• দক্ষিণ চট্টগ্রাম

    ৩১ বছরেও সংস্কার হয়নি ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ পোমরা উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি

      প্রতিনিধি ৯ নভেম্বর ২০২২ , ১০:২০:১৬ প্রিন্ট সংস্করণ

    রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি: ৩১ বছর ধরে নিজেই স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে উপ-স্বস্থ্য কেন্দ্র-খোলা আকাশের নিচে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন চিকিৎসক খালেদা বেগম।

    ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল টর্নেডো ঘূর্ণিঝড়ের তান্ডবে ভেঙে পড়ে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার পোমরা উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র। এরপরেই ৩১ বছর পার হতে চলরেও হয়নি নতুন কোনো ভবন। যেখানে চিকিৎসা নেন দুই ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ। কিন্তু ত্রিশ বছর ধরেই নতুন কোনো ভবন নির্মাণ না হওয়ায় খোলা আকাশের নিচে চিকিৎসা দিচ্ছেন খালেদা বেগম নামের এক চিকিৎসক। যেখানে প্রায় কয়েক লক্ষ লোকের বসবাস। এদের মধ্যে যারা অতি দরিদ্র, যারা বেসরকারী হাসপাতালগুলোতে সেবা নিতে পারে না বা সামর্থ্য নেই তারাই এই কেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসা নিতে আসেন।



    কিন্তু ২ যুগের বেশি সময় শেষেও ভবন না হওয়ায় খোলা আকাশে চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসা ও সেবাগ্রহীতারা। বৃষ্টি বা তোফান হলে ছাতা নিয়েই চালাতে হয় কার্যক্রম। ফলে কাঙ্খিত স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন দুটি ইউনিয়নের সামর্থ্যহীন গরীব মানুষগুলো।

    মঙ্গলবার (৮ নভেম্বর) সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, ঘূর্ণিঝড়ের আগে যেখানে ভবন ছিলো সেটা এখন ঝোপঝাড়ে পরিনত হয়ে গেছে। নেই উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কোনো নকশাও, খালি জমির মতো হয়ে অকেজো হয়েই পড়ে আছে। যেখানে প্রতিদিন চিকিৎসা নিতো পোমরা-বেতাগী দুই ইউনিয়নের শতাধিক মানুষ। পাশে এখনো দাঁড়িয়ে আছে চিকিৎসকের জন্য বরাদ্দকৃত বাসভবন, দেখে মনে হচ্ছিল বহু বছর এই ভবনের ভিতরে কোনো কার্যক্রম বা কারও বসবাস নেই। দেওয়ালগুলো ভেঙে পড়ার মতো, ধাক্কা দিলেই পড়ে যাবে। দেয়ালে কাদা লেগে আছে, নোংরা পরিবেশ, মাকড়সার জালে ভর্তি পুরো ঘর।



    হঠাৎই চোখে পড়লো ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের পাশে কিছুদূর পর জরাজীর্ণ পুরাতন আদালত ভবন  মাঠের উপর বেশ কিছু নারী-পুরুষ লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সামনে যেতেই দেখতে পেলাম খোলা আকাশের নিচে বসে একজন মহিলা চিকিৎসক সেবা দিচ্ছেন। কথা হলো উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার খালেদা বেগমের সাথে। তিনি বলেন, ২০০৮ সাল থেকে তিনি চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন সেবাগ্রহীতাদের। বারবার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর লিখিতভাবে জানানো হলেও এখনো ভবনের কোনো আশ্বাস দেখতে পাননি তিনি।



    তাই বাধ্য হয়ে আমাদের রাস্তায় এসে সেবা দিতে হয়। বৃষ্টির দিন হলে তো কথাই নেই। রাস্তায়ও পানি জমা হয়ে যায়। তাই দরিদ্র মানুষদের কথা চিন্তা করে কখনো কখনো কর্ণফুলীর পাড় ঘেঁষে থাকা ঝুঁকিপূর্ণ জরাজীর্ণ পুরাতন আদালত ভবনে বসেই চিকিৎসা দিয়েছিলাম। তবে ভবনটি যেকোনো সময় ভেঙে পড়ার আশংকায় দেখা দিলে খোলা আকাশে বের হয়ে রোদ-বৃষ্টির মধ্যেই অসহায় গরীব রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করে যাচ্ছি।



    স্থানীয় মোহাম্মদ নরুল আলম বলেন– প্রশাসনকে অনেক বছর ধরে বলা হচ্ছে এই কেন্দ্রের এহেন অবস্থার কথা। কিন্তু প্রশাসন কোনো কর্ণপাতই করছে না। সেবা নিতে আসা কয়েকজনের সাথে কথা বলতে গেলে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সবাইকে বলেই যাচ্ছি এই করুন অবস্থার কথা, কিন্তু স্বাস্থ্যকেন্দ্রের তো কোনো উন্নতি হয় না। ৩০ বছর ধরে এমন করুণ অবস্থা। আমাদের প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার সাধ্য না থাকায় এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রেই শেষ ভরসা। কিন্তু যেভাবে সেবা নিচ্ছি এগুলোকে সেবা বলেনা। চিকিৎসকও কষ্ট করে রোদের মধ্যে বসে চিকিৎসা দিচ্ছেন।



    এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.দেব প্রসাদ চক্রবর্তী বলেন,১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে তান্ডবে ভেঙে পড়ে উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি। এরপরে কিছুদিন পুরাতন আদালত ভবনে বসে চিকিৎসা কার্যক্রম চললেও সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়। একারণে চিকিৎসক খোলা আকাশে বসেই চিকিৎসা দিচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর জানিয়েছি। এখনো কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহীত হয়নি, তবে আমরাও চাই এখানে পুনরায় নতুন ভবন নির্মাণ হোক। এতে চিকিৎসা সেবাগ্রহীতাদের সুবিধা হবে।



    বিষয়টি সম্পর্কে অবগত আছেন কিনা জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী জানান, রাঙ্গুনিয়ার পোমরা উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি পূর্ণ নির্মাণের জন্য এসিডি বরাবর চিঠি দিয়েছি। এছাড়াও অন্যান্য যেসব উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ হয়েছে সেগুলোর জন্যও জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে বড় একটা পরিকল্পনাও করা হয়েছে। যেসব ভবন পূর্ণ নির্মাণ দরকার সেগুলো শীগ্রই অনুমোদন আসবে।



    আরও খবর 28

    Sponsered content