প্রতিনিধি ১৮ জানুয়ারি ২০২৩ , ১০:১২:৩৩ প্রিন্ট সংস্করণ
চট্টবাণী ডেস্ক: ব্যবসায়ীরা গ্যাস চাইলে সরকার দিতে পারবে। কিন্তু, যে দামে বিদেশ থেকে কেনা হবে, সেই দামই দিতে হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।তিনি বলেন, জনগণের টাকা দিয়ে গ্যাসে ভর্তুকি দেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই।
বুধবার (১৮ জানুয়ারি) জাতীয় সংসদের অধিবেশনে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সদস্য মুজিবুল হক চুন্নুর এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।
এ প্রশ্নের উত্তর দিতে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভেবেছিলাম আজ আর কথা বলব না, কিন্তু প্রশ্ন যখন হয়েছে, আমি উত্তর দিচ্ছি। এর আগেই প্রধানমন্ত্রী তার নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর শেষ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে দেশ ঋণ পরিশোধের যোগ্যতা অর্জন করে, তাদের আইএমএফ ঋণ দেয়। এখানে তেমন কোনো শর্ত দিয়ে কিন্তু আমরা ঋণ নিইনি। আমরা তো বিদ্যুতে ভর্তুকি দিচ্ছি, গ্যাসে ভর্তুকি দিচ্ছি। আমার প্রশ্ন, পৃথিবীর কোন দেশ বিদ্যুৎ-গ্যাসে ভর্তুকি দেয়? কেউ দেয় না।
তিনি বলেন, আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়িয়েছি, সরবরাহ নিশ্চিত করেছি। কিন্তু বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে। ইংল্যান্ডে বিদ্যুতের দাম দেড়শ ভাগ বাড়ানো হয়েছে। ইউক্রেন আর রাশিয়ার যুদ্ধের পর আমরা এখন মাত্র পাঁচ ভাগ বাড়ালাম, আর কিছু বাড়ছে গ্যাসের দাম।
তিনি আরও বলেন, গ্যাস যেটা আমরা ৬ ডলারে স্পট দামে কিনতাম, এলএনজি, সেটা এখন ৬৮ ডলার। কত ভর্তুকি দেবে সরকার? সরকার যে ভর্তুকিটা দেবে, সেটা তো জনগণেরই টাকা। আর দ্রব্যমূল্য সারা বিশ্বেই বেড়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে এখনো আমরা নিম্ন আয়ের বা মধ্যম আয়ের, তাদের জন্য কিন্তু আমরা ন্যায্যমূল্যের কার্ড দিয়েছি। সেখানে মানুষ মাত্র ৩০ টাকা কেজিতে চাল কিনতে পারে। প্রয়োজনীয় জিনিস যেমন তেল, চিনি ও ডাল, এগুলো যাতে সীমিত আয়ের লোকেরা কিনতে পারে, তার ব্যবস্থা করে দিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিম্ন আয়ের যারা, তাদের জন্য মাত্র ১৫ টাকায় ওএমএসের চাল আমরা দিচ্ছি। সেই সঙ্গে তেল, ডাল ও চিনিও তারা কম দামে কিনছে। আর হত দরিদ্র যারা কিছুই কিনতে পারে না, তাদেরও কিন্তু আমরা বিনা পয়সায় খাদ্য সরবরাহ করছি। যারা স্বল্প আয়ের, তারা যাতে কষ্ট না পায়, সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমরা এ ব্যবস্থা করছি।
সরকারপ্রধান বলেন, কৃষিতে আমরা ব্যাপকভাবে ভর্তুকি দিচ্ছি। এখন গ্যাস উৎপাদন, গ্যাস বিতরণ, বিদ্যুৎ উৎপাদন, বিদ্যুৎ বিতরণে যদি ৪০, ৫০ হাজার, ৬০ হাজার কোটি টাকা আমাকে ভর্তুকি দিতে হয় তাহলে সেটা কী করে দেবো? মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে সেটার কিছু সফলতা কিন্তু আমরা দেখাতে পেরেছি। ডিসেম্বর মাসে এবং জানুয়ারি মাসে মূল্যস্ফীতি কিন্তু কিছুটা কমেছে।
তিনি বলেন, ইংল্যান্ডের মতো জায়গায় ১৩ দশমিক ৩ শতাংশ হচ্ছে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি। পৃথিবীর সব দেশেই এ অবস্থা বিরাজমান। বাংলাদেশ এখনও সে অবস্থায় পড়েনি। মানুষ যদি একটু সাশ্রয়ী হয়, যেমন আমরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং গণভবন সেখানে কিন্তু আমরা বিদ্যুতের ব্যবহার ৫০ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছি। এভাবে যদি সবাই উদ্যোগ নেয়, তাহলে কিন্তু বিদ্যুৎ সাশ্রয় হতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বেসরকারি খাতের ব্যবসায়ী এখানেও অনেকে আছে, তাদের তো আমি স্পষ্ট বলেছি যে, গ্যাস আমরা দিতে পারব। কিন্তু যে দামে গ্যাস বাইরে (বিদেশ) থেকে কিনে নিয়ে আসব, সেই দাম যদি দেন, তাহলে আমরা গ্যাস দিতে পারব। যদি নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ চান, তাহলে যে দামে কেনা হবে, তাদের সেই দাম দিতে হবে।
তিনি বলেন, সেই দামই তাদের দিতে হবে। এখানে (গ্যাসে) ভর্তুকি দেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। আর এটা ভুলে যাবেন না যে, ভর্তুকির টাকা তো জনগণেরই টাকা। যারা বিত্তশালী, যত দাম কম থাকে, তারাই তো সব চেয়ে লাভবান। যারা সাধারণ মানুষ তারা কিন্তু ঠিকমতো বিল দেয়। বিত্তশালীরা আরাম করবে, আর স্বল্প দামে পাবে, সেটা কী করে হবে? কাজেই সে দিকে লক্ষ্য রেখেই কিন্তু আমরা পরিকল্পনা নিচ্ছি।