চট্টবাণী: বেশি ঝাঁজের দেশি পেঁয়াজের বাজার চড়া। প্রতিদিনই দাম বাড়ছে পাইকারি ও খুচরাতে।
দাম আরও বাড়লে সরকারের পক্ষ থেকে আমদানির অনুমতি দেওয়ার ইংগিত এসেছে। এ অবস্থায় দেশে ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের আড়তদার ও ভোক্তাদের উদ্বেগ বাড়ছে।
আড়তদারের উদ্বেগের কারণ আমদানির অনুমতিপত্র (আইপি) ইস্যু মাত্রই দেশি পেঁয়াজের দাম কমে যাবে, তখন আড়তে থাকা পেঁয়াজে লোকসান হবে। বেশি পেঁয়াজ কিনে থাকে এমন হোটেল, রেস্টুরেন্ট, অনলাইনে খাবার ডেলিভারি দিচ্ছে এমন উদ্যোক্তারা উদ্বিগ্ন লাগামহীন পেঁয়াজের দাম নিয়ে।
বুধবার (১৭ মে) সকালে ফরিদপুরের চিতার বাজার থেকে খাতুনগঞ্জে ১৫ টন পেঁয়াজ নিয়ে আসেন ট্রাকচালক মো. জামাল (৩৪)। তিনি বলেন, মঙ্গলবার (১৬ মে) রাত ৯টায় পেঁয়াজ নিয়ে রওনা দিয়েছিলাম চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে। সকাল সোয়া ৯টায় খাতুনগঞ্জে ঢুকেছি। গাড়িভাড়া ২৪ হাজার টাকা। পদ্মা সেতুর টোল, ছোট দুইটি সেতুর টোল, পথের বকশিশ ইত্যাদি মিলে সাড়ে ৩ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।
শুধু জামাল নন, একই দিন চট্টগ্রামে পেঁয়াজ এনেছেন তার পরিচিত আরও ৫ জন ট্রাকচালক।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ফরিদপুরের স্থানীয় চাষিদের চাঙে পেঁয়াজ আছে এখনো। দাম বাড়লে পর্যায়ক্রমে বিক্রি করবেন তারা। এখন যে পেঁয়াজ এনেছি সেগুলো বাজার থেকে ৬৫ টাকার বেশি দামে কেনা।
খাতুনগঞ্জের শাহজাদা ট্রেডার্সের মো. ফাহাদ বলেন, দেশি পেঁয়াজ ছোট, বড় আকার, রং ও মান ভেদে ৬৫ থেকে ৭৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে আজ। বড় কোয়ার চীনা রসুন বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা। দেশি রসুনের মতো দেখতে ভারতের ছোট কোয়ার রসুন প্রতি কেজি ৮০-৮৫ টাকা। ভিয়েতনামের আদা বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকা।
একে ট্রেডার্সে পেঁয়াজ রাখা হয়নি দামের অস্থিতিশীলতার কারণে। ভারতের রসুন বিক্রি করছেন ৮৫-৯০ টাকা। চীনা রসুন ১২০ টাকা। মিয়ানমারের আদা ১৮০ টাকা।
বেশিরভাগ পেঁয়াজ, রসুন ও আদার বস্তা প্লাস্টিকের চটের হলেও ভারত থেকে আসা কিছু রসুনের বস্তা দেখা গেছে পাটের। আড়তদার জানান, এ রসুন কয়েকদিন আগেও ১২০ টাকা বিক্রি হয়েছে। এখন ১০০ টাকায় নেমেছে।
খাতুনগঞ্জের পেঁয়াজের বড় বিপণিকেন্দ্র হামিদ উল্লাহ মার্কেট আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিস বলেন, পেঁয়াজের আইপি ইস্যু হতে পারে এমন খবরে পরশু কেজি প্রতি ১০ টাকা কমেছিল আড়তে। গতকাল তা আবার বেড়ে গেছে। এখন ভালো মানের দেশি পেঁয়াজ ৭০-৭৫ টাকা।
তিনি জানান, পেঁয়াজ পচনশীল হওয়ায় বেশি দিন আড়তে মজুদ রাখার সুযোগ নেই। ফরিদপুর ও পাবনার সাপ্তাহিক হাটে চাষিরা পেঁয়াজ বিক্রি করতে আনেন। সেগুলো বেপারিরা কিনে আড়তে নিয়ে বস্তা ভরে ট্রাকে করে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন অঞ্চলের আড়তে পাঠিয়ে দেন। আমরা আড়তদারি হিসেবে কেজিপ্রতি ৫০ টাকা পাই। এখানে দাম বাড়লে আমাদের তেমন লাভ হয় না। যতদূর জেনেছি ফরিদপুর, পাবনার হাটবাজারেও পেঁয়াজের দাম বেশি পড়ছে এখন।
খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ছগীর আহমদ এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, পেঁয়াজের মাত্রাতিরিক্ত দাম বাড়লে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে। চাহিদা, উৎপাদন, ঘাটতি ইত্যাদি বিবেচনায় নিয়ে পবিত্র ঈদুল আজহার আগে পর্যাপ্ত সময় হাতে রেখেই পেঁয়াজ আমদানির বিষয়টি সরকার বিবেচনা করতে পারে।
সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ কিনে থাকে হোটেল, রেস্টুরেন্টগুলো। চট্টগ্রাম মহানগর রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সভাপতি ইলিয়াছ আহমেদ ভূঁইয়া বলেন, আমার হোটেলে সবসময় দেশি পেঁয়াজ ব্যবহার করে আসছি এবং আমি ঢাকা থেকেই প্রতিবারে ৫ বস্তা করে দেশি পেঁয়াজ আনাই। গত ১১ এপ্রিল প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৬৪ টাকা কিনতে হয়েছে।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, প্রতি কেজি পেঁয়াজের উৎপাদন খরচ কত পড়ছে? চাষি কত পাচ্ছেন? চাহিদা কত? ঘাটতি কত? এসব সরকারকে মনিটরিং করতে হবে। আমরা তো দেখছি বিলের পর বিল অনাবাদি পড়ে আছে, চাষ করার লোক নেই। কৃষিকে উজ্জীবিত রাখতে হবে। ভোক্তা ও চাষি দুই দিক সামলাতে হবে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিয়ে।
সুত্র: বাংলানিউজ।