আন্তর্জাতিক ডেস্ক: নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে ৭২ জনকে বহনকারী একটি বিমান পোখারায় বিধ্বস্ত হয়ে কমপক্ষে ৬৮ জন মারা গেছেন। রোববার সকালের দিকে পোখারা বিমানবন্দরে অবতরণের মাত্র কয়েক মিনিট আগে বিমান বিধ্বস্তের এই ঘটনা দেশটিতে ব্যাপক আলোড়ন তৈরি করেছে।
বিধ্বস্ত বিমানে কমপক্ষে ৬৮ জন আরোহী এবং চারজন কেবিন ক্রু ছিলেন বলে স্থানীয় পুলিশ জানিয়েছে। দেশটির পশ্চিমাঞ্চলের পোখারার নতুন এবং পুরোনো বিমানবন্দরের মধ্যবর্তী একটি পাহাড়ি এলাকায় বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে। ইয়েতি এয়ারলাইন্সের পরিচালিত দুই ইঞ্জিন বিশিষ্ট এটিআর-৭২ বিমানটি রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে পোখারায় যাওয়ার পথে বিধ্বস্ত হয়।
ইয়েতি এয়ারলাইন্সের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিমানটিতে ১৫ বিদেশি নাগরিক ও ছয় শিশু ছিল। ৫৩ জন নেপালি, ৫ জন ভারতীয়, ৪ জন রুশ, দু’জন কোরীয়, একজন আর্জেন্টাইন এবং আয়ারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও ফ্রান্সের একজন করে নাগরিক বিমানে ছিলেন।
ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে দেশটির পুলিশের কর্মকর্তা এ কে ছেত্রী বলেন, এখন পর্যন্ত ৩১ জনের মৃতদেহ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার স্থানের গিরিখাত থেকে ৩৬ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
দেশটির সাংবাদিক দিলীপ থাপা এনডিটিভিকে বলেন, ধ্বংসাবশেষে আগুন ধরে যাওয়ায় উদ্ধার অভিযান কঠিন হয়ে পড়েছে। এদিকে, এই দুর্ঘটনার পরপরই নেপালের প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দাহাল ওরফে প্রচন্ড মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠক ডেকেছেন। এছাড়া এই ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিশন গঠন করেছে দেশটির সরকার।
নেপালের বেসামরিক বিমান কর্তৃপক্ষ (সিএএএন) বলছে, বিমানটি কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে স্থানীয় সময় সকাল ১০টা ৩৩ মিনিটে উড্ডয়ন করেছিল। পরে পোখারা বিমানবন্দরের কাছাকাছি সেতী নদীর কাছের পাহাড়ি এক গিরিখাতে সেটি বিধ্বস্ত হয়। উড্ডয়নের প্রায় ২০ মিনিট পর এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। বিমানটি কিছুক্ষণের মধ্যে পোখারা বিমানবন্দরে অবতরণ করতো বলে ধারণা করা হয়েছিল। কাঠমান্ডু থেকে পোখারা পৌঁছাতে ফ্লাটের সময় লাগে প্রায় ২৫ মিনিট। অর্থাৎ বিমানটি অবতরণের মাত্র ৫ মিনিট আগে বিধ্বস্ত হয়েছে।
ইয়েতি এয়ারলাইন্সের মুখপাত্র সুদর্শন বারতৌলা বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, কেউ বেঁচে আছ্নে কিনা তা আমরা এখনও জানি না। বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার সাথে সাথে আগুন ধরে যায়। দুর্ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধারকারী কর্মীরা বিমানের আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন বলে স্থানীয় এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
যথাযথ নিরাপত্তা ও কর্মীদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা না থাকায় নেপালের এয়ারলাইন্স ব্যবসা নিয়ে আন্তজার্তিক বিভিন্ন মহলের উদ্বেগ রয়েছে। আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থা (আইসিএও) নিরাপত্তা উদ্বেগ প্রকাশ করার পর ২০১৩ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) নেপালকে ফ্লাইটের নিরাপত্তা কালো তালিকাযর অন্তর্ভুক্ত করে। ওই সময় ইউরোপীয় ইউনিয়নের আকাশসীমায় হিমালয়কন্যা খ্যাত নেপালের ফ্লাইট নিষিদ্ধ করার আদেশ দেয় ইইউ।
সূত্র: এএফপি, এনডিটিভি।