আন্তর্জাতিক ডেস্ক: চীনে ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট সরকারের বিরোধী যত লোকজন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে আছে, তাদের নজরদারির আওতায় রাখতে দেশে দেশে গোপন পুলিশ স্টেশন স্থাপন করছে বেইজিং । এই মুহূর্তে বিশ্বের ৫টি মহাদেশের অন্তত ২১টি দেশের ২৫ শহরে ৫৪টি পুলিশ স্টেশন রয়েছে চীনের।
এসব দেশের তালিকায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, নেদারল্যান্ডস, আয়ারল্যান্ডের মতো শিল্পোন্নত ও ধনী দেশ যেমন আছে, তেমনি রয়েছে নাইজেরিয়া, ইথিওপিয়ার মতো সংঘাতপূর্ণ দরিদ্র বিভিন্ন দেশও। তবে গোপন এসব স্টেশনের তথ্য চীনের সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা ব্যতীত খুব কম মানুষই জানে।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ফোরাম ফর রাইট অ্যান্ড সিকিউরিটি (আইএফএফআরএস) শনিবার তাদের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে এসব তথ্য।
স্পেনের মানবাধিকার সংস্থা স্প্যানিশ সিভিল রাইটস গ্রুপের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনের এসব গোপন পুলিশ স্টেশনের সদর দপ্তর দেশটির ফুজিয়ান প্রদেশের রাজধানী ফুঝৌ এবং ঝেজিয়াং প্রদেশের কিংটিয়ান শহরে। এই দু’টি শহর থেকেই পরিচালনা করা হয় এসব পুলিশ স্টেশন।
চীনা কমিউনিস্ট পার্টির (সিসিপি) নীতির সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করা প্রবাসী চীনাদের নজরদারির আওতায় রাখা ও হুমকি-ধমকি প্রদান ছাড়াও প্রবাসী চীনাদের দেশে ফিরে যেতে রাজি করাতে এসব পুলিশ স্টেশন কাজ করছে বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে আইএফএফআরএস।
প্রতিবেদন প্রস্তুতের সময় এ ব্যাপারে আরও বিস্তারিত জানতে যেসব দেশে চীনের গোপন পুলিশ স্টেশন থাকার তথ্য পাওয়া গেছে, সেসবের কয়েকটি দেশের চীনা দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল আইএফএফআরএস। কোনো দূতাবাসই ব্যাপারটি সরাসরি অস্বীকার করেনি, আবার স্পষ্টভাবে স্বীকারও করেনি। বিভিন্ন দূতাবাস বিভিন্ন উত্তর দিয়েছে।
‘যেমন কানাডার চীনা দূতাবাস আমাদের জানিয়েছে, সেখানে বসবাসরত চীনা নাগরিকদের কূটনৈতিক ও দাপ্তরিক বিভিন্ন সুবিধা দিতেই সেখানে পুলিশ স্টেশন স্থাপন করা হয়েছে,’ প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে আইএফএফআরসি।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে অনেক বছর ধরেই গোপন পুলিশ স্টেশন চালাচ্ছে চীন। যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনের পুলিশ স্টেশনটিও বেশ পুরনো।
তবে যেসব দেশে গোপন স্টেশন রয়েছে—সেসব দেশের অনেক গোপন তথ্য চীনে পাচারের সম্ভাবনা রয়েছে এবং তার ফলে সেসব দেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা হুমকির মুখে বলে আশঙ্কা করছে আইএফএফআরএস।
সংস্থাটির প্রতিবেদনে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘আমরা এই আশঙ্কা করছি; কারণ চায়না কমিউনিস্ট পার্টি (সিসিপি) যদিও প্রকাশ্যে বলে—কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে তারা হস্তক্ষেপ করে না, কিন্তু একই সঙ্গে বিভিন্ন দেশের ওপর নজরদারী চালানো তাদের পুরোনো অভ্যাস।’
সূত্র : এএনআই