চট্টবাণী: খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এখন দরকার গুণগত মান বাড়ানো, যা পুষ্টি নিশ্চিত করবে।পুষ্টি খাতে বাংলাদেশের অর্জন সত্যিই প্রশংসনীয়।
বৃহস্পতিবার (২৯ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে অনুষ্ঠিত বিভাগীয় বহুখাত ভিত্তিক রিসোর্স টিমের (ডিএমআরটি) প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণে রিসোর্সপার্সনদের ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামে প্রধান অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. আশরাফ উদ্দিন এসব কথা বলেন।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয় এ অনুষ্ঠান আয়োজন করে। চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. মো. সাখাওয়াত উল্লাহ’র সভাপতিত্বে ও চমেক হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার ডা. দৃষ্টি শর্মার সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদের (বিএনএনসি) মহাপরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা, ইউনিসেফ এর চীফ অব ফিল্ড অফিস মাধুরী ব্যানার্জী, বিএনএনসি’র পরিচালক ডা. তাহেরুল ইসলাম খান। স্বাগত বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. সুমন বড়ুয়া।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার বলেন, অপুষ্টি নিরাময়ের মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকরণ সহজতর হয়। এর ফলে ক্ষুধা নিবারণ ও স্বাস্থ্যগত উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়। পুষ্টিমান বাড়াতে অনেক এলাকায় স্কুলের শিক্ষার্থীদের টিফিন দেওয়ার মতো চমৎকার উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। পুষ্টিবান জাতি গঠনে আমাদেরকে অনেক কাজ করতে হবে। খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থার সঙ্গে ভোক্তাদের এমনভাবে সমন্বয় ঘটাতে হবে যেন নিরাপদ ও মানসম্পন্ন খাদ্য সবার জন্য সুলভ করা যায়। এ জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সহ আমরা নীতিনির্ধারণী পর্যায়েও কাজ করছি। সকলের সমন্বিত উদ্যোগে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা গেলে পুষ্টিবান জাতি গঠন সম্ভব।
তিনি বলেন, দূষিত পানি বা দুর্বল স্যানিটেশন ব্যবস্থা মস্তিস্কের স্বাভাবিক বিকাশে বাধা তৈরি করে। এসবের প্রভাব একজন ব্যক্তির ওপর দীর্ঘমেয়াদি। নিরাপদ খাবার নিশ্চিত করা না গেলে ক্যান্সারসহ জটিল রোগীর সংখ্য বাড়বে। অপুষ্টির মূল কারণ সঠিক পরিমাণ ও সঠিক পুষ্টিমানসম্পন্ন খাদ্য খেতে না পাওয়া। ক্ষুধা নিবারণের হার ও ভাত গ্রহণের মাত্রা কাঙ্খিত পর্যায়ে উন্নীত হচ্ছে, তবে মানুষের খাদ্যাভ্যাসের মধ্যে বৈচিত্র্য আনা জরুরি। খাদ্যাভ্যাসের মধ্যে ডিম, দুধ, ফলমূল ও ডালজাতীয় শস্য গ্রহণের মাত্রা বাড়াতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনএনসি মহাপরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর বলেন, আমরা সরকারি-বেসরকারি খাতসহ সুশীল সমাজের সঙ্গে কাজ করছি যেন সব মানুষের খাদ্যব্যবস্থার মধ্যে নিরাপদ ও পুষ্টিমানসম্পন্ন খাদ্য গ্রহণের নিশ্চয়তা অর্জিত হয়। এ জন্য আমরা ভোক্তার দিকেও নজর দিচ্ছি। কেননা, দুর্বল বা পর্যাপ্ত পুষ্টিগুণহীন খাদ্যাভ্যাস কেবল ব্যক্তির সীমিত আয়ের কারণেই গড়ে ওঠে না। এ ব্যাপারে ব্যক্তির অজ্ঞানতা বা অসচেতনতাও অনেকাংশে দায়ী। বিএনএনসি ২২টি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কাজ করে, যেগুলো পুষ্টি কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত। গর্ভবতী নারীদের পুষ্টি ও মনো-সামাজিক বিকাশের দিকে নজর দিতে হবে। এর মাধ্যমে শিশুদের মস্তিষ্কের সার্বিক গঠন নিশ্চিত করা যাবে। পাশাপাশি বাল্যবিবাহ রোধে সর্বত্র জনমত সৃষ্টি করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, কর্মক্ষেত্রের খাদ্যব্যবস্থায় পুষ্টির ব্যাপারটি গুরুত্বপূর্ণ। তৈরি পোশাক (আরএমজি) খাতে দেখেছি, এ ধরনের ব্যবস্থা নিলে কর্মীদের মধ্যে রক্তশূন্যতা পূরণে ভালো ফল পাওয়া যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কর্মক্ষেত্রে পুষ্টিমানসম্পন্ন খাদ্য বা কোথাও কোথাও কোনো ধরনের খাদ্যব্যবস্থাই নেই। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের বিষয়ে যত্নশীল হলে বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে অপুষ্টির ব্যাপারে কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারবে। তবে আমাদের অপুষ্টি, অতিপুষ্টি ও জলবায়ু পরিবর্তনের মতো আরও যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে সেগুলোও মোকাবিলা করতে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।
অনুষ্ঠানে অতিথিরা বলেন, পুষ্টিতথ্য শিশুদের পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি। দেশের ৪ কোটি ২৭ লাখ শিশুকে প্রতিবছর নতুন বই দেওয়া হয়। বইয়ের পেছনের প্রচ্ছদের ১০ শতাংশ জায়গাতেও যদি এসব পুষ্টি তথ্য রঙিন কার্টুনের মতো দৃষ্টিনন্দন উপায়ে তুলে ধরা যায় তাহলে ভালো ফল দেবে। খাদ্য সুরক্ষার পাশাপাশি আমাদের এটিও স্বীকার করতে হবে যে অপুষ্টির বিরুদ্ধে লড়াই সত্যিকার অর্থেই জটিল কাজ। একটি বহুখাতভিত্তিক পদ্ধতিতে নির্দিষ্ট কিছু অঞ্চলকে অগ্রাধিকার দিয়ে এই লড়াই চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
পুষ্টি পরিস্থিতি ও বহুখাতভিত্তিক ন্যূনতম পুষ্টি প্যাকেজ বিষয়ক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমআইএস’র ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. মো. ফজলে রাব্বি, বিএনএনসি’র উপ-পরিচালক ডা. মোহাম্মদ আক্তার ইমাম ও সহকারী পরিচালক ডা. নাজিয়া আন্দালিব।
ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামে বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক ড. গাজী গোলাম মাওলা, প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের উপ-পরিচালক ড. মো. শফিকুল ইসলাম, মহিলা বিষয়ক উপ-পরিচালক মাধবী বড়ুয়া, কুমিল্লা জেলা সিভিল সার্জন (ভারপ্রাপ্ত) ডা. নিসর্গ মেরাজ চৌধুরী, নোয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) অজিত দেব, নোয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (উন্নয়ন) সালমা ফেরদৌস প্রমুখ।
সিটি করপোরেশন, চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলা প্রশাসনের এডিসি, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পরিবার পরিকল্পনা, মহিলা বিষয়ক, কৃষি, খাদ্য, সমাজসেবা, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল, প্রাথমিক শিক্ষা, তথ্য অফিস ও যুব উন্নয়নসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করেন।