জাবেদ ভূঁইয়া, মিরসরাইঃ জাহাঙ্গীর আলম, বয়স মাত্র ১৬ বছর। উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে তার বাড়ি, যেখান থেকে সাইকেল নিয়ে স্কুলে যেতে সময় লাগে আধা ঘন্টারও বেশি। যেখানে শিক্ষার হার খুবই কম, ছোটবেলা থেকে সেখানকার ছেলেরা শিখে বন থেকে গাছ কাটার নিয়ম-কানুন। জাহাঙ্গীর এমনি একটি প্রত্যন্ত এলাকা থেকে পড়াশোনার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে সবার বড় সে । বাবা নুর উদ্দিন, পেশায় একজন দিনমজুর।
জাহাঙ্গীরের ছোট বেলায় পড়ে গিয়ে হাত ভেঙ্গে যায়, তাই ভারী কোন কিছু করতে না পারলেও প্রত্যাহ সকালটা শুরু হয় বাবাকে কৃষি কাজের সহযোগিতা দিয়ে, এরপর স্কুলে যেতে হয়। আবার স্কুল থেকে ফিরে সন্ধ্যা কিংবা রাত অব্দি বাবার কাজে নেমে পড়ে। তাদের নিজস্ব কোন জমির উপর ঘর নেই। মিরসরাই উপজেলার সাহেরখালী ইউনিয়নের ডোমখালী বেড়িবাঁধ এলাকায় সরকারি জায়গার উপর দু রুমের ঘর বেঁধে পরিবার নিয়ে কোন রকম বসবাস করছেন। এই বয়সে শত সংগ্রামের মাঝেও আর্থিক সহযোগিতা পেলে নিজের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চান জাহাঙ্গীর।
স্থানীয় জামাল শফিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণী শেষ করে বর্তমানে সাহেরখালী উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্র জাহাঙ্গীর। টাকার অভাবে আজ-অব্দি পড়াশোনায় কোন টিউটর শিক্ষকের সহযোগিতার নিতে পারেনি, তবে স্থানীয় সামাজিক সংগঠন 'সোনালী স্বপ্ন'র সহযোগিতায় এই পর্যন্ত এগিয়ে আসলেও নবম শ্রেণী থেকে পড়াশোনার চাপ বাড়ায় একদিকে পড়াশোনার খরচ আবার অন্যদিকে পারিবার। সবমিলিয়ে চরম দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে তাঁর কপালে। তাই পড়াশোনায় স্থানীয় বিত্তশালীদের সহযোগিতা চায় তার পরিবার।
তাঁর বাবা নুর উদ্দিন জানান, ছেলেটা ছোট বেলা থেকে অসুস্থ। ভারী কোন কাজ করতে পারে না, তাই যদি পড়াশোনাটা করতে পারে তাহলে অন্তত একটা চাকরি করে হলেও নিজের জীবনটা অতিবাহিত করতে পারবে। আমি চাই আমার মত যেন সে দিনমজুরী করে খেতে না হয়। আমার পাঁচ সন্তান তাই সে এক ছেলে হওয়াতেও পড়াশোনার খরচ চালাতে পারছিনা। সমাজের মানুষ এগিয়ে আসলে হয়তো আমার ছেলেটা তার স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে।
জাহাঙ্গীর বলেন, আমার স্বপ্ন পড়াশোনা করে ভালো একটা সরকারি চাকরি করা। যাতে আমার পরিবারকে সাপোর্ট দিতে পারি। সোনালী স্বপ্নের সহযোগিতায় এই পর্যন্ত এসেছি। কিন্তু এখন আমার পড়াশোনার খরচটা বেড়েছে। জানিনা কতটুকু চালিয়ে যেতে পারবো। তবে শত সংগ্রাম করে হলেও আমি পড়াশোনা করতে চাই। আমার স্বপ্ন পূরণে সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।
সোনালী স্বপ্নের সাধারণ সম্পাদক জি. এন. ইকবাল জানান, জাহাঙ্গীরের পড়াশোনার প্রতি অনেক আগ্রহ। তৃতীয় শ্রেণী থেকে আমরা তাকে শিক্ষা উপকরণ দিয়ে সহযোগিতা করে আসছি। এখন তার স্কুলের মাসিক বেতন মওকুফ এবং কেউ যদি তার জন্য মাসিক কোন বৃত্তির ব্যবস্থা করে দেয়। তাহলে সে ভবিষ্যতে ভালো কিছু করতে পারবে। অন্যথায় তার শিক্ষা জীবন হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সাহেরখালী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মেজবাহ উদ্দিন বলেন, বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতির সাথে জাহাঙ্গীরের মাসিক বেতন মওকুফের বিষয়ে কথা বলবো। স্কুল থেকে তার পড়াশোনায় সর্বোচ্চ সহযোগিতার চেষ্টা করবো।
সাহেরখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামরুল হায়দার চৌধুরী বলেন, ছেলেটির বিষয়ে খোঁজ-খবর নিবো এবং সহযোগিতার চেষ্টা করবো।