চট্টবাণী ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকায় গত ১৪ বছরে বাংলাদেশে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। আমরা বাংলাদেশকে একটি মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে নিয়ে এসেছি। এ মর্যাদা ধরে রেখে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
বৃহস্পতিবার (১০ নভেম্বর) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে শীতার্তদের সহায়তার জন্য কম্বল, শীতবস্ত্র ও অর্থসহায়তা গ্রহণকালে তিনি এ কথা বলেন।
এসময় প্রধানমন্ত্রী একটি আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানে মালয়েশিয়ার নেতা মাহাথির মোহাম্মদের সঙ্গে আলোচনার কথা উল্লেখ করে বলেন ‘মাহাথির বলেছিলেন, দেশের উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য দীর্ঘমেয়াদী সরকারের প্রয়োজন। আমরা দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকায় বাংলাদেশের উন্নয়নে কাজ করতে পেরেছি। আমি মাহাথিরকে বলেছিলাম, দেখুন, জনগণ কতক্ষণ ভোট দেবে না দেবে সেটা তো বলতে পারি না। যদি ভোট পাই হয়তো থাকব। কারণ, আমাদের দেশে তো পরিবেশটা অন্য রকম। দীর্ঘদিন মিলিটারি ডিক্টেটর ছিল, কখনো ডাইরেক্টলি, কখনো ইনডাইরেক্টলি তারা ক্ষমতা দখল করে; আবার উর্দী খুলে রাজনীতিবিদ হয়। আর হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্র এটা আমাদের দেশে লেগেই আছে। ধারাবাহিক গণতান্ত্রিক ধারা থাকে না এই দেশে। যার জন্য একটা স্থিতিশীল পরিবেশও কখনো আসেনি। যেজন্য সার্বিক উন্নতিটা ঠিক হয়নি।’
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউসের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (বিএবি) চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার স্বাগত বক্তব্য রাখেন। ব্যাংকসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা এসময় উপস্থিত ছিলেন।
উপস্থিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ যা কিছু অর্জন করেছে তাতে আপনাদের (ব্যবসায়ী) এবং জনগণের অবদান রয়েছে’।
অনুষ্ঠানে সরকার প্রধান বলেন, বাংলাদেশের যে সম্মান আজকে আন্তর্জাতিকভাবে আছে, এটা যেন অব্যাহত থাকে। আমরা বাংলাদেশকে একটা সম্মানজনক অবস্থানে নিয়ে এসেছি, এটা ধরেই যেন এগিয়ে যেতে পারি।
করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলায় আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপের কথা প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন।
শেখ হাসিনা বলেন, যাই হোক, যতটুকু অর্জন আমি মনে করি এটা আপনাদের সবারই অবদান; বাংলাদেশের জনগণের অবদান। আমি তাদের ধন্যবাদ জানাই, কৃতজ্ঞতা জানাই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তবে, অনেক দিন তো হয়ে গেল। মানুষকে তো এক সময় বিদায় নিতেই হবে, এটা তো আল্লাহই বলে দিয়েছেন। সেটাও আল্লাহর ইচ্ছা যেদিন যেতে হয় চলে যাব। এখান থেকে, এই চেয়ার থেকেও চলে যাব; আবার জীবন থেকেও চলে যাব। যেতেই হবে, এটা হলো বাস্তবতা, যেদিন যাওয়ার সময় হবে। আর সময় না হলে ততদিন তো কাজ করতেই হবে, আল্লাহ যতক্ষণ সুযোগ দিয়েছেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যদের সঙ্গে নির্মমভাবে হত্যার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতার হত্যাকাণ্ড শুধু হত্যাকাণ্ড নয়। আপনারা একবার চিন্তা করেন তো, ১০ বছরের একটা শিশুর কী অপরাধ ছিল? তাকেও শেষ করেছে। কেন? ওই রক্তের কেউ যেন এই দেশে আর ক্ষমতায় আসতে না পারে। এটাই তো ছিল খুনিদের আকাঙ্ক্ষা।’
জাতির পিতাকে হত্যার সময় দেশের বাইরে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান তার দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। পরে ছয় বছর নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে দলের সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে দেশে ফেরেন শেখ হাসিনা।
অনুষ্ঠানে নির্মম সেই হত্যাকাণ্ডের সময়ের স্মৃতিচারণ করে সরকারপ্রধান জানান, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার আগে তার বিদেশ সফরে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল এবং সফর শেষে তার মেয়েদের দেশে ফিরিয়ে আনার কথাও ছিল।
অনুষ্ঠানে দেশের উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
খেলাধুলায় বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে অনুষ্ঠানে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পদস্থ কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্য করে শেখ হাসিনা বলেন, এই খেলাধুলার ক্ষেত্রে আমার মনে হয় আমাদের সবার বিশেষ করে আপনাদের একটু সহযোগিতা বেশি করা উচিত। যদি সবাই উৎসাহিত না করি তাহলে এই ছেলে-মেয়েগুলো, তাদের ভবিষ্যৎ কী? তারা যত বেশি খেলাধুলা, সংস্কৃতি চর্চার মধ্যে থাকবে তত বেশি সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক থেকে দূরে থাকতে পারবে এবং দেশের উন্নতি হবে। এটাই হলো বাস্তবতা।
শিল্প প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যাদের রয়েছে তাদের প্রতিষ্ঠানে খেলোয়াড়দের চাকরির ব্যবস্থা করে দেওয়ার অনুরোধ করেন শেখ হাসিনা।
বাসস