চট্টবাণী: চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেছেন, কোনো বিদেশি প্রভুর প্রেসক্রিপশনে নয়, ক্ষমতায় কে আসবে বা কে যাবে, তা এদেশের জনগণ তাদের ভোটধিকারের মাধ্যমে নির্ধারণ করে দেবে।
তিনি আরও বলেন, ক্ষমতাধর বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর মনে রাখা উচিত, বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র। দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কোনো বিদেশি শক্তির নাক গলানোর সুযোগ নেই।
শুক্রবার (১৯ মে) বিকেলে চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত 'বিএনপি জামায়াতের নৈরাজ্য ও নাশকতাবিরোধী' সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
ক্ষমতাধর একটি দেশ বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি দেখে হতবাক মন্তব্য করে নাছির উদ্দিন বলেন, এটা তাদের সহ্য হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় থাকুক ওই দেশটি তা চায় না। ক্ষমতাধর দেশটির চরিত্র ও ভূমিকা কারো অজানা নয়। ১৯৭১ সালে আমরা যখন মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে, ওই দেশটি তখন পাকিস্তানের পক্ষে বঙ্গপোসাগরে সপ্তম নৌবহর পাঠায়। বৈশ্বিক প্রতিবাদ ও নিন্দার মুখে সেই সপ্তম নৌবহরকে ফিরে যেতে বাধ্য করা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ও পাকিস্তানের পক্ষে ভেটো দেয়। মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের পক্ষে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন পাল্টা ভেটো দেওয়ায় তাদের স্বার্থ হাসিল হয়নি এবং তারা পরাজিত হয়। এছাড়াও পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে এরা স্বাধীন বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধু সরকারের বিরুদ্ধে পরাজিত পাকিস্তানের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে। ১৯৭৩ সালে নগদ মূল্যে আমেরিকা থেকে বাংলাদেশ খাদ্য সামগ্রী ক্রয় করে। বাংলাদেশে একটি কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ সৃষ্টির কুমতলবে আমেরিকা খাদ্যবাহী জাহাজটি ফিরিয়ে নেয় এবং প্রচার করে যে, বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষে লাখ লাখ লোক মারা যাবে। এই সাময়িক দুর্ভিক্ষ বঙ্গবন্ধু মোকাবিলা করে সফলতার সঙ্গে বাংলাদেশকে উন্নয়নের পথে নিয়ে যেতে থাকেন। সৌভাগ্যবশত সে বছর বাম্পার ফসল উৎপাদিত হয়। এটাও তাদের সহ্য হয়নি। তাই ১৯৭৫ সালে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ ও পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার পরিকল্পনায় ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শান্তি সমাবেশে আ জ ম নাছির আরও বলেন, দেশের সর্বোচ্চ আদালত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মতামত দেওয়ার পর তা পার্লামেন্টে বিল আকারে গৃহিত হয়। তাই সংবিধান সংশোধন ছাড়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের কোনো বৈধ্যতা ও সুযোগ নাই।
তিনি আগামী ২৩ ও ২৮ মে কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী বৃহৎ পরিসরে শান্তি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে বলে ঘোষণা দেন।
এসময় চট্টগ্রাম-৮ আসনের নব নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ বলেন, আমরা শান্তি চাই, নাশকতা ও নৈরাজ্য চাই না। এবার রাজপথে শুধু সমাবেশ করে নয়, প্রতিটি ইউনিটে, ওয়ার্ডে ও থানায় নাশকতা নৈরাজ্যকারীদের সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিহত করা হবে।
সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দীন চৌধুরী বলেন, বিএনপি-জামায়াত বুঝে গেছে, শেখ হাসিনা বেঁচে থাকলে এদেশকে তাদের এজেণ্ডা অনুযায়ী পাকিস্তান বানানো যাবে না। ২১ বার শেখ হাসিনার প্রাণনাশের ব্যর্থ চেষ্টার পরও আল্লাহর রহমতে তিনি বেঁচে গেছেন। এটা বিএনপি-জামায়াতের মাথাব্যাথার বড় কারণ। আগামী ২৪ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা ও শেখ হাসিনার বিজয় ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনীর সঞ্চালনায় শান্তি সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন- চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আলহাজ্ব নঈম উদ্দীন চৌধুরী, উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য সফর আলী, কার্যনির্বাহী সদস্য আবুল মনছুর, অ্যাড. কামাল উদ্দীন আহমেদ, জাফর আলম চৌধুরী, রোটারিয়ান মো. ইলিয়াছ, ড. নেছার উদ্দীন আহমেদ মঞ্জু, হাজী বেলাল আহমদ প্রমুখ।