চট্টবাণী: নগরের বাসিন্দাদের জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি দিতে এবং কর্ণফুলী নদী বাঁচাতে গত বছরের শুরুতেই সব বাজার ‘পলিথিনমুক্ত’ করার ঘোষণা দিয়েছিলেন চসিক মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী।
চসিক পরিচালিত বিভিন্ন বাজার কমিটির প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় ২০২২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে বাজারগুলোকে পলিথিনমুক্ত করা হবে বলে জানিয়েছিলেন মেয়র।
এজন্য মাইকিং, পোস্টার, ফেস্টুন, ব্যানার, লিফলেট বিলি করে প্রচার চালাতে বলা হয় বাজার কমিটিকে। এরই ধারাবাহিকতায় সিটি করপোরেশনের ম্যাজিস্ট্রেট বাজার পরিদর্শন করে ব্যবসায়ীদের সতর্ক করেছেন।
তারপরও এক বছর ধরে বিভিন্ন সময়ে বাজারে অভিযান চালিয়ে পাওয়া গেছে নিষিদ্ধ পলিথিন, করা হয়েছে জরিমানা।এ অবস্থায় আরও কঠোর হচ্ছে চসিক। আগামী ১৬ জুলাই থেকে সিটি করপোরেশন ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন যৌথভাবে অভিযানে নামছে।
চসিকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পলিথিন একটি অপচনশীল বস্তু। যত্রতত্র পলিথিন ডাম্পিংয়ের ফলে নগরীর পরিবেশ দূষণ এবং ভারী বৃষ্টিপাতের সময় নালা-নর্দমায় পলিথিন জমে পানি চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয় । ফলে বর্ষা মৌসুমে নগরীতে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়ে জানমালের ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়ে থাকে। এমতাবস্থায় পলিথিন উৎপাদক, সরবরাহকারী ও ব্যবহারকারীদের আসন্ন বর্ষা মৌসুমের পূর্বে পলিথিন উৎপাদন এবং ব্যবহার থেকে বিরত থাকার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।
নগরীর পরিবেশ রক্ষা ও জলাবদ্ধতা প্রতিরোধে পলিথিন ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে ১৬ জুলাই থেকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রশাসন যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করবে। নগরীকে পরিবেশ দূষণ ও জলাবদ্ধতা থেকে বাঁচাতে পলিথিনের পরিবর্তে চটের ব্যাগ, কাগজের তৈরি ঠোঙাসহ পরিবেশ সহায়ক পলিথিনের বিকল্প ব্যাগ ব্যবহার করার জন্য নগরবাসীকে অনুরোধ করা হয়েছে।
চুয়েট এর গবেষণায় পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে চট্টগ্রামে ভয়াবহ দূষণ বিস্তারের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রতিদিন ৩ হাজার টন বর্জ্য তৈরি হয়। এসব বর্জ্যের ৮ দশমিক ৩ শতাংশ হিসাবে দৈনিক পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্যের পরিমাণ দাঁড়ায় ২৪৯ টন। যার ৩৫ দশমিক ৬১ শতাংশ রিসাইক্লিং যোগ্য। কিন্তু তা রিসাইক্লিং করা হয় না। এসব পলিথিন-প্লাস্টিক বর্জ্যের মধ্যে চসিকের পরিচ্ছন্নতা বিভাগ কর্তৃক সংগ্রহ হয় ১০৯ টন আর রয়ে যায় ১৪০ টন বর্জ্য। এই পলিথিন-প্লাস্টিক বর্জ্যই চট্টগ্রামের পরিবেশ তথা নদী-খাল-নালা, কৃষিজমি, সমুদ্রসৈকতসহ সর্বত্র ভয়াবহ দূষণ বিস্তার করে চলেছে। সেই সঙ্গে এগুলো নগরীর জলাবদ্ধতা এবং মশা-মাছি প্রজননেরও মূল কারণ।
চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন,পলিথিন নগরবাসীর জন্য অভিশাপ। এই পলিথিনের কারণে নগরের জলাবদ্ধতা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে। পলিথিনের কারণে নালা-নর্দমায় পানি জমে মশার প্রজনন বাড়ছে। পলিথিন কর্ণফুলী নদীর তলদেশে জমাট হয়ে আট ফুটের বেশি শক্ত স্তর তৈরি করেছে, যা কর্ণফুলী নদীতে ড্রেজিং করতে গিয়ে মারাত্মক ব্যাঘাত সৃষ্টি করেছে।
নেদারল্যান্ডস থেকে অত্যাধুনিক ড্রেজার এনেও নদীর পুরু পলিথিন স্তর ভেদ করে ড্রেজিং সম্পন্ন করা কঠিন হয়ে গেছে জানিয়ে মেয়র বলেন, এ অবস্থা চলতে থাকলে অচিরেই কর্ণফুলী নাব্যতা হারিয়ে মরা নদীতে পরিণত হবে। কর্ণফুলীর নদীর পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেলে চট্টগ্রাম বন্দরও কার্যকারিতা হারাবে।
চসিক পরিবেশ স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন বলেন, ইতিপূর্বে চসিকের উদ্যোগে পরীক্ষামূলকভাবে কাজীর দেউরী, চকবাজার ও কর্ণফুলী মার্কেট শতভাগ পলিথিনমুক্ত করা হয়েছে। এতে ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা পাওয়া গেছে।