চট্টবাণী ডেস্ক: তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিশৃঙ্খলা তৈরির জন্য বিএনপি গতকাল (বুধবার) থেকেই জমায়েত শুরুর চেষ্টা করে এবং পুলিশের ওপর আক্রমণ করে। এজন্যই পুলিশ ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়।
বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘গতকাল নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে কীভাবে পুলিশের ওপর হামলা ও তাণ্ডব চালানো হয়েছে, তা আপনারা দেখেছেন। সেখানে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে। গত পরশু রাতে বিআরটিসি বাসে আগুন দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে আরও গাড়িঘোড়ায় আগুন দেওয়া হয়েছে। আমরা বহু আগে থেকেই বলেছিলাম, বিএনপি সমাবেশ না, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চায়।’
বিএনপি ১০ ডিসেম্বর সমাবেশের ডাক দিলেও গতকাল ৭ ডিসেম্বর দুপুর থেকে নয়াপল্টনে জমায়েত হতে থাকে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এরপর নয়াপল্টনের একটি রাস্তা বন্ধ হয়ে গেলে পুলিশের পক্ষ থেকে তাদের অনুরোধ করা হয়, আপনারা দয়া করে রাস্তার একটি লেন যাতে চালু থাকে, সেই ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু সেই অনুরোধ উপেক্ষা করা হয়েছে। এরপর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা অর্থাৎ মতিঝিল রমনা এলাকার ডিসি হায়াত সেখানে নিজে যান। যানবাহন চলাচলে রাস্তার একটি লেন চালু রাখতে তিনি যখন অনুরোধ করছিলেন, তখন তাকে পেছন থেকে লাঠি দিয়ে আঘাত করা হয়। তার দেহরক্ষীকে দা দিয়ে কোপ দেওয়া হয়। সেখান থেকে শুরু। ডিসি হায়াত, তার দেহরক্ষীসহ মোট আট পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। সবমিলিয়ে ৩৫ পুলিশ আহত হয়েছেন।
এরপর পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয় দাবি করে মন্ত্রী বলেন, ‘তখন পুলিশ বাধ্য হয়ে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে।’
বিএনপি কার্যালয়ে পুলিশ ঢুকলে অবিস্ফোরিত ১৫টি ককটেল, দুই লাখ পানির বোতল, ১৬০ বস্তা চাল, রান্না করা খিচুরি, ডেকচি, হাঁড়ি-পাতিল পায়। এছাড়া নগদ দুই লাখ টাকাও সেখানে পাওয়া যায় বলেও জানান আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘তাদের বারবার বলা হয়েছে জনসমাবেশ করতে মাঠ ব্যবহার করতে। সারা দেশে মাঠ ব্যবহার করে তারা সমাবেশ করেছে, যাতে সরকার সার্বিক সহায়তা করেছে। পুলিশ তাদের নিরাপত্তা দিয়েছে। নিজেরা নিজেরা মারামারি করা ছাড়া সেখানে অন্য কিছু ঘটেনি। কিন্তু সেই অনুরোধ রাখেনি। তারা সবসময় বলে আসছে, ১০ লাখ মানুষের সমাবেশ ঘটাবে। বড় সমাবেশ করতেই তাদের সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু যখন সেখানে তারা যেতে অনীহা প্রকাশ করে, তখন মিরপুর পল্লবী মাঠ, কালসী মাঠ, ইজতেমা ও বাণিজ্য মেলার মাঠ ব্যবহার করতে বলা হয়। কিন্তু তারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অসৎ উদ্দেশে নয়াপল্টনে সমাবেশ করার ঘোষণা দেয়। গতকাল সেখানে তারা জমায়েত হতে শুরু করে এবং পুলিশের ওপর হামলা চালায়।’
