নিজস্ব প্রতিবেদক: জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেছেন, ‘যত্রতত্র অনেক কারখানা গড়ে উঠেছে। এই কারখানাগুলো এখন চাইলেও সরিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়।
কারণ এর সঙ্গে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান জড়িত। তাই আমরা চাই, এসব কারখানাগুলো যেন একটি নিয়মের মধ্যে চলে আসে।
সোমবার (২০ মার্চ) সকাল সাড়ে ১০টায় চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে অক্সিজেন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের ঝুঁকি নিরসন ও নিরাপদ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণে অংশীজনদের নিয়ে আয়োজিত কর্মশালায় তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, সীতাকুণ্ডে অনেক ছোট ছোট কারখানা আছে। কারখানায় নিরাপদ কর্মপরিবেশ তৈরিতে আপনারা যদি কোনো মূলধন সংকটে পড়েন আমাদের তা অবহিত করবেন। আমরা বিনিয়োগ উন্নয়ন বোর্ড, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সহজ শর্তে ঋণ পেতে সহযোগিতা করবো।
শিল্পনগরী সীতাকুণ্ড উপজেলায় ইতিমধ্যে সংঘটিত বেশ কয়েকটি বড় বড় দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। এখন থেকে আমরা আর কোনও দুর্ঘটনা দেখতে চাই না। ফায়ার সেফটি প্ল্যানসহ শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মাধ্যমে শিল্পায়ন গড়তে সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক হতে হবে।
জেলা প্রশাসক বলেন, সীতাকুণ্ডের ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন নিয়ে আমরা কর্মসহায়ক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চাই। এজন্য সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। শিল্পকারখানা গড়তে হলে সবার আগে শ্রমিক, মালিক ও উদ্যোক্তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি দেখতে হবে। আইন না মেনে ও সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে শিল্পকারখানা পরিচালনা থেকে বিরত থাকতে হবে। নিয়ম-নীতির মধ্যে থেকেই সবাইকে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতে হবে। শিল্পকারখানাগুলোতে নিরাপত্তা ও নজরদারি বৃদ্ধি করতে হবে।
তিনি বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল খুঁটি শ্রমিক এবং সেই শ্রমিকের নিরাপত্তা, উদ্যোক্তাদের মূলধনের নিরাপত্তা দুটিকেই গুরুত্ব দিতে হবে। গত ৪ মার্চ কদমরসুলে সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণে ৭ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় গুরুতর আহত হয় আরও অনেকে। এর আট মাস আগে বিএম কনটেইনার ডিপোতে বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে এবং সর্বশেষ ১১ মার্চ ইউনিটেক্স তুলার গুদামে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। সীতাকুণ্ডে প্রতি বছরই দুর্ঘটনা ঘটছে, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। যার বেশিরভাগই মানবসৃষ্ট। খুব কমই প্রকৃতিগত।
জেলা প্রশাসক বলেন, ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন সীতাকুণ্ড ও মিরসরাইসহ বিভিন্ন স্থানে দুর্ঘটনা রোধে আমরা একটি মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করতে চাই। কিভাবে আমরা দুর্ঘটনা হ্রাস করবো, এটি মানবসৃষ্ট হোক আর প্রকৃতিগত হোক, পরিবেশের দূষণ কিভাবে রোধ করবো, দূষণ থেকে খাল-নদী রক্ষা, ভূ-গর্ভস্থ পানি কিভাবে নিম্নে যাওয়ার ব্যবস্থা করা যাবে, কৃষি জমির উপরিভাগের মাটি ও পাহাড় কাটা কিভাবে রোধ করা যাবে, শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও মালিকদের মূলধনের নিরাপত্তা আমরা কিভাবে নিশ্চিত করতে পারি- তা ভাবতে হবে। এর পাশাপাশি সীতাকুণ্ড এলাকায় কিভাবে আমরা একটি মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়ন করতে পারবো-সে বিষয়ে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। কর্ণফুলী, আনোয়ারা, মিরসরাই, হাটহাজারী এলাকায়ও শিল্পকারখানা গড়ে উঠেছে। সে এলাকাগুলো নিয়েও আমাদের পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাকিব হাসানের সভাপতিত্বে কর্মশালায় বক্তব্য দেন সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহাদাৎ হোসেন, জিপিএইচ ইস্পাত লিমিটেডের ডিএমডি আলমাস শিমুল, অ্যাডভাইজার কর্নেল (অব.) শওকত ওসমান, মিডিয়া অ্যাডভাইজার অভীক ওসমান প্রমুখ।