মো: আব্দুল আল মামুন: ক্রাউডফান্ডিং (গণ-অর্থায়ন) বর্তমান বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় ধারণা। উন্নত বিশ্বের পাশাপাশি উন্নয়নশীল দেশগুলোর বিকাশমান অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছে গণঅর্থায়ন। নতুন প্রকল্প ও ব্যবসায় বিনিয়োগে গড়ে উঠছে গণ-অর্থায়ন সংস্থা, যেখানে ব্যক্তি-অনুদানের পাশাপাশি বড় বড় প্রতিষ্ঠানও অর্থায়ন করছে। এ বিষয়কে মূল প্রতিপাদ্য রেখে রিসার্চ কাউন্সিল অব নরওয়ে এবং ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটির (ইডিইউ) যৌথ উদ্যোগে এক আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো চট্টগ্রামে।
‘ফার্স্ট ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন ক্রাউডফান্ডিং ফর ক্রিয়েটিভ ইন্ডাস্ট্রিজ’ শীর্ষক দুদিনব্যাপী এ আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ইডিইউ ক্যাম্পাসে।১০ জানুয়ারি ছিলো এ সম্মেলনের সমাপনী দিন। দেশি-বিদেশি ১০জন গবেষক নিজেদের মৌলিক প্রবন্ধ নিয়ে অংশগ্রহণ করেন এ সম্মেলনে।
সমাপনী দিনে এতে উপস্থিত ছিলেন ইডিইউর প্রতিষ্ঠাতা ভাইস চেয়ারম্যান সাঈদ আল নোমান। ৯ জানুয়ারি সোমবার সকাল সাড়ে ৯টায় এ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন ইডিইউ উপাচার্য প্রফেসর মুহাম্মদ সিকান্দার খান।
এতে প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব দ্য ক্রিয়েটিভ আর্টস-এর প্রফেসর ড. এলিজাবেথা লাজারো বলেন, সৃজনশীল ক্ষেত্রসমূহ গণ-অর্থায়নের সবচেয়ে বেশি সুফলভোগ করতে পারে। বড় প্রযোজক সংস্থার নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্যের বাইরে স্বাধীনধারার শিল্পচর্চায় বিনিয়োগের অন্যতম খাত হয়ে উঠছে ক্রাউডফান্ডিং। বিশ্বের অনেক দেশে এ ধরনের অর্থায়নে সিনেমা, চিত্রকলা ও স্থাপত্যের মতো বিষয়ে নতুন ধরনের কাজ হচ্ছে, যা আশা দেখাচ্ছে বাংলাদেশের তরুণ নির্মাতাদের।
‘অল্টানেটিভ ফাইন্যান্স ট্রেন্ডস ইন দ্য ওয়ার্ল্ড’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে ইউনিভার্সিটি অব আগদার নরওয়ে-এর প্রফেসর ড. রোথাম স্নেয়র বলেন, এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া এমনকি নেপালের মতো দেশ গণঅর্থায়নের ধারণায় অনেক দূর এগিয়ে গেছে। বাংলাদেশেরও দুটো প্রতিষ্ঠান প্রায় ৩৬ হাজার ইউএস ডলার উত্তোলন করে বিভিন্ন প্রকল্পে বিনিয়োগ করেছে। এছাড়াও, আরো কয়েকটি গণঅর্থায়ন প্রতিষ্ঠান তাদের কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশে।
সমাপনী বক্তব্যে সাঈদ আল নোমান বলেন, শিক্ষার্থীদের মাঝে উদ্যোক্তা ও নেতৃত্বের গুণাবলী তৈরিতে সচেষ্ট ইডিইউ। তাদের গড়ে তোলার অংশ হিসেবে বিভিন্ন প্রকল্প দেওয়া হয় তাদের, যেখানে ক্রাউডফান্ডিংয়ের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহ করে তারা। এভাবে তাদেরকে আমরা আগামী পৃথিবীর জন্য প্রস্তুত করে তুলছি।
উদ্বোধনকালে ইডিইউর উপাচার্য প্রফেসর মুহাম্মদ সিকান্দার খান বলেন, ক্রাউডফান্ডিং কেবল অর্থ সংগ্রহ নয়, একইসাথে ব্যবসা বা প্রকল্পকে সহযোগিতা করার জন্য সামাজিক বলয়ও তৈরি করে। এভাবে সম্ভাব্য গ্রাহক ও বিনিয়োগকারীরা পরস্পর একীভূত হয়ে যে সম্পৃক্ততার সৃষ্টি হয়, তা সেই ব্যবসা বা প্রকল্পটির স্থায়িত্বকে বাড়িয়ে তোলে। একইসাথে উদ্ভাবন ও সৃজনশীলতাকেও উৎসাহিত করে এই ক্রাউডফান্ডিংয়ের ধারণা। নতুন অনেকেই নিজেদের উদ্যোগ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার সাহস পায়।
সম্মেলনে আরো প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ওয়েস্টার্ন নরওয়ে ইউনিভার্সিটি অব এপ্লায়েড সায়েন্স-এর প্রফেসর ড. নাটালিয়া ম্যালে, ইউনিভার্সিটি অব বার্সেলোনা-এর প্রফেসর ড. লুইস বনেট, ইউনিভার্সিটি অব আগদার নরওয়ে-এর অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ড. দানিয়েল নর্ডগার্ড, ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ইস্টার্ন নরওয়ে-এর অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর জিয়াউল হক মুনিম এবং ইডিইউর অ্যাসিস্টেন্ট প্রফেসর মুহাম্মদ হাসান শাকিল।
এছাড়া প্যানেল আলোচনায় উপরোক্ত বক্তারা ছাড়াও ইডিইউর স্কুল অব বিজনেসের অ্যাসোসিয়েট ডিন প্রফেসর ড. রকিবুল কবির, অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ড. রাশেদ আল করিমসহ অনেকেই বক্তব্য রাখেন।