চট্টবাণী ডেস্ক: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) হচ্ছে না। এক্ষেত্রে ৩০০ আসনে ব্যালট পেপারে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
সোমবার (৩ এপ্রিল) নির্বাচন ভবনের কমিশন বৈঠক শেষে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব মো. জাহাংগীর আলম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক ঐক্যমত না হওয়ায় এবং প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান না হওয়ায় ৩০০ আসনেই ব্যালট পেপারে ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কমিশন।
কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন গত বছর ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই বিভিন্ন অংশীজন ও প্রযুক্তিবিদদের সঙ্গে বৈঠক করে সর্বোচ্চ ১৫০ আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয়। যদিও এ সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করছিল বিএনপিসহ বেশকিছু রাজনৈতিক দল।
নির্বাচন কমিশন তার রোডম্যাপে এ সিদ্ধান্ত অন্তর্ভূক্ত করার পর দুই লাখ ইভিএম কেনার জন্য সরকারের কাছে নতুন একটি প্রকল্প প্রস্তাব দেয়। ৮ হাজার ৭১১ কোটি ৪৪ লাখ টাকার ওই প্রকল্প প্রস্তাবটি বৈশ্বিক আর্থিক সংকটের কারণ দেখিয়ে সরকার আপাতত স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত জানায়।
এরপর নির্বাচন কমিশন হাতে থাকা দেড় লাখ মেশিন মেরামতের জন্য ১ হাজার ২৬০ কোটি টাকা চায়। সেই অর্থও চলতি বছর দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানায় সরকার। এক্ষেত্রে আগামী অর্থ বছরের এই অর্থ দেওয়ার কথা বলে অর্থ মন্ত্রণালয়।
এদিকে ইভিএম মেরামতের জন্য এখনই অর্থ না পাওয়া গেলে সংসদ নির্বাচনের আগে হাতে থাকা মেশিনগুলো ব্যবহার উপযোগী করে তোলা সম্ভব নয় বলে জানায় প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ)। কেননা, চলতি বছর ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ অথবা আগামি জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ অবস্থায় কমিশন বৈঠক ডেকে ইভিএম মেশিন আগামী সংসদ নির্বাচন ব্যবহার করা থেকে সরে এলো নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থাটি।
ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচনে ইভিএমে ভোট না হলেও স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে ইভিএমে ভোট হবে। নির্বাচনের আগে সময় স্বল্পতা ও অর্থমন্ত্রণালয় থেকে অর্থ পেতে নিশ্চয়তা না পাওয়া এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ইভিএম ব্যবহারের বিষয়ে যে ঐক্যমতের অভাব; এ তিন কারণে সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।
এক-এগার সরকারের সময়কার ড. এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন ভোটে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর লক্ষ্যে ইভিএমের প্রচলন শুরু করে। সে সময় তারা বুয়েটের কাছ থেকে মেশিন তৈরি করে নেয়। ওই কমিশনের পরিকল্পনা ছিল স্থানীয় নির্বাচনে মেশিনটি ব্যবহার করে জনপ্রিয়তা অর্জনের পর ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের।
শামসুল হুদা কমিশনের পর কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন কমিশন এসে বুয়েটের তৈরি সেই মেশিন আর সফলভাবে ব্যবহার করতে পারেনি। ২০১৫ সালে রাজশাহী সিটি নির্বাচনে একটি মেশিনে সমস্যা দেখা দিলে ব্যাপক বিড়ম্বনায় পড়তে হয় তাদের। ফলশ্রুতিতে বুয়েটের তৈরি ওই মেশিন নষ্ট করে আরও উন্নতমানে ইভিএম তৈরির সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন। পরবর্তীতে কেএম নূরুল হুদার কমিশন এসে ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১০০ আসনে মেশনটি ব্যবহারের লক্ষ্যে বিএমটিএফের কাছ থেকে প্রায় ২০ গুণ বেশি দামের দেড় লাখ ইভিএম তৈরি করে নেয়। এরই মাঝে সেই মেশিনগুলোর মধ্যে ৪০ হাজার একেবারের ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে।
এছাড়া বাকি এক লাখ ১০ হাজার মেশিনেরও রয়েছে নানা ত্রুটি। এ ত্রুটি সারিয়ে এবং নতুন দুই লাখ মেশিন কিনে সর্বোচ্চ ১৫০ আসনে ইভিএম ব্যবহার করতে চেয়েছিল বর্তমান আউয়াল কমিশন। কিন্তু তাদের দেওয়া কোনো প্রস্তাবেই সাড়া মিললনা সরকারের তরফ থেকে।