খেলাধুলা ডেস্ক: লুসাইলে বিশ্বকাপ ফাইনালের ফল যা-ই হোক, ফ্রান্স আর আর্জেন্টিনাকে নিয়ে এক অন্য খেলা ইতামধ্যেই শুরু হয়েছে। ভবিষ্যদ্বাণীর খেলা! বড় বড় ফুটবল তারকারা বাজি রেখেছেন পছন্দের দলে। অঙ্ক মিলিয়ে ভবিষ্যদ্বাণীও করেছেন অনেকে। তারকারা ছাড়াও সেই তালিকায় রয়েছেন গণক, বিশেষজ্ঞ, গেমিং সংস্থা এমনকি একটি কচ্ছপও। মেসি আর এমবাপেদের হাই ভোল্টেজ ম্যাচের আগে কে কাকে এগিয়ে রাখলেন?
বাস্তিয়ান সোয়াইনস্টেইগার জার্মানির প্রাক্তন মিডফিল্ডার। জার্মানির ২০১৪ সালের বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্যও। ফাইনালের জন্য তিনটি দেশকে ‘ফেভারিট’ তালিকায় রেখেছিলেন তিনি। বায়ার্ন মিউনিখ তারকার তালিকায় তৃতীয় স্থানে ছিল ব্রাজিল। দ্বিতীয় নেদারল্যান্ডস। তবে চ্যাম্পিয়ন হিসাবে তিনি এগিয়ে রেখেছিলেন ফ্রান্সকেই। সোয়াইনস্টেইগার বলেছিলেন, ‘এই দলটায় সবচেয়ে ভাল মানের ফুটবলার রয়েছে। দারুণ টিম। ওরা সবাই ফিট থাকলে ওরাই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সবচেয়ে বড় দাবিদার। শুধু এমবাপেকে দেখুন। ও একাই দলটাকে টেনে দিতে পারে।’
ব্রাজিলের ১৯৯৪ এবং ২০০২ সালের বিশ্বকাপ জয়ী দলের ফুটবলার রোনালদো নাজারিও। ১৯৯৮ এর বিশ্বকাপে যে ব্রাজিল ফ্রান্সের সঙ্গে ফাইনালে হেরে যায়, সেই দলেও প্রধান ভরসা ছিলেন তিনি।
বিশ্বকাপের ফাইনালে ফ্রান্সকেই এগিয়ে রেখেছেন রোনালদো। এমনকি নিজেও ফ্রান্সকে সমর্থন করবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি, ‘আমি প্রথম থেকেই ভেবে রেখেছিলাম ফাইনালে খেলা হবে ব্রাজিল বনাম ফ্রান্স।’ কিন্তু ব্রাজিল ছিটকে গেলেও চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আর্জেন্টিনাকে সমর্থন করবেন না কিছুতেই।
আর্জেন্টিনার সাবেক খেলোয়ার জর্জ বুরুচাগা ম্যারাডোনার সতীর্থ। মেক্সিকোয় বিশ্বকাপজয়ী আর্জেন্টাইন দলের সদস্যও ছিলেন। ১৯৮৬ সালের ফাইনালে পশ্চিম জার্মানির বিরুদ্ধে তার আর ম্যারাডোনার গোলেই জিতেছিল আর্জেন্টিনা।
কাতার বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়নদের নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করার আগে জর্জ মনে করিয়ে দিয়েছেন, মারাডোনার মৃত্যুর পর প্রথম বিশ্বকাপ খেলছে আর্জেন্টিনা। চ্যাম্পিয়ন হিসাবে মেসিদেরই এগিয়ে রেখেছেন তিনি।
ব্রাজিলের সাবেক ফুটবল তারকা তথা কোচ জিকো বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন নিয়ে তার আগাম অনুমানের কথা জানিয়েছেন। এক সংবাদপত্রের কলামে জিকো লিখেছেন, তার হৃদয় মেসিময়। তবে অঙ্কের নিরিখে এগিয়ে রাখছেন এমবাপেদের।
