চট্টবাণী ডেস্ক: সরকার পতন আন্দোলনে জনগণকে জেগে ওঠার ডাক দিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আপনারা জেগে উঠেছেন, বাংলাদেশের মানুষ জেগে উঠেছে। এখন আমাদের আরও বেশি করে জেগে উঠতে হবে।আমরা আজকে সেই প্রস্তুতি নেই.. আসুন আমরা জেগে উঠি।
বুধবার (১১ জানুয়ারি) দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচির সমাপ্তি টেনে সদ্য কারামুক্ত বিএনপি মহাসচিব এই আহ্বান জানান।
মির্জা ফখরুল বলেন, এখন বাংলাদেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে তাদের জাগিয়ে তুলে আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। সংবাদ হচ্ছে এটাই যে, আজকে বাংলাদেশের বিশিষ্ট নাগরিকেরা তারা এগিয়ে আসতে শুরু করেছেন, তারা আজকে এই যে অন্যায় হচ্ছে তার বিরুদ্ধে ৬০ জন দেশের বরেণ্য নাগরিক বিবৃতি দিয়েছেন। আমি তাদের এজন্য ধন্যবাদ জানাতে চাই, কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই। আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই আমাদের মিডিয়া-গণমাধ্যমের সকল কর্মী ভাইদের তারা জনগণের আন্দোলনের খবর প্রচার করে জনগণকে জাগিয়ে তুলছেন। আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই, দেশের সকল মানুষকে যারা আজকে আমাদের এই গণ-আন্দোলনে সমর্থন দিয়ে মানুষের অধিকারকে ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করছেন।
নয়াপল্টনের সড়কে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত, নির্দলীয় সরকার গঠন, খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ ১০ দফা দাবিতে এই অবস্থান কর্মসূচি করে বিএনপি। ঢাকা ছাড়াও দেশের সব বিভাগে একই সময়ে এই কর্মসূচি পালিত হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ নিজেকে রাজনৈতিক দল হিসেবে পরিচয় দেয়। আমরা জানি যে, তারা অত্যন্ত পুরনো পরিচিত দল। কিন্তু এখন তারা সম্পূর্ণভাবে তার রাজনৈতিক অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলেছে। আওয়ামী লীগ গণবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সেজন্য তাকে এখন পুলিশের ওপর নির্ভর করে, আমলাদের ওপর নির্ভর করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা জোর করে দখল করে রাখতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, ২৭ দফা রাষ্ট্র সংস্কারের কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। আমরা খুব পরিষ্কার করে বলেছি, এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করতে হবে। এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের মধ্য দিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশনের মধ্য দিয়ে নতুন নির্বাচন করতে হবে। আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রের সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধবংস করে দিয়েছে, তারা রাষ্ট্রকে ধ্বংস করে দিয়েছে। সেজন্য আমরা বলেছি, রাষ্ট্রকে সংস্কার করতে হবে।
রাষ্ট্রের সংস্কারের বিভিন্ন বিষয় যেমন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য আনা, তাদের মেয়াদ দুই বার নির্ধারণ করাসহ বিভিন্ন সংস্কারের দিকগুলো তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।
ওয়াসার এমডি প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা দেখেছেন এই সরকারের একজন অত্যন্ত আশ্রিত, শোনা যায় তিনি নাকি শীর্ষ নেতাদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ… ওয়াসার এমডি তাকসিম। তিনি আমেরিকাতে নাকি ১৪টা বাড়ি কিনেছেন। একটা বাড়ি নাকি ৫১৫ কোটি টাকা। আপনারা ভাবুন যে, কোন দেশে আমরা বাস করছি। দেশের একজন সরকারি কর্মকর্তা, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সরকারের কাছ থেকে বেতন নেন, তিনি আজকে শত শত কোটি টাকা, হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে বিদেশে বাড়ি বানাচ্ছেন। আর আজকে মানিলন্ডারিংয়ের জন্য ছোট-খাটো মানুষের বিরুদ্ধে মামলা হয়। আর তারা হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে দিয়ে এই দেশের অর্থনীতিকে ফোকলা করে দিয়েছে।
রাজধানীতে সাড়ে তিন ঘণ্টাব্যাপী অবস্থান কর্মসূচিতে বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে বিএনপিসহ অঙ্গসংগঠনের হাজারো নেতাকর্মী অংশ নেন। ফকিরেরপুল বাজার থেকে কাকরাইলের নাইটিঙ্গেল রেস্তোরাঁ পর্যন্ত দীর্ঘ সড়কে পলিথিন বিছিয়ে নেতাকর্মীরা বসে এই কর্মসূচি পালন করেন।
কারাগারে আটক বিএনপি নেতা আবদুস সালাম, রুহুল কবির রিজভী, খায়রুল কবির খোকন, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, ফজলুল হক মিলন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, এবিএম মোশাররফ হোসেন, খন্দকার আবু আশফাক, আবুল হোসেন, সেলিম রেজা হাবিব, যুবদলের সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, উলামা দলের শাহ নেছারুল হক, মৎস্যজীবী দলের রফিকুল ইসলাম মাহতাবসহ বন্দি নেতাকর্মীদের মুক্তি দাবি জানান মির্জা ফখরুল।
সভাপতির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমরা জানি, এই সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকলে এই ১০ দফা মানবে না। তাই আমাদের সামনে একটিই চ্যালেঞ্জ এই সরকারকে বিদায় করতে হবে। আগামী দিনে গণআন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারের পতন ঘটাতে হবে। আজকে এই সরকার শুধু বাংলাদেশের জনগণের কাছে নয়, আন্তর্জাতিকভাবেও আজকে ধিকৃত।
ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, ঢাকা মহানগরের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু ও উত্তরের আমিনুল হকের সঞ্চালনায় অবস্থান কর্মসূচিতে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, আফরোজা খানম রীতা, কেন্দ্রীয় নেতা মীর সরাফত আলী সপু, শিরিন সুলতানা, রকিবুল ইসলাম বকুল, মীর নেওয়াজ আলী, সাইফুল আলম নিরব, আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল, গিয়াস উদ্দিন আহমেদ, মজিবুর রহমান, নিপুণ রায় চৌধুরী প্রমুখ বক্তব্য দেন।
অঙ্গসংগঠনের মধ্যে মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, হেলেন জেরিন খান, মহানগর বিএনপির নবী উল্লাহ নবী, যুবদলের মামুন হাসান, মোনায়েম মুন্না, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানী, রাজিব আহসান, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, শহিদুল ইসলাম বাবুল, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, শ্রমিক দলের মোস্তাফিজুল করীম মজুমদার, মৎস্যজীবী দলের আবদুর রহিম, তাঁতী দলের কাজী মুনীরুজ্জামান মুনীর, জাসাসের জাকির হোসেন রোকন, উলামা দলের মাওলানা আবুল হোসেন, ছাত্রদলের কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, সাইফ মাহমুদ জুয়েল, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের কাদের গনি চৌধুরী, জিয়া পরিষদের আব্দুল কুদ্দুস, ড্যাবের আবদুস সালাম, এ্যাবের রিয়াজুল ইসলাম রিজু বক্তব্য রাখেন।