তিনি বলেন, ‘তারা সত্যিকার অর্থে দেশে গণ্ডগোল পাকাতে চেয়েছে। নয়াপল্টনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একটি নাটক করেছেন। এতদিন তিনি হুঙ্কার দিচ্ছিলেন কিন্তু তিনি যখন নয়াপল্টন কার্যালয়ের সামনে বসেছিলেন, তখন আশপাশে কেউ ছিল না। তাদের নেতাকর্মী কেউ ছিল না সাংবাদিকরা ছাড়া। তারা সেখানে অনেকগুলো ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। এতে একজন সাধারণ নাগরিক মারা গেছেন। সেটির পোস্টমর্টেম রিপোর্ট আজ পাওয়া যাবে। পুলিশ ধারণা করেছে, তিনি ককটেল বিস্ফোরণে মারা গেছেন। পোস্টমর্টেম রিপোর্ট পাওয়া গেলেই এ বিষয়ে পরিষ্কার হওয়া যাবে। এভাবে দেশে বিশৃঙ্খলা ও আগুন সন্ত্রাস সৃষ্টি করতে চায় বিএনপি।’
মন্ত্রী বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে বিএনপিকে কখনো বাধা দেইনি। তারা দেশে সফলভাবেই শান্তিপূর্ণভাবে ৯টি সমাবেশ করেছে। সরকার তাতে সহায়তা করেছে। আওয়ামী লীগকেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল সংযত আচরণ করতে, যাতে বিএনপির উসকানির মুখেও ধৈর্য ধরে। কিন্তু তারা (বিএনপি) আসলে দেশে শান্তি চায় না। যে কারণে তারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে। কিন্তু সরকার কাউকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে দেবে না। বিএনপির যেসব নেতা বড় গলায় কথা বলেছেন, তাদের সবাই অগ্নিসন্ত্রাস ঘটাতে অর্থদাতা, হুকুমদাতা ও অংশগ্রহণকারী হিসেবে বিভিন্ন মামলার আসামি।’
‘রিজভী সাহেব গতকাল সেখানে মামলার পরোয়ানা নিয়ে নয়াপল্টনে গেছেন। আরও বেশ কয়েকজন গেছেন, তাদের বিরুদ্ধে পরোয়ানা ছিল। পুলিশের নাকের ডগায় যখন পরোয়ানাভুক্ত আসামি ঘুরে বেড়ায়, তখন তাদের গ্রেপ্তার করা পুলিশের কর্তব্য হয়ে দাঁড়ায়। কোনো নেতা যখন ককটেল নিয়ে কার্যালয়ের ভেতরে বসে থাকেন তখন তার বিরুদ্ধে সরকারকে ব্যবস্থা নিতে হয়। সরকার সেই ব্যবস্থাই গ্রহণ করেছে।’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘পরিকল্পিতভাবেই বিএনপি গতকালের ঘটনা ঘটিয়েছে। আগে থেকেই তারা উসকানি দিয়ে আসছে। গতকালের সব ঘটনার জন্য বিএনপি ও তাদের নেতারা দায়ী।’
এ ঘটনার পর বিবৃতি দিয়ে সরকারকে সংযত হওয়ার কথা বলেছে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘প্রথমত, মার্কিন সরকার কোনো বিবৃতি দেয়নি। সেখানে নিয়মিত ব্রিফিং হয় এবং বিএনপি ঘরানার একজন সাংবাদিক, যিনি আগে খালেদা জিয়ার গণমাধ্যম শাখায় কাজ করতেন, তিনি সেখানে প্রশ্ন করেছেন, সেই প্রশ্নে জবাব এসেছে।’
এটা কোনোভাবেই মার্কিন সরকারের কোনো বিবৃতি না। শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে কারো কোনো বাধা নেই। কিন্তু অশান্তি সৃষ্টি করতে কাউকে অনুমতি দেওয়া যায় না, বলেন ড. হাছান।
১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস সামনে রেখে পুলিশ কিংবা অন্য বাহিনীর বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কোনো বার্তা সরকারের কাছে আছে কি না— জনতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বিএনপির মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়গুলো বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে পাঠাব। আমাদের কাছে অন্য কোনো বার্তা নেই।’
বিএনপি মহাসচিবকে অফিসে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না— এমন অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গতকাল সেই অফিসে ককটেল, লাঠিসোটা পাওয়া গেছে। নানা ধরনের উপাদান পাওয়া গেছে, যাতে জনজীবনের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে। কাজেই আরও অতিরিক্ত তদন্ত করতে সেখানে পুলিশের নিরাপত্তা ও উপস্থিতি বাড়ানো হয়েছে।’