ্ধ করেছেন। কেন যুদ্ধ করেছিলেন, একটিমাত্র কারণে আমরা সকলের মতপ্রকাশ করব, নিজেদের অধিকারকে নিশ্চিত করব, সকলের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হবে, চিকিৎসার উন্নতি হবে। শেখ মুজিবুর রহমান চিন্তা করেছিলেন, এই দেশ এই রকম থাকবে না, তাই তিনি বাক্শাল তৈরি করেছিলেন। আজকে আবার শেখ হাসিনা ভিন্নভাবে একদলীয় সরকারের মাধ্যমে বাকশাল চাপিয়ে দিতে চাচ্ছেন। দুইটা নির্বাচন করেছেন আগে, বেআইনিভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকবার জন্য।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু বলেন, পবিত্র মাটিতে দাঁড়িয়ে বলতে চাই, এখানে যারা উপস্থিত আছেন কেউ কি ভোট দিতে পেরেছেন? পারেননি। তাহলে ভোট কই গেল? ভোট চুরি হয়ে গেছে, ভোট ডাকাতি হয়ে গেছে। ভোট চোর বললে এটা তাদের গায়ে খুব জ্বলে।
তিনি বলেন, আমরা বলতে চাই, এখানও সময় আছে ভালোয় ভালোয় পদত্যাগ করুন। না হলে পদত্যাগ করার সময় পাবেন না। আগামী দিনের রাজপথে আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এই সরকারের পতন ঘটাব। গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করব ইনশাআল্লাহ।
সমাবেশে বিশেষ বক্তার বক্তব্য রাখেন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ। যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাঈদ মাহমুদ জুয়েলের যৌথ পরিচালনায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা তাহসিনা রুশদীর লুনা, বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. শাখাওয়াত হাসান জীবন, সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী প্রমুখ।
উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মোক্তাদির, কেন্দ্রীয় সদস্য ও সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, সাবেক এমপি শাম্মি আক্তার, মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি নাসের রহমানসহ সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপির নেতারা।