চট্টবাণী ডেস্ক: শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, আমি চাঁদপুর সরকারি কলেজের ছাত্রী না। এরপরও এখানে একটি অন্য ভালোবাসার টান অনুভব করি।
কারণ, আমার মা এই কলেজের ছাত্রী ছিলেন। আর নিজের চাইতেও মায়ের জিনিস অনেক প্রিয় হয়। সে সূত্রে নিশ্চয়ই এই কলেজের ৭৫ বছর পূর্তির সঙ্গে আমার টান এবং যোগাযোগ আছে। এই কলেজের ৭৫ বছরের পথ পরিক্রমায় একেবারে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এই পর্যন্ত বিভিন্নভাবে জড়িত, তাদের প্রতি আমি গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানাই।
শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে চাঁদপুর স্টেডিয়ামে ‘চাঁদপুর সরকারি কলেজের ৭৫বছর পূর্তি উৎসব ও পুনর্মিলনী’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
‘ঐতিহ্যের উৎকর্ষে উল্লাসের ৭৫ বছর’ স্লোগানে কলেজটির ৭৫বছর পূর্তি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আজকের এই উৎসবে অনেকেই স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য রেখেছেন। সেখানে বক্তব্যে কেউ কেউ বলেছেন, এমপির কাছে কৃতজ্ঞ ও চাঁদপুরের মানুষের ঋণ আছে, কথাটা একদম সত্য নয়, বরং উল্টো। আমার অনেক ঋণ এই চাঁদপুর ও মানুষের কাছে। এর কারণ আপনারা আপনাদের মূল্যবান ভোট দিয়ে আমাকে নির্বাচিত করেছেন এবং সেবা করার সুযোগ দিয়েছেন। যে কারণে আমি চাঁদপুর সরকারি কলেজের অবকাঠামগত উন্নয়নমূলক কাজে শরিক হবার সুযোগ হয়েছে। আমি চাঁদপুরবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞ। তাদের ঋণ কখনও শোধ করতে পারব না।
অনুষ্ঠানে কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী ও দেশবরেণ্য গুনী ব্যক্তিরা উপস্থিত হওয়ায় মন্ত্রী সবাইকে অভিনন্দন জানান এবং সাবেক সচিব ও শিশু সাহিত্যক ফারুক হোসেনের একটি কবিতা আবৃত্তির মাধ্যমে তিনি বক্তব্য শেষ করেন।
এর আগে সকাল ৮টায় উৎসব উপলক্ষে কলেজ ক্যাম্পাস থেকে শহরে আনন্দ শোভা যাত্রা বের হয়ে স্টেডিয়ামের সামনে এসে শেষ হয়। এতে অংশগ্রহণ করেন কলেজের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা।
শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে উৎসবের উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী। অনুষ্ঠানে স্থানীয় ৭৫জন নবীন ও প্রবীণ শিল্পীর অংশগ্রহনে জাতীয় সংগীত পরিবেশন হয়। একই সাথে একটি মনোমুগ্ধকর নিত্য পরিবেশন করেন শিল্পীরা। উৎসব উপলক্ষে গীতিকার কবির বকুলের লেখা ‘থিম সং’ উপভোগ করেন উপস্থিত সুধীজন।
বক্তব্য পূর্বে ৭৫বছর পূর্তি উপলক্ষে স্মরণিকা ও তথ্যপঞ্জির মোড়ক উন্মোচন করেন মন্ত্রীসহ অতিথিবৃন্দ। সভাপতিত্ব করেন চাঁদপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ও উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক প্রফেসর অসিত বরণ দাশ।
চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র ও উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব মো. জিল্লুর রহমান এবং সাবেক শিক্ষার্থী সাব্বির আজমের যৌথ সঞ্চালনায় সাবেক শিক্ষার্থীদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিএলএফ কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ আবেদ মনসুর, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব হাসানুজ্জামান কল্লোল, সাবেক সিনিয়র সচিব ও বর্তমান নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান, একুশে পদক প্রাপ্ত অনুজ বিজ্ঞানি ড. সমীর কুমার সাহা, সাবেক সচিব ও শিশু সাহিত্যিক ফারুক হোসেন, বুয়েটের ভিসি সত্য প্রসাদ মজুমদার, প্রবীন রাজনীতিবীদ শফিউদ্দিন আহমেদ এবং চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) কামরুল হাসান।
স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত নারী মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ সৈয়দা বদরুন্নাহার চৌধুরী, চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ডাঃ জে আর ওয়াদুদ টিপু, কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী এনএম খান মুরাদ, শাহাবুদ্দিন অনু, জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত বিশিষ্ট গীতিকার কবির বকুল, হাইমচর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নুর হোসেন, ফরিদগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম রোমান, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি এএইচএম আহসান উল্লাহ, সাবেক সভাপতি কাজী শাহাদাত, শরীফ চৌধুরী, চাঁদপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা বাবুসহ আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
উৎসবের অন্যান্য পর্বের মধ্যে ছিল কলেজেরসাবেক শিক্ষার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা, কলেজ নিয়ে সাবেক শিক্ষার্থীদের ভাবনা এবং বর্তমান শিক্ষার্থীদের প্রতিভা উপস্থাপন, স্মৃতিচারণ, র্যাফেল ড্র ও বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতা এবং সর্বশেষ সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা।
রাতে চাঁদপুর স্টেডিয়াম মাঠে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে জনপ্রিয় কন্ঠশিল্পী সাবিনা ইয়াছমিন, দিনাত জাহান মুন্নী ও অন্যান্য শিল্পীরা সংগীত পরিবেশন করেন। এরপর ব্যাপক আনন্দ উল্লাসের মাধ্যমে আতশবাজি ফোটানো হয়।