খেলাধুলা ডেস্ক: আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের বয়স ১৮ বছর হলেও, এই ফরম্যাটে বাংলাদেশ ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হয়েছে দুইবার। দ্বিতীয়বার দেখাতেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে নিজেদের প্রথম জয় তুলে নিল টাইগাররা।
তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ইংলিশদের ৬ উইকেটে হারিয়েছে সাকিব আল হাসানের দল।
আর এই জয়ের রূপকার নাজমুল হোসেন শান্ত। বিপিএলে দুর্দান্ত ফর্মে ছিলেন বাঁহাতি এই ব্যাটার। ৫১৬ রান করে হয়েছেন টুর্নামেন্ট-সেরা। রানের সেই ধারা ইংল্যান্ডের বিপক্ষেও ধরে রাখলেন তিনি। তার দুর্দান্ত ফিফটিতে ১৫৭ রানের লক্ষ্য অনায়াসেই পাড়ি দেয় বাংলাদেশ। সেটাও দুই ওভার হাতে রেখেই। ৩০ বলে ৮ চারে ৫১ রানের বিধ্বংসী এক ইনিংস খেলেন শান্ত।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে টস জিতে আগে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ। ব্যাটিংয়ে নেমে আগ্রাসী শুরু করে ইংল্যান্ড। কোনো উইকেট ছাড়াই ৯ ওভার কাটিয়ে দেয় তারা। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে প্রথম বলেই উইকেট নেওয়ার সুযোগ এসেছিল। কিন্তু সল্টের ফিরতি ক্যাচ হাতে স্পর্শ করলেও তালুবন্দী করতে পারেননি নাসুম। তার পঞ্চম বলে বাটলারকে দ্বিতীয় জীবন দেন সাকিব আল হাসান। মিড অনে থেকে সহজ ক্যাচটি ধরতে পারেননি তিনি।
অবশেষে ইনিংসের দশম ওভারে স্বাগতিকদের ব্রেক থ্রু এনে দেন নাসুম আহমেদ। ভাঙেন ৮০ রানের উদ্বোধনী জুটি। অফ স্টাম্পের বাইরে পিচ করা বলে সুইপ করার চেষ্টা করেন ফিল সল্ট। কিন্তু বল তার ব্যাটের কানায় লেগে চলে যায় পেছনে থাকা উইকেটরক্ষক লিটন দাসের গ্লাভসে। তাই ৩৫ বলে ৩৮ রান করে ফিরতে হয় ডানহাতি এই ওপেনারকে।
তিনে নেমে থিতু হতে পারেননি দাভিদ মালান। ব্যক্তিগত ৪ রান করেই ফিরতে হয় তাকে। ইনিংসের ১২তম ওভারে সাকিবের বলে তার ক্যাচ লংঅনে থাকা নাজমুল হোসেন শান্ত। এরপর বেন ডাকেটকে নিয়ে জুটি গড়ে তোলেন বাটলার। এর ফাঁকে তুলে নেন ক্যারিয়ারের ২০তম ফিফটি। তবে ডাকেট ভালো শুরু পেলেও তা ধরে রাখতে পারেননি। ১৬তম ওভারের শেষ বলে তাকে বোল্ড করেন মুস্তাফিজ। ১৩ বলে ২০ রান করেন এই ব্যাটার।
ডেথ ওভারের শুরুতেই বাটলারকে শিকার করেন হাসান মাহমুদ। লংঅন থেকে বাটলারের ক্যাচটি ধরেন শান্ত। ৪২ বলে চারটি করে চার ও ছক্কায় ৬৭ রান করেন ইংলিশ অধিনায়ক। সেই ১৭তম ওভারে কেবল এক রান দেন হাসান। ১৮তম ওভারে কোনো উইকেট না পেলেও ৭ রান খরচ করেন মুস্তাফিজুর। ডেথ ওভারের বিবেচনায় যা কমই বলা যায়। ১৯তম ওভারে আবারও হাসানের জাদু। মাত্র ৪ রান দিয়ে স্যাম কারানের উইকেটটি তুলে নেন ডানহাতি এই পেসার। শেষ ওভারে ৯ রান দিলেও ক্রিস ওকসকে ১ রানে সাজঘরে ফেরান তাসকিন। যার ফলে ৬ উইকেটে ১৫৬ রানে থামে ইংল্যান্ড। বাংলাদেশের হয়ে হাসান ২৬ রান দিয়ে দুটি এবং সাকিব, তাসকিন, মুস্তাফিজ ও নাসুম নেন একটি করে উইকেট।
জবাব দিতে নেমে শুরুটা ভালোই করে বাংলাদেশ। স্যাম কারানের করা প্রথম ওভারে ১০ রান তোলেন লিটন দাস ও রনি তালুকদার। সাত বছর পর জাতীয় দলে ফেরা রনি আগ্রাসী ব্যাটিং দারুণ কিছুর ইঙ্গিত দেন। দ্বিতীয় ওভারে ক্রিস ওকসের কাছ থেকে একাই ১১ রান আদায় করে নেন ডানহাতি এই ব্যাটার। তৃতীয় ওভারে জফরা আর্চারকে ছেড়ে কথা বলেননি দুই ওপেনার। দুটো চারসহ ১১ রান আসে সেই ওভারে। কিন্তু পরের ওভারে আদিল রশিদের ঘূর্ণিতে পরাস্ত হন রনি। ফ্লাইটেড ডেলিভারিতে কাভার ড্রাইভ করতে গিয়ে স্টাম্প হারিয়ে ফেলেন তিনি। তাই থামতে হয় ১৪ বলে ৪ চারে ২১ রান করেন। ৩৩ রানে ভাঙে উদ্বোধনী জুটি।
পঞ্চম ওভারে রনির মতোই সাজঘরের পথ ধরেন লিটন। আর্চারের লেংথ ডেলিভারি তার ব্যাটের কানায় লেগে সোজা চলে যায় ওকসের হাতে। ১০ বলে ২ চারে ১২ রান করেন লিটন। এরপর হাল ধরেন অভিষিক্ত তাওহীদ হৃদয় ও শান্ত। তৃতীয় উইকেট জুটিতে ৩৯ বলে ৬৫ রানের জুটি যোগ করেন তারা। এর মাঝে মাত্র ২৭ বলে ক্যারিয়ারের চতুর্থ ফিফটি তুলে নেন শান্ত। একই পথে হাঁটছিলেন হৃদয়ও। কিন্তু মঈন আলীর বলে কারানের হাতে ক্যাচ দেন তিনি। যার ফলে ১৭ বলে ২ চার ও ১ ছয়ে ২৪ রানে থামতে হয় তাকে।
ফিফটির ইনিংস বড় করতে পারেননি শান্ত। মার্ক উডের বলে বোল্ড হয় ফেরেন তিনি। তবে ততক্ষণে জয়ের স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ। বাকিটা পথ আফিফ হোসেনকে নিয়ে নির্বিঘ্নেই পাড়ি দেন সাকিব। পঞ্চম উইকেটে অবিচ্ছিন্ন ৪৬ রানের জুটি গড়েন দুজনে মিলে। সাকিব ২৪ বলে ৬ চারে ৩৪ ও ১৩ বলে ২ চারে ১৫ রানে অপরাজিত থাকেন আফিফ। ইংল্যান্ডের হয়ে একটি করে উইকেট নেন আর্চার, উড, রশিদ ও মঈন।