খেলাধুলা ডেস্ক: ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টি উভয় সিরিজেই দাপট ছিল বাংলাদেশের। ওয়ানডেতে এক ম্যাচ বৃষ্টিতে ভেসে গেলেও বাকি দুটোতেই রেকর্ড গড়ে জিতেছিল টাইগাররা। আর টি-টোয়েন্টিতেও প্রথম দুই ম্যাচে আইরিশদের রীতিমতো উড়িয়ে দিয়েছিল সাকিবের দল। কিন্তু শেষ ম্যাচে এসে মুদ্রার উল্টো পিঠ দেখেছে স্বাগতিকরা। রেকর্ডময় এক সিরিজের শেষটা হয়েছে তাই নীল। ঘরের মাঠে প্রথমবারের মত কোনো ম্যাচে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে হেরেছে বাংলাদেশ। ৭ উইকেটের বড় হারে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতেই সন্তুষ্ট থাকতে হল স্বাগতিকদের।
আগে ব্যাটিং করতে নেমে আজ ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ। রীতিমতো অসহায় আত্মসর্মপণ করেছেন সাকিব-শান্তরা। তবে এদিন ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে একাই লড়েছেন শামীম, তার ব্যাটে ভর করেই ১২৪ রানের পুঁজি পায় স্বাগতিকরা। জবাবে ১৪ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় আইরিশরা।
ছোট লক্ষ্য তাড়ায় শুরুটা ভালোই করেছিল আয়ারল্যান্ড। দুই আইরিশ ওপেনার প্রথম ওভার থেকেই আক্রমণাত্মক খেলেছেন। তবে খুব বেশি দূর এগোতে পারেননি রস অ্যাডায়ার। এই ওপেনারকে সাজঘরে ফিরিয়ে আইরিশ শিবিরে প্রথম আঘাত হানেন তাসকিন আহমেদ। ইনিংসের তৃতীয় ওভারের চতুর্থ বলটি স্টাম্পের ওপর ইয়র্কার করেছিলেন তাসকিন, তাতেই উইকেট ভেঙেছে অ্যডায়ারের। ৭ রান করে এই ওপেনার ফিরলে ভাঙে ১৭ রানের উদ্বোধনী জুটি।
অ্যডায়ার ফিরে গেলেও আরেক ওপেনার স্টার্লিং এদিন দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছেন। তবে সুবিধা করতে পারেননি লরকান টাকার। দীর্ঘদিন পর দলে ফেরা শরিফুল ইসলাম শুরুটা করেছেন স্বপ্নের মতো। ষষ্ঠ ওভারে আক্রমণে এসে প্রথম বলেই উইকেটের দেখা পেয়েছেন। তার খাটো লেন্থের বলে পুল করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফিরেছেন ৪ রান করা টাকার।
এরপরের গল্পটা শুধুই স্টার্লিংয়ের। এই ওপেনার এদিন ঝড় তুলেছেন জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। তাতে উড়ে গেছে বাংলাদেশের বোলাররা। ছোট সংগ্রহ ডিফেন্ড করতে গিয়ে এক স্টার্লিংয়ের কাছেই যেন অসহায় ছিলেন তাসকিন-হাসানরা। দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে ৩১ বলে স্পর্শ করেছেন হাফ সেঞ্চুরি। সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে সর্বোচ্চ ৭৭ রানের ইনিংস। এই অভিজ্ঞ ওপেনারকে সাজঘরে ফিরিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের অভিষেক উইকেট শিকার করেছেন রিশাদ হোসেন।
এরপর ক্যাম্পারকে সঙ্গে নিয়ে বাকিটা পথ নিরাপদেই পাড়ি দিয়েছেন ট্যাক্টর। শেষ পর্যন্ত ১৪ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় আইরিশরা। এই ম্যাচ হারলেও ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ।
এর আগে ব্যাটিংয়ে নেমে আজ পুরোপুরি ব্যর্থ বাংলাদেশ। ইনিংসের প্রথম বলে চার হাঁকিয়ে শুরু করলেও সেটা ধরে রাখতে পারেনননি লিটন দাস। সাজঘরে ফিরেছেন দ্বিতীয় ওভারেই। অ্যাডায়ারের করা প্রথম বলটি অফ স্টাম্পের অনেক বাইরে ছিল, খাট লেন্থের এই বল ডিপ পয়েন্টের ওপর দিয়ে উড়িয়ে মারতে গিয়ে সীমানায় দাঁড়িয়ে থাকা ডকরেলের হাতে ধরা পড়েন লিটন। তার ব্যাট থেকে এসেছে ৪ বলে ৫ রান।
লিটনের পর উইকেটে এসে থিতু হতে পারেননি শান্তও। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে শেষ বলটি অফ স্টাম্পের বাইরে ছিল, সেখানে ছক্কা হাকাতে গিয়ে টাইমিং করতে পারেননি তিনি। তাতে মিড অফে ধরা পড়েন। এই টপ অর্ডার ব্যাটারের ইনিংসের দৈর্ঘ্য ছিল ৮ বল। সেখানে তিনি সংগ্রহ করতে পেরেছেন কেবল ৪ রান।
এরপর লিটনের পথেই হেটেছেন রনিও। তবে শুরুটা ভালো ছিল এই ওপেনারের। কিন্তু ইনিংস লম্বা করতে পারলেন না। চতুর্থ ওভারের পঞ্চম বলে ডীপ মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ১০ বলে ১৪ রান। তার বিদায়ে ২৪ রানেরভ মধ্যেই টপ অর্ডারের ৩ ব্যাটারকে হারাল বাংলাদেশ।
লিটন-শান্তদের সঙ্গে এদিন ব্যর্থতার মিছিলে যোগ দেন সাকিব আল হাসানও। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে পুল করতে গিয়ে হোয়াইটের হাতে সহজ ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন অধিনায়ক। সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ৬ রান। তার বিদায়ে পাওয়ার প্লেতেই ৪ উইকেট হারিয়ে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ।
সাকিবের পর বাংলাদেশের সর্বশেষ স্বীকৃত ব্যাটিং জুটি ছিল তাওহিদ হৃদয় এবং শামিম হোসেনের। কিন্তু ইনফর্ম হৃদয় এদিন দলের হাল ধরতে পারেননি, বরং বিপদ আরও বাড়িয়েছেন। হোয়াইটের সপ্তম ওভারের তৃতীয় বলটি লেন্থ ডেলিভারী ছিল, সেখানে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে ব্যাটের কানায় লেগে বল সোজা উপরে উঠে যায় আর সহজ ক্যাচ লুফে নিতে ভুল করেননি হ্যারি ট্যাক্টর। সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ১০ বলে ১২ রান। হৃদয়ের বিদায়ে দলীয় অর্ধশতক স্পর্শ করার আগেই ৫ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
এমন বিপর্যয়ের মুখে উইকেটে আসেন রিশাদ হোসেন। অভিষিক্ত এই স্পিনারের আসল কাজটা বল হাতে তবুও এদিন দলের প্রয়োজনে ব্যাট হাতেও লড়াই করেছেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের তৃতীয় বলেই রানের দেখা পেয়েছেনব তিনি। সেটাও আবার বোলারের মাথার ওপর দিয়ে স্টেট ড্রাইভে বিশাল এক ছক্কা হাঁকিয়ে। এমন দুর্দান্ত শুরুর পরও নিজের অভিষেক ইনিংসটা খুব বেশি লম্বা করতে পারেননি। দশম ওভারের প্রথম বলে হ্যাম্পেয়ার্সের ইয়র্কারে বোল্ড হওয়ার আগে নামের পাশে যোগ করেছেন ৮ রান।
রিশাদের এক বল পরই সাজঘরে ফিরেছেন তাসকিন। বিপর্যয়ের মুখে অনেকবারই তার ব্যাটে লড়াই করার পুঁজি পেয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু আজ সেই আশার গুড়ে বালি দিয়ে ডাক খেয়ে ফিরেছেন তাসকিন।
প্রথম দশ ওভারের মধ্যেই ৭ ব্যাটারকে হারিয়ে অলআউটের শঙ্কায় পড়ে স্বাগতিকরা। তবে সেই শঙ্কার মেঘ কেটেছে শামিমের ব্যাটে। নাসুমকে সঙ্গে নিয়ে দলকে খাদের কিনারা থেকে টেনে তুলেছেন এই মিডল অর্ডার ব্যাটার। এই দুইজনের জুটিতে কিছুটা হলেও বিপর্যয় সামাল দেয় বাংলাদেশ। ১৭ বলে ১৩ রান করে নাসুম বিদায় নিলে ভাঙে ৩৩ রানের জুটি।
ব্যাটারদের এই আসা-যাওয়ার মাঝেও এক প্রান্ত আগলে ধরে লড়াই করেছেন শামিম। তার দৃঢ়তায় ১৬ ওভারেই দলীয় শতক পূর্ণ করে দল। এরপর ১৯তম ওভারে ব্যাক্তিগত হাঁফ সেঞ্চুরি পূরণ করেছেন ৪০ বলে। তবে ফিনিশিংটা ঠিকমতো করতে পারেননি। শেষ ওভারের দ্বিতীয় বলে ৫১ রান করে শামীম ফিরলে ১২৪ রানে থামে বাংলাদেশের ইনিংস।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ১৯.২ ওভারে ১২৪ (লিটন ৫, রনি ১৪, শান্ত ৪, সাকিব ৬, হৃদয় ১২, শামীম ৫১, রিশাদ ৮, তাসকিন ০, নাসুম ১৩, শরিফুল ৫, হাসান ২*; হ্যান্ড ২.২-০-১৫-১, মার্ক অ্যাডায়ার ৪-০-২৫-৩, টেক্টর ৪-০-২৮-১, ক্যাম্পার ৪-০-২৩-১, হোয়াইট ২-০-১৫-১, হামফ্রেজ ২-০-১০-২, ডেল্যানি ১-০-৭-১)।
আয়ারল্যান্ড: ১৪ ওভারে ১২৬/৩ (স্টার্লিং ৭৭, রস অ্যাডায়ার ৭, টাকার ৪, টেক্টর ১৪*, ক্যাম্পার ১৬*; তাসকিন ৪-০-২৮-১, সাকিব ২-০-১৫-০, হাসান ২-০-২৬-০, শরিফুল ২-০-২৫-১, নাসুম ১-০-১২-০, রিশাদ ৩-০-১৯-১)।
ফল: আয়ারল্যান্ড ৭ উইকেটে জয়ী।
সিরিজ: ৩ ম্যাচ সিরিজে বাংলাদেশ ২-১ ব্যবধানে জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ: পল স্টার্লিং।
ম্যান অব দা সিরিজ: তাসকিন আহমেদ।