ইংল্যান্ডের সাবেক ফুটবলার তথা ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের সাবেক খেলোয়াড় রয় কিনও নেমেছেন চ্যাম্পিয়নদের ওপর বাজি ধরার খেলায়। রয় এগিয়ে রেখেছেন আর্জেন্টিনাকে। তার যুক্তি, ‘মরক্কো এবং ইংল্যান্ডের সঙ্গে ফ্রান্সের খেলা দেখার পর আমার মনে হয়েছে, ফ্রান্স ওদের বিরুদ্ধে আহামরি কিছু খেলেনি। শুধু লক্ষ্যপূরণ করেছে। অন্য দিকে আর্জেন্টিনার টিম সাপোর্ট ছিল চোখে পড়ার মতো। তাই আমার মতে, চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ভালো সম্ভাবনা রয়েছে আর্জেন্টিনার।’
ফিলিপ লামের নেতৃত্বে ২০১৪ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালে আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে ট্রফি ঘরে তুলেছিল জার্মানি। লাম বলেছেন, তিনি চান আর্জেন্টিনাই এ বার ট্রফিটা জিতুক। কারণ সেবার তাদের কাছে হেরে বিশ্বকাপ হাতছাড়া হয়ে গিয়েছিল মেসিদের।
জার্মানির আরেক তারকা টমাস মুলার এখনও খেলছেন জার্মানিতে। তার দল বিশ্বকাপে গ্রুপ স্তর থেকে বিদায় নিলেও তিনি ফাইনাল নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। মুলারের মতে, এবার বিশ্বকাপ জিততে চলেছে আর্জেন্টিনা। মুলার বলেছেন, ২০১৪ সালে যে আর্জেন্টিনাকে হারিয়েছিলাম, সেখানে মেসিই ছিল সব। কিন্তু এই আর্জেন্টিনার সবাই জানপ্রাণ দিয়ে খেলছে। আর মেসির জন্য খেলছে।
ফুটবল তারকা নন, তবে ব্রাজিলের আধুনিক নস্ত্রাদামুস, আথোস সালোম ইতোমধ্যেই মিলিয়ে দিয়েছেন ফুটবল বিশ্বকাপের দুই ফাইনালিস্টের নাম। এ বার বিশ্বকাপজয়ীর নামও জানিয়েছেন তিনি। সালোম জানিয়েছেন, বিশ্বকাপ এবার উঠবে আর্জেন্টিনার হাতে। কিন্তু তার এই ভবিষ্যদ্বাণী কি মিলবে? কারও কারও মতে, রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যু থেকে শুরু করে অতিমারির ভবিষ্যদ্বাণীও মিলেছিল তার।
একটি গেমিং সংস্থা ২০১০ সাল থেকে সমস্ত ফুটবল বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়নদের নাম মিলিয়ে দিচ্ছে বলে দাবি। সেই সংস্থাটিও এ বারের বিশ্বকাপ ফাইনালে বাজি রেখেছে আর্জেন্টিনার ওপর।
পল দ্য অক্টোপাসের কথা মনে আছে? ২০১০ সালের বিশ্বকাপ ফুটবলের একের পর এক ম্যাচে ‘মিলিয়ে দিচ্ছিল’ বিজয়ী দলের নাম। এই বিশ্বকাপেও পলের উত্তরসূরিরা ভবিষ্যদ্বাণী করেছে। তারা অবশ্য অক্টোপাস নয়। এই ভবিষ্যৎ বক্তাদের মধ্যে রয়েছে কচ্ছপ, বিড়াল, কুকুর এমনকি ইগলও।
মজার বিষয় হল, এরা প্রত্যেকেই চ্যাম্পিয়ন হিসাবে বেছে নিয়েছে আর্জেন্টিনাকে।