আহমদুল হক, রামু উপজেলা প্রতিনিধি: সর্বশেষ জলবায়ু নেগোসিয়েশন ও বৈশ্বিক উদ্যোগ বিষয়ে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সংগঠন সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্ট, হিউম্যান রাইটস এন্ড ডেভেলপমেন্ট ফোরাম - সিইএইচআরডিএফ এর উদ্যোগে সিইএইচআরডিএফ ক্লাইমেট কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এতে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবেলায় তড়িৎ পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য রাষ্ট্রীয় ও বিশ্ব নেতৃত্বের প্রতি আহবান জানান অংশগ্রহণকারী ও বক্তাগণ।
সিইএইচআরডিএফ এর সহকারী প্রধান লিডার(এলডিএস) আব্দুল মান্নান রানা'র সঞ্চালনায় ও প্রধান নির্বাহী মোঃ ইলিয়াছ মিয়া'র সভাপতিত্বে কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশ কার্যালয়ের কনফারেন্স রুমে সিইএইচআরডিএফ জলবায়ু কনফারেন্সটি অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় বক্তরা বলেন জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবের ফলে সমগ্র পৃথিবী আজ একটি নতুন সংকটে প্রবেশ করেছে। এই সংকট বিশ্বব্যাপী উদ্বিগ্নতা তৈরি করেছে। জলবায়ু স্বাক্ষরতা, লজ এন্ড ডেমেজ, এডাপ্টেশন এন্ড মিটিগেশন, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, প্রাকৃতিক পরিবেশের সু্রক্ষা, উন্নয়নে স্বচ্ছতা ও জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ, কপ-২৭ এর নেগোচিয়েশন, কপ-২৮ এর সম্ভাবনা সহ নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর মৌলিক আলোচনায় ফোকাস করেন।
বক্তারা আরও বলেন, সারা পৃথিবী জলবায়ু পরিবর্তন এর সংকট মোকাবেলা করছে। ২১০০ সাল নাগাদ ১.৫ ডিগ্রি তাপমাত্রা না কমাতে পারলে ভবিষ্যতে মানব প্রজন্ম হুমকির মুখে পড়বে। বক্তারা বলেন, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও প্রতিবেশগত সংকট থেকে বাংলাদেশ কে বাঁচাতে সবুজ জলবায়ু তহবিল থেকে নায্য বরাদ্দ দিতে হবে।
এতে বক্তব্য রাখেন রিভার এন্ড ইকোলজি নেটওয়ার্ক চেয়ারপার্সন এডভোকেট আবু হেনা মোস্তফা কামাল, শিক্ষাবিদ, চিন্তক ও এক্টিভিস্ট মকবুল আহমেদ, রাজনীতিক ও কক্সবাজার পৌরসভার ১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর এস আই এম আকতার কামাল আজাদ, নেচার কনজারভেশন ম্যানেজমেন্ট- নেকম এর উপ-পরিচালক ড.শফিকুর রহমান।
অতিথিদের বক্তব্যে শিক্ষাবিদ মকবুল আহমেদ বলেন, কক্সবাজার জলবায়ু পরিবর্তন এর সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে আছে। কক্সবাজার কে বাঁচাতে হলে টেকসই উন্নয়ন এর বিকল্প নেই। সরকারকে দ্বিচারিতা বন্ধ করে টেকসই উন্নয়ন এর জন্য কাজ করতে হবে। তিনি আরও বলেন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান গুলোকে আসন্ন এই সংকট মোকাবেলায় আরও তৎপর কর্মসূচি গ্রহণ করা সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দাবি।
