চট্টবাণী: পাইকারি সিগারেট বিক্রিতে অফারের কথা বলে প্রায় ৫৪ লাখ আত্মসাৎ করার অভিযোগে দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৩৭ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়।
রোববার (২২ জানুয়ারি) বিকেলে রাজশাহী নগরের চন্দ্রিমা থানার ছোট বনগ্রাম উত্তর পাড়ার একটি ভবন থেকে তাদের গ্রেফতার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চট্টগ্রাম মেট্রো।
গ্রেফতাররা হলেন, হাসিব শেখ (২৭) এবং তার বাবা হেদাগেত শেখ (৫৫) ।
তাদের বাড়ি পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ উপজেলার গুয়ারেখা ইউনিয়ন এলাকায়। তবে তারা দীর্ঘদিন ধরে নগরের ইপিজেড থানার সিমেন্ট ক্রসিং এলাকায় থাকতেন।
সোমবার (২৩ জানুয়ারি) গ্রেফতার বাবা-ছেলেকে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বেগম মেহনাজ রহমানের আদালতে হাজির করা হয়। আদালতে হাসিব এ ঘটনার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
পিবিআই সূত্রে জানা যায়, এম এস জাওয়াদ এন্টারপ্রাইজ নামে একটি সিগারেট বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের সুপারভাইজার হিসেবে হাসিব চাকরি করতেন।
গত বছরের ৯ অক্টোবর ভুক্তভোগী ওই দোকান মালিককে হাসিব জানান সিগারেটে নতুন একটি অফার আসছে। একসঙ্গে বেশি সিগারেট কিনলে বিপুল টাকা লাভ হবে। এই প্রলোভনে পা দিয়ে ভুক্তভোগী মাসুদ হাসিবের কাছে সিগারেট কিনতে মোট ৫৩ লাখ ৮৮ হাজার টাকা দেন। এসব টাকার মধ্যে হাসিব ২০ লাখ টাকা নগদ এবং ১০ লাখ টাকা ভুক্তভোগীর ব্যাংক থেকে উত্তোলন করেন। বাকি ২৩ লাখ ৮৮ হাজার টাকা অন্য দুজনের আইডি কার্ড ব্যবহার করে বাদীর ব্যাংক থেকে উত্তোলন করা হয়। কিন্তু এ টাকা নিয়ে পালিয়ে যায় হাসিব।
গত ১৭ অক্টোবর সুপারভাইজার হাসিব শেখ এবং একই প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় প্রতিনিধি রুবেল ও ইমতিয়াজের বিরুদ্ধে নগরের ইপিজেড থানায় প্রতারণার অভিযোগে একটি মামলা হয়। ইপিজেড এলাকার ওই দোকান মালিক মাসুদ রানা বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের পর এটির তদন্তভার গ্রহণ করে পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো ইউনিট।
পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর বিশেষ পুলিশ সুপার নাইমা সুলতানা জানান, হাসিব টাকাগুলো তুলে গত ১০ অক্টোবর মা-বাবাকে সঙ্গে নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে রাজশাহী চলে যায়। রাজশাহী গিয়েও তিন মাসে তিনবার বাসা বদল করে তারা। হাসিব আগে একটি মোবাইল কোম্পানিতেও চাকরি করেছিল। এজন্য মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের বিষয়ে তার ভালো ধারণা ছিল। যার কারণে সে তার মোবাইল বন্ধ করে ফেলে এবং আত্মীয়-স্বজনদের সাথেও যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।
পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো ইউনিটের পরিদর্শক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ইখতিয়ার উদ্দিন বলেন, হাসিবকে গ্রেফতার করেতে আমরা ভিন্ন কৌশলে এগোতে থাকি। আত্মসাৎ করা টাকায় মোটরসাইকেল কিনবে-এমন একটা ধারণা আমাদের ছিল। গত ২০ জানুয়ারি অনলাইনে দেখতে পাই, রাজশাহী মহানগর পুলিশে হাসিব নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ট্রাফিক আইনে একটি মামলা হয়েছে। সেটা ধরে আমরা রাজশাহী গিয়ে ‘কেইস স্লিপে’একটি মোবাইল নম্বর পাই। সেই মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরে হাসিবের সন্ধান মেলে।
তিনি আরও বলেন, হাসিবের বাসা থেকে নগদ ৩৭ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। হাসিবের বাসা থেকে বাবা হেদায়েত শেখ এবং মা নুরজাহান বেগমকেও আটক করা হয়। হেদায়েত শেখ তার ছেলেকে আত্মসাৎ করা টাকা হেফাজতে রাখা ও পালাতে সহায়তা করায় তাকে ওই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। নুরজাহান বেগমকে পরিবারের সদস্যদের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। হাসিব ঘটনার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। পরে ছেলে ও বাবাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।