• জাতীয়

    বাকি ৩ শতাংশ কাজ শেষ হলেই খুলবে স্বপ্নের কর্ণফুলী টানেল

      প্রতিনিধি ২৭ এপ্রিল ২০২৩ , ১২:১৯:২২ প্রিন্ট সংস্করণ

    চট্টবাণী: চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের কাজ শেষ হয়েছে ৯৭ শতাংশ। বাকি ৩ শতাংশ কাজ শেষ হলে দ্বার খুলবে স্বপ্নের এ টানেল। যদিও টানেলের মূল কাজ আগেই শেষ হয়েছে। তবে এ মুহূর্তে নিরাপত্তাজনিত কার্যক্রমগুলোর যাচাই-বাছাই চলছে। সবমিলিয়ে শিগগিরই টানেলের কাজ শেষ করা হবে বলে জানিয়েছেন এর প্রকল্প পরিচালক।

    বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক মো. হারুনুর রশিদ বলেন, এখন টানেলের ইলেক্ট্রোমেকানিক্যাল কাজ চলছে। টানেলকে জনসাধারণের নিরাপদভাবে চলাচলের উপযুক্ত করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ৯৭ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। চালুর বিষয়ে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে আমাদের কাজ শিগগিরই শেষ হয়ে যাবে।




    যদিও শিগগিরই বলতে আর কতদিন সময় লাগতে পারে তা সুনির্দিষ্ট করে জানাতে পারেননি তিনি।

    জানা গেছে, নির্মাণের আগে করা সমীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী টানেল চালুর পর এর ভেতর দিয়ে বছরে ৬৩ লাখ গাড়ি চলাচল করতে পারবে। সে হিসেবে দিনে চলতে পারবে ১৭ হাজার ২৬০টি গাড়ি। ২০২৫ সাল নাগাদ টানেল দিয়ে গড়ে প্রতিদিন ২৮ হাজার ৩০৫টি যানবাহন চলাচল করবে। যার মধ্যে অর্ধেক থাকবে পণ্যবাহী পরিবহন। ২০৩০ সাল নাগাদ প্রতিদিন গড়ে ৩৭ হাজার ৯৪৬টি এবং ২০৬৭ সাল নাগাদ এক লাখ ৬২ হাজার যানবাহন চলাচলের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা আছে।

    সংশ্লিষ্টরা জানান, নদীর তলদেশে নির্মিত দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম টানেল এটি। কর্ণফুলী নদীর দুই তীর সংযুক্ত করে চীনের সাংহাই শহরের আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ গড়ে তোলার লক্ষ্যে টানেলটি নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। টানেল চালু হলে ঢাকা এবং চট্টগ্রামের সঙ্গে কক্সবাজারের যোগাযোগ সহজ হবে। দক্ষিণ চট্টগ্রামে গড়ে ওঠবে নতুন শিল্পকারখানা।




    টানেল নির্মাণে মোট ব্যয় ধরা হয় ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে ৪ হাজার ৪৬১ কোটি টাকা। বাকি ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা দিচ্ছে চীন সরকার। চীনের এক্সিম ব্যাংক ২ শতাংশ হারে ২০ বছর মেয়াদি এ ঋণ দিয়েছে। দেশটির কমিউনিকেশন ও কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিসিসিসি) টানেল নির্মাণের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। তবে ডলারের দাম বৃদ্ধিসহ নানা কারণে প্রকল্পের ব্যয় আরও বাড়বে বলে প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে।




    টোল হার প্রস্তাবনা চূড়ান্ত

    বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলে মোটরসাইকেল ও থ্রি হুইলার যানবাহন চলাচল করতে পারবে না বলে জানিয়েছে সেতু কর্তৃপক্ষ। এসব ছাড়া ইতোমধ্যে ১২ ধরনের যানবাহনের জন্য টোল হার প্রস্তাবনা চূড়ান্ত করা হয়েছে। কর্ণফুলী নদীর ওপর দিয়ে নির্মিত শাহ আমানত সেতুর বিবেচনায় টানেলের এ টোল হার নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে টানেলে সেতুর তুলনায় আড়াই থেকে ছয় শতাংশ বেশি টোল প্রস্তাব করা হয়েছে।

    সেতু কর্তৃপক্ষের নির্ধারণ করা টোল অনুযায়ী, টানেলে প্রাইভেটকার ও জিপকে দিতে হবে ২০০ টাকা, মাইক্রোবাসকে ২৫০ টাকা, পিকআপকে ২০০ টাকা, ৩১ বা তার চেয়ে কম সিটের বাসকে ৩০০ টাকা এবং ৩২ বা তার চেয়ে বেশি আসনের বাসকে দিতে হবে ৪০০ টাকা।




    আবার ৫ টন ধারণক্ষমতার ট্রাক থেকে টানেলে টোল নেওয়া হবে ৪০০ টাকা, ৫ থেকে ৮ টনের ট্রাকে ৫০০ টাকা এবং ৮ থেকে ১১ টনের ট্রাককে ৬০০ টাকা টোল দিতে হবে।

    এছাড়া ৩ এক্সেল পর্যন্ত ট্রাক চলাচলে টানেলে টোল দিতে হবে ৮০০ টাকা, ৪ এক্সেল পর্যন্ত ট্রেইলারকে ১ হাজার টাকা এবং ৪ এক্সেলের বেশি হলে প্রতি এক্সেলের জন্য দিতে হবে ২০০ টাকা।

    জানা গেছে, ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিন পিং টানেল প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম টানেল টিউবের বোরিং কাজের উদ্বোধন করেন। ২০২০ সালের ১২ ডিসেম্বর সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দ্বিতীয় টিউবের বোরিং কাজের উদ্বোধন করেন। সর্বশেষ গত বছরের ২৬ নভেম্বর টানেলের প্রথম টিউবের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।