প্রতিনিধি ২৪ মার্চ ২০২৩ , ১০:১৯:৪৫ প্রিন্ট সংস্করণ
মুজিবুল্লাহ আহাদ : চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ১নং রাজানগর ও দক্ষিণ রাজানগর ইউনিয়নের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ইছামতী নদীর উপর স্বাধীনতার দীর্ঘ ৫০ বছর পরেও নির্মিত হয়নি কোন সেতু। ফলে রশি টেনে নৌকা দিয়ে নদী পার হতে হচ্ছে রাজানগর ও দঃ রাজানগর ইউনিয়নের বড়ুয়াপাড়া, হরিণাছড়া, শিয়ালবুক্ক ও ফুলবাগিচাসহ আশেপাশের আরও ৮ গ্রামের ২০ হাজার মানুষকে। চরম দূর্ভাগ ও ঝুঁকি নিয়ে নদী পারাপার করলেও এসব মানুষের কষ্ট যেন দেখার কেউ নেই।
নির্মিত না হওয়ায় যুগ যুগ ধরে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন দুই ইউনিয়নের প্রায় ২০ হাজার মানুষ। বিশেষ করে একটি সেতুর অভাবে উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত রাজানগর ইউনিয়নের শিয়ালবুক্ক এলাকার নদীবেষ্টিত ৩ গ্রামের ১০ হাজার মানুষ।
‘সরকার যায়, সরকার আসে, এমপি যায়, মন্ত্রী আসে, কিন্তু দুঃখের বিষয় আমাদের ইছামতী নদীর উপর একটি সেতু হয় না। ঘোচে না আমাদের দুর্ভাগ দুঃখ দুর্দশা। অথচ নির্বাচনের সময় সব দলের প্রার্থীরা ইছামতী নদীর উপর ব্রিজ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিলেও আজও কেউ কথা রাখেনি।’ ক্ষোভের সঙ্গে কথা গুলো বলছিলেন রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ১নং রাজানগর ইউনিয়নের শিয়ালবুক্ক এলাকার বাসিন্দা আবুল বশর।
কাপ্তাই সড়ক ও চট্টগ্রাম-রাঙামাটি সড়কের সংযোগ সড়ক হচ্ছে পারুয়া-রানীরহাট কালীন্দা রাণী সড়ক। উপজেলা ও জেলা শহরে যাতায়েতের একমাত্র পথ হচ্ছে এই সড়ক। এই কালীন্দা রাণী সড়কটি বয়ে গেছে রাজানগর ও দঃ রাজানগর ইউনিয়নের উপর দিয়ে। আর উক্ত ইউনিয়ন দু’টির উপর দিয়ে প্রবাহিত ইছামতী নদী। নদীর পশ্চিম পাশে রয়েছে ৩টি গ্রাম, পূর্ব পাশে রয়েছে ৫টি গ্রাম। পশ্চিম পাশের ৩ গ্রামের তিনদিক থেকে ঘিরে রেখেছে ইছামতী নদী।
অনেকটা দ্বীপের মতো এই গ্রামের প্রাইমারি – হাই স্কুল, কলেজ ও মাদরাসায় পড়ুয়া প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন রশি টানা নৌকা দিয়ে ইছামতী নদী পার হয়ে রাজাভূবন স্কুল, খন্ডলিয়া পাড়া মাদ্রাসা, আলমশাহ পাড়া কামিল মাদ্রাসা, উত্তর রাঙ্গুনিয়া হাই স্কুল, উত্তর রাঙ্গুনিয়া ডিগ্রি কলেজ, রাণীরহাট কলেজে যাতায়াত করেন।এছাড়াও প্রতিদিন এপাশ ওপাশের মানুষজন নিত্য কাজে শিয়ালবুক্ক ঘাট দিয়ে এই নদী পারাপার হন। একই সাথে জেলা ও উপজেলা সদরে বিভিন্ন কাজসহ কৃষিকাজে আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে চাষাবাদ করা, অফিস-আদালত, হাট-বাজার, অসুস্থদের চিকিৎসাসেবা নিতে যাতায়াত করে এখানকার হাজার হাজার মানুষ।
সেতু না থাকায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় পশ্চিম পাড়ের ৩ গ্রামের মানুষদের। বেশী ভোগান্তিতে পড়তে হয় শিশু-নারী ও বৃদ্ধদের। ঘাটে এসে তাদের অপেক্ষা করতে হয় পুরুষদের জন্য। এরপর রশি টেনে নৌকা নিয়ে নদী পার হতে হয়। বর্ষাকালে এ ভোগান্তি, দুর্দশা তীব্র আকার ধারণ করে। শুধু তাই নয় বর্ষা মৌসুমে এই নদী পার হওয়া অনেক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। নদী পার হতে গিয়ে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার শিকারও হতে হয় এসব গ্রামবাসীদেরকে। প্রায়শ নৌকা ডুবির ঘটনা ঘটে বলে জানান এলাকাবাসী।
রোকসানা আক্তার নামে রাজভূবন উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর এক ছাত্রী জানান, আমাদেরকে প্রতিদিনই রশি টেনে নৌকা নিয়ে নদী পার হয়ে স্কুলে যেতে হয়। অনেক সময় নৌকা না পেলে স্কুলে পৌঁছাতে দেরি হয়। আর শুষ্ক মৌসুমে হাঁটু পানি পার হতে হয়। বর্ষা মৌসুমে নদীতে পানি বৃদ্ধি পেলেই যাতায়াতে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়। একটা সেতু হলে আমাদের এই কষ্ট দূর হতো
রাজাভূবন উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আবদুল কাদের বলেন, একটি সেতুর অভাবে এই গ্রামের মানুষদের সারা বছর দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বিশেষ করে স্কুলের কোমলমতি ছাত্রছাত্রী এবং গর্ভবতী মহিলাদের জন্য নৌকা পার হওয়া বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। অত্র গ্রামগুলোর মানুষের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সংস্কৃতির উন্নয়নের ক্ষেত্রে এখানে ব্রিজ নির্মাণ অত্যন্ত জরুরী।
শিয়ালবুক্ক এলাকার বয়োবৃদ্ধ সুলতান আহমদ বলেন, স্বাধীনতা সংগ্রামের দীর্ঘ ৫০ বছরে কত সরকার এলো গেলো, কত এমপি গেলো মন্ত্রী এলো আমাদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হলো না। অথচ ভোট এলে সব দলের প্রার্থীরা ইছামতী নদীর উপর ব্রিজ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু আজও কেউ কথা রাখেনি। দ্রুত ইছামতী নদীতে একটি সেতু নির্মাণের জন্য আমরা সরকারের প্রতি জোর দাবি জানাই।
রাজানগর ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ. লীগের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জি: শামসুল আলম বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে মাননীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপির ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এ পর্যন্ত রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ছোট-বড় প্রায় অর্ধশতাধিক সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। তারপরও যদি কোনো নদীতে সেতু না থাকে সেখানে পর্যায়ক্রমে সেতু নির্মাণ করা হবে। ইছামতী নদীর ওইস্থানে সেতু স্থাপনের বিষয়ে আগামী উপজেলা পরিষদের মাসিক সভায় দাবি জানানো হবে।