আন্তর্জাতিক ডেস্ক: পাকিস্তানের বহুল আলোচিত তোশাখানা মামলার শুনানিতে আদালতে উপস্থিত না হওয়ায় দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে পুলিশ। রোববার পাঞ্জাব পুলিশকে সাথে নিয়ে ইসলামাবাদ পুলিশের বিশেষ একটি দল ইমরান খানকে গ্রেপ্তারে লাহোরে তার জামান পার্ক বাসভবনে পৌঁছেছে।
৭০ বছর বয়সী সাবেক এই পাক প্রধানমন্ত্রী গত বছর ওয়াজিরাবাদে আততায়ীর ছোড়া গুলিতে আহত হয়েছিলেন। পরে দীর্ঘদিন চিকিৎসা নেওয়ার পর সুস্থ হয়ে উঠছেন তিনি। ক্ষমতায় থাকাকালীন রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে উপহার তছরূপের ওই মামলায় তিনবার শুনানি অনুষ্ঠিত হলেও ইসলামাবাদের দায়রা আদালতে একবারও হাজির হননি তিনি।
দেশটির সংবাদমাধ্যম ডন বলছে, পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান ইমরান খানের বাসভবন লাহোরের জামান পার্কে পৌঁছেছে পুলিশ। সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করায় পিটিআইয়ের হাজার হাজার নেতাকর্মী তার বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন। পিটিআই নেতা ফাওয়াদ চৌধুরীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে পিটিআই নেতারা ইমরান খানের গ্রেপ্তার ঠেকাতে সেখানে অবস্থান নিয়েছেন।
তোশাখানা মামলার শুনানিতে ইমরান খান ধারাবাহিকভাবে উপস্থিত না হওয়ায় ইসলামাবাদের দায়রা আদালতের বিচারক সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিলেন। পুলিশ বলছে, যারা গ্রেফতারে বাধা দেবে তাদের আইনের মুখোমুখি করা হবে।
ইসলামাবাদ পুলিশের প্রধান বলেছেন, তারা ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করেই লাহোর ত্যাগ করবেন। জামান পার্ক থেকে শূন্য হাতে ফিরবেন না তারা। অন্যদিকে, ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করা হলে দেশজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ করা হবে বলে হুমকি দিয়েছে পিটিআই।
দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহ বলেছেন, ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের আদেশ দিয়েছে আদালত। এটা সরকারের কোনও আদেশ নয়।
রোববার ধারাবাহিক টুইটে ইসলামাবাদ পুলিশ বলেছে, লাহোর পুলিশের সহায়তায় ইমরান খানকে গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে। পিটিআই প্রধান গ্রেপ্তার এড়ানোর চেষ্টা করছেন। পুলিশ সুপার ইমরান খানের নিজ কক্ষে প্রবেশ করেছেন। কিন্তু সেখানে তাকে পাওয়া যায়নি।
‘ইসলামাবাদ পুলিশ আইনি নির্দেশনা অনুযায়ী ইমরান খানকে ইসলামাবাদে স্থানান্তর করবে। আইন সবার জন্য সমান। আদালতের আদেশ বাস্তবায়নে বাধা প্রদানকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
পৃথকভাবে ইসলামাবাদ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) আকবর নাসির বলেছেন, পুলিশ ইমরান খানকে আদালতের নোটিশ সরবরাহ করেছে। পাাশাপাশি এই নোটিশ ইমরানকে গ্রহণ করতে হবে বলেও নিশ্চিত করেছে পুলিশ।
তোশাখানা মামলা
গত শতকের সত্তরের দশকে পাকিস্তানের সরকারি একটি বিভাগ হিসেবে তোশাখানা প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই বিভাগটি প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, আইনপ্রণেতা, সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধান ও অন্যান্য বিশিষ্ট জনদের দেওয়া উপহার জমা রাখে।
তোশাখানার নিয়ম অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট, মন্ত্রী, আইনপ্রণেতা বা সরকারের পদস্থ কর্মকর্তাদের পাওয়া সব উপহার অবশ্যই এই বিভাগে জমা দিতে হবে। যারা এসব উপহার পেয়েছেন তারা পরে এগুলো কিনে নিতে পারবেন। কিনে নেওয়ার পর এসব উপহার বিক্রির বিষয়টি অবৈধ না হলেও অনেকেই এটিকে অনৈতিক বা নীতিগতভাবে ভুল বলে মনে করেন।
ইমরানের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ দায়ের করা হয় তাতে বলা হয়েছে, ক্ষমতায় থাকাকালে সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন জিনিসের ৫৮টি বাক্স উপহার হিসেবে পেয়েছিলেন।
গত আগস্টে পাকিস্তানে ক্ষমতাসীন জোট সরকারের সবচেয়ে বড় শরিক দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ- নওয়াজের (পিএমএলএন) সদস্য মোহসিন নওয়াজ রানঝা ইমরানের বিরুদ্ধে এই মামলা দায়ের করেছিলেন। মামলার অভিযোগে বলা হয়েছিল, সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় তোষাখানা থেকে বিদেশি বিশিষ্টজনদের দেওয়া উপহার কিনলেও নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া সম্পদ বিবরণীতে সেগুলোর উল্লেখ করেননি।
এ সম্পর্কে গত ২২ আগস্ট পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির স্পিকার রাজা পারভেজ আশরাফ নির্বাচনক কমিশনকে দেওয়া এক চিঠিতে ইমরান খানকে ‘অসৎ’ ঘোষণা করে তাকে রাজনীতিতে নিষিদ্ধ করার আবেদন করেন।
আবেদনে বলা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান নিজের ক্ষমতা ব্যবহারের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় তোশাখানা থেকে নামমাত্র মূল্যে এসব উপহার নিয়েছেন এবং এসব উপহারের অধিকাংশই তিনি বিক্রি করেছেন।
উপহারের মধ্যে কিছু দামি হাতঘড়িও রয়েছে। এসব উপহারের আনুমানিক মূল্য ১৪ কোটি ২০ লাখ রুপি। প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে ২০১৮ সালের আগস্ট থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর নাগাদ ইমরান খান এসব উপহার গ্রহণ করেছিলেন বলে আবেদনপত্রে উল্লেখ করেন স্পিকার।