নদী রক্ষায় সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল, নদী পাড়ের সাধারণ জনগণ সহ সর্বস্তরের নাগরিককে চূড়ান্ত ভূমিকা রাখার আহবান জানিয়েছেন আইনজীবী আবু হেনা মোস্তফা কামাল।
কক্সবাজার পৌরসভা কাউন্সিলর এস আই এম কামাল উদ্দীন আযাদ বলেন, বৈশ্বিক উঞ্চতার কারণে দিন দিন পৃথিবী গরম হয়ে যাচ্ছে, প্রতিবছর অনেক দূর্যোগের সম্মুখীন হচ্ছে জনগণ। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে হাজার মানুষ উদ্বাস্তু হচ্ছে, জীবনমানের অবনতি হচ্ছে। তাদের জন্য এবং এ সব এলাকার টেকসই উন্নয়নের জন্য আমাদের সচেতন হতে হবে।জলবায়ু পরিবর্তনে কারণ গুলো চিহ্নিত করে ওই সব বিষয় নিয়ে কাজ করতে হবে। না হয় অদূর ভবিষ্যতে পৃথিবীর জন্য ভয়াবহ দিন অপেক্ষা করছে।
পরিবেশবিদ ড.শফিকুর রহমান বলেন, জীববৈচিত্র ধ্বংস করে কোনো উন্নয়নই টেকসই নয়। পৃথিবীর প্রতিটি প্রাণ-প্রকৃতির নিজস্বতা রয়েছে।আমরা আমাদের রাজত্ব কায়েম করতে গিয়ে জীববৈচিত্রকে ধ্বংস করতে পারি না।সেই দিকে আমাদের নজরদারিত্ব রাখতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী মোঃ ইলিয়াছ মিয়া বলেন,পৃথিবীর সব থেকে বড় সংকট জলবায়ু পরিবর্তন জনিত সংকট এই সংকটের কারণে পুরো পৃথিবী ভুক্তভোগী। উন্নয়নশীল এবং অনুন্নত রাষ্ট্র গুলো জন্য জলবায়ু ন্যায়বিচারের জন্য তরুণ সহ সর্বস্তরের মানুষদের কথা বলা অতীব জরুরি বিষয়ে রূপ নিয়েছে। তিনি বলেন,সর্বশেষ জলবায়ু বিষয়ক সবচেয়ে বড় কনফারেন্স কপ-২৭ এ বিশ্ব নেতারা এক জায়গায় মিলিত হলেও কার্যত কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি। তিনি আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়টি কোন ফেলনা নই যে বিশ্ব নেতারা এটিকে পাশ কাটিয়ে যাবে। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবেলায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত,প্যারিস জলবায়ু চুক্তির বাস্তবায়ন, কপ-২৮ এ আশানুরূপ সিদ্ধান্ত সহ জলবায়ু পরিবর্তনের ইস্যুতে নানা বিষয়ের আলোচনার মধ্যদিয়ে বিশ্বনেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। পাশাপাশি, তরুণদের প্রতি বিশ্বমানব কল্যাণে কাজ করার আহবান রাখেন।
কনফারেন্সে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সহকারী প্রধান সমন্বয়ক(এসওএস) ও জলবায়ু কনফারেন্স এর আহবায়ক রুহুল আমিন।
এতে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সহকারী প্রধান সংগঠক(ওডিএস) রেজাউল করিম ও ব্যবস্থাপনা ডিভিশন এক্টিং কো-অর্ডিনেটর রেজাউল হায়াত রেজা প্রমুখ।
কনফারেন্সের শুরুতে পবিত্র কুরআন থেকে তেলাওয়াত করেন কক্সবাজার সদর এরিয়া কাউন্সিল সেক্রেটারি এমদাদুল হক।
কনফারেন্স এর সার্বিক তত্বাবধান করেন আহবায়ক কমিটির সচিব ও নিয়ন্ত্রণ ডিভিশনের ফোকাল অর্গানাইজার জিহাদুল ইসলাম।
এতে উপস্থিত ছিলেন সিইএইচআরডিএফ কক্সবাজার সদর, রামু, ঈদগাঁও, মহেশখালী, উখিয়া, টেকনাফ, কুতুবদিয়া ও কক্সবাজার শহর এরিয়া কাউন্সিলের দায়িত্বশীলবৃন্দ।