আঃ জলিল,খুলনা অফিস: একদিকে প্রচন্ড গরম, অপরদিকে ঘন ঘন লোডশেডিং এ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে শার্শাবাসীর জনজীবন। প্রচন্ড গরমে দিনে-রাতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকায় অতিষ্ঠ শার্শাবাসী।
দিনে তিন থেকে চার বার, আবার কোন কোন এলাকায় পাঁচ থেকে ছয়বারও বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে। একটানা দুই থেকে তিন ঘণ্টার বেশিও লোডশেডিং হচ্ছে কোথাও। বাদ যাচ্ছে না ইফতারি, তারাবিহ নামাজ ও সেহরির সময়। এতে কর্মজীবী ও রোজাদার মানুষের দৈনন্দিন কাজে চরম ব্যাঘাত ঘটছে।
গত কয়েকদিন ধরে যশোরের শার্শা এলাকায় মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিং শুরু হয়েছে। এর ফলে ভোগান্তিতে পোহাতে হচ্ছে শিশু, শিক্ষার্থী, রোগী ও ব্যবসায়ীসহ সববয়সী এবং শ্রেণি-পেশার মানুষকে। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয় নবজাতক ও রোগীদের। বাইরের কড়া রোদ আর ঘরে বিদ্যুৎ না থাকায় ভ্যাপসা গরমে ঠিকমতো ঘুমাতেই পারছেন না তারা। একটু পরপর বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় ঘুমও ভেঙে যাচ্ছে তাদের।
অভিভাবকরা বলছেন, অতিরিক্ত লোডশেডিংয়ের ফলে রাতে ঘুম না হওয়ায় দিনের বেলায় এর প্রভাব পড়ছে। পড়াশুনায় মনোযোগী হতে পারছেনা শিক্ষার্থীরা।
দেখাযায়, সকাল ৭টার পর থেকে সূর্যের তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। দুপুরে তীব্রতা আরও বেশি। রোজাদারের জন্য কষ্ট বেড়েছে কয়েকগুণ। প্রচণ্ড এ গরমে সবচেয়ে বিপদে আছেন খেটে খাওয়া মানুষগুলো। রোদে তাকালেই চোখ যেন ঝাপসা হয়ে আসে। টানা গরম আর অনাবৃষ্টিতে মানুষের প্রাণ প্রায় ওষ্ঠাগত। গরম বাতাস শরীরে লাগছে আগুনের হলকার মতো। ঘরে-বাইরে কোথাও স্বস্তি নেই।
এর মধ্যে মরার ওপর খাড়ার ঘাঁ হয়ে এসেছে ঘন ঘন লোডশেডিং। লোডশেডিং হলে বাসার মধ্যে যেন দম বন্ধ হওয়ার মতো অবস্থা। শহরের তুলনায় গ্রামে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ আরও বেশি।
একই অবস্থা ব্যবসায়ীদেরও। বিদ্যুৎ না থাকায় ক্রেতা সংকটে ক্ষতির মুখে পড়েছেন তারা। করোনা পরবর্তী সময়ে বৈশ্বিক নানা সংকটের মধ্যে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় বাগড়া দিচ্ছে লোডশেডিং। ঈদের বেঁচাকেনায় দিনেও বিদ্যুৎ না থাকায় অন্ধকারে অলস সময় পার করছেন তারা। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, দিনে-রাতে গড়ে কয়েক ঘণ্টা করে ৪-৫ বারও হচ্ছে লোডশেডিং। পিক আওয়ারে অতিরিক্ত লোডশেডিং হওয়ায় ক্রেতারাও আসছেন না। ফলে কমে গেছে কেনাবেচাও।
অপরিকল্পিত এমন লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ মানুষ এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে নিজেদের মনের ভাব প্রকাশ করছেন। বিদ্যুৎ চলে গেলেই কেউ কেউ ব্যাঙ্গাত্মকভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে লিখছেন, 'বিদ্যুতের বিজ্ঞাপন বিরতি চলছে'।
একজন বেসরকারি স্কুলের শিক্ষক তৌফিক হোসেন লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেন, 'পল্লী বিদ্যুৎ! ২/৩ ঘন্টা পরে আসেন ৩০ মিনিট পর ফুরুৎ করে চলে যান! আলোর জন্য আকাশের চাঁদই ভরসা কিন্তু গরমে বাতাসের কী ব্যবস্থা হবে?
জেনারেল ম্যানেজার, যশোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর তরফ থেকে এক বিজ্ঞপ্তি জানানো হয়, রমজানের শুরুতে তাপমাত্রা ছিল ২৫-২৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস, বর্তমানে তা বেড়ে প্রায় ৪১-৪২ ডিগ্রী সেলসিয়াস। রমজানের শুরুতে যশোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর চাহিদার অনুযায়ী বিদ্যুতের প্রাপ্যতা/সরবরাহ ছিল, ফলে সে সময় লোডশেড হতোনা। বর্তমানে অত্যাধিক গরমের কারণে গ্রাহকদের বিদ্যুতের চাহিদা অনেক বেড়ে গেছে (বর্তমানে বিদ্যুৎ চাহিদা ১৫১ মেগাওয়াট কিন্তু প্রাপ্যতা রয়েছে ১০৩ মেগাওয়াট। ঘাটতি ৪৮ মেগাওয়াট) কিন্তু বিদ্যুতের প্রাপ্যতা/সরবরাহ বাড়েনি। সারা দেশে এভাবেই বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে এবং ঘাটতি রয়েছে। প্রচন্ড তাপদাহের সময় বিদ্যুতের চাহিদা ও প্রাপ্যতার মধ্যে সমন্বয় করতে হচ্ছে। যার কারণে সারা দেশের ন্যায় যশোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর আওতাধীন বিভিন্ন এলাকায় পর্যায়ক্রমে লোডশেডিং করার প্রয়োজন হচ্ছে।
ফলে তিনি, গ্রাহকগণকে ধৈর্য্য ধারণসহ লোডশেডিং এর জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকা এবং বিদ্যুৎ ব্যবহারে মিতব্যয়ী হওয়ার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানান।