সোহাগ ফরহাদ। জেলা প্রতিনিধি, কক্সবাজার : দীর্ঘতম সমুদ্র যেখানে সেই কক্সবাজারেই এবার লক্ষনীয় পর্যটকের দেখা মিলেছে। একের পর এক দুর্যোগ কাটিয়ে ঘুরে দাড়িয়েছে পর্যটন ব্যবসা।
টানা তিন দিনের ছুটিতে সাড়ে তিন লাখের বেশি পর্যটক সমাগম হয়েছে বলে জানা গেছে। শুক্র ও শনিবারসহ আসন্ন বড়দিন উপলক্ষে এত পর্যটক এসেছেন। হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টগুলোতে কোনও কক্ষ খালি নেই। এই অবস্থায় সৈকতের বালিয়াড়িতে রাতযাপন ছাড়া উপায় দেখছেন না অনেক পর্যটক। তবে সব ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ট্যুরিস্ট পুলিশ ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের কলাতলী, সুগন্ধা ও লাবণী পয়েন্ট ঘুরে দেখা গেছে, লাখো পর্যটক সৈকতে নেমেছেন। সাপ্তাহিক ছুটি ও বড়দিনের টানা ছুটি পেয়ে কক্সবাজার সৈকতে ভ্রমণে এসেছেন পর্যটকরা। কেউ বালিয়াড়িতে দৌড়ঝাঁপ, কেউ সমুদ্রস্নানে ব্যস্ত। যে যার মতো আনন্দে মেতেছেন। শুধু কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত নয়, পর্যটকরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন, পাথুরে সৈকত ইনানী, হিমছড়ি ও রামু বৌদ্ধমন্দির, মহেশখালী আদিনাথ মন্দিরেও।
হোটেল মালিক ও পর্যটন সংশ্লিষ্টরা জানান, বৃহস্পতিবার থেকে সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে টানা তিন দিন সরকারি ছুটি শুরু হয়েছে। তাই শুক্রবার সকাল থেকেই পর্যটকরা কক্সবাজারমুখী হয়েছেন। সব ধরনের হোটেল-মোটেল রুম বুকিং বন্ধ রয়েছে। হোটেলের কক্ষ পেতে লাগেজ নিয়ে এক হোটেল থেকে অন্য হোটেলে ছোটাছুটি করতেও দেখা যায় বেশ কয়েকজন পর্যটককে।
ঢাকা থেকে আগত পর্যটক জোবাইদা হোসেন বলেন, ‘পরীক্ষা শেষে নিরিবিলি প্রকৃতির সাথে সময় পার করতে কক্সবাজার চলে আসছি। রুম পেতে একটু কষ্ট হয়েছে। তবে সমুদ্রে এসে গোসল করতে পেরে সব কষ্ট ভুলে গেছি।’
হোটেলে কক্ষ না পেলে সৈকতের বালিয়াড়িতে রাত কাটানোর কথা জানান ঢাকার মিরপুর থেকে স্ব-পরিবারে আসা পর্যটক পারভেজ আলম। তিনি বলেন, ‘বছরের শেষে ছুটি কাটাতে কক্সবাজার এসেছি। আসার সময় রুম বুকিং দিইনি। এখানে এসে রুম না পেয়ে একটু কষ্ট হচ্ছে।’
কক্সবাজার সৈকতে দায়িত্বরত লাইফগার্ড কর্মী রুবেল বলেন, ‘সৈকতে বিপুল পর্যটক সমাগমের কারণে আমাদের চাপ বেড়েছে। লাইফগার্ড থেকে শুরু করে স্থানীয় প্রশাসন খুব সতর্ক। তাই সৈকতে যাতে অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সে ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখা হয়েছে।’
হোটেল দি প্রেসিডেন্ট-এর ম্যানেজার মোহাম্মদ ফয়েজ বলেন, ‘ডিসেম্বরে আমাদের পর্যটক মৌসুম শুরু হলেও প্রথম দিকে পর্যটকের তেমন সাড়া পাইনি। আজ থেকে যে টানা ছুটি ছিল সেটাতে আমাদের হোটেলে শতভাগ বুকিং হয়েছে। এতে আমরা ক্ষতি পূরণ করতে পারবো।’
ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজারের (টুয়াক) সভাপতি আনোয়ার কামাল বলেন, ‘কিছু দিন ধরে আমাদের ব্যবসা মন্দা যাচ্ছিল। এতে হতাশায় ভুগছিলেন পর্যটক ব্যবসায়ীরা। টানা তিন দিনের ছুটিতে পুরো কক্সবাজারে সব হোটেল বুকিং হয়েছে। অনেক পর্যটক রুমের জন্য এখনও কল দিচ্ছেন, কিন্তু আমরা তাদের রুম দিতে পারছি না।’
কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেলোয়ার বলেন, ‘টানা তিন দিনের ছুটিতে কয়েক লাখ পর্যটকের সমাগম হতে পারে। তাই আমাদের ট্যুরিস্ট পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে। পর্যটকদের নিরাপত্তায় আমরা সবসময় সজাগ আছি।’
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (পর্যটন সেল) মাসুম বিল্লাহ জানান, কক্সবাজারে বর্তমানে সাড়ে তিন লাখ পর্যটক অবস্থান করছেন। তাই এসব পর্যটকের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে। একইভাবে সৈকতে দায়িত্বে নিয়োজিত ট্যুরিস্ট পুলিশ তাